অভাবের তাড়নায় স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানালেন রবীন্দ্র ভারতীর এমএ, পিএইচডি ছাত্রী ও তার পরিবার

Spread the love

অয়ন বাংলা,নিউজ ডেস্ক:- অভাবের তাড়নায় স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানালেন রবীন্দ্র ভারতীর এমএ, পিএইচডি ছাত্রী ও তার পরিবার। সমাজ তুমি কোথায় দাও একটু ভাত আর নুন ।আমি হিন্দু নয় ,আমি মুসলিম নয় ,আমি ভুখা মানুষ।

অন্তত কুড়ি দিন ভাতের মুখে দেখেননি কেউ। অন্যের সাহায্যে কোনও রকমে টিকে ছিল প্রাণ। কিন্তু মুখ ফিরিয়েছেন সাহায্যকারীরা। বেঁচে থাকার সব রাস্তা বন্ধ দেখে স্বেচ্ছামৃত্যু চাইছে তিন সদস্যের পরিবার। তার জন্য আবেদনও গিয়েছে জেলাশাসকের কাছে।

বারাসত নবপল্লির বাণীনিকেতন স্কুল রোডে প্রতিমা অ্যাপার্টমেন্ট। তিনতলায় এক কামরার ফ্ল্যাট। এক চিলতে সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেল, খাটের উপর বসে এক গাল দাড়ির অশীতিপর কমল বন্দ্যোপাধ্যায়। বুকে তাঁর পেসমেকার। পাশেই বসা বছর ৭৮-এর স্ত্রী গীতা। কিডনির সমস্যায় ফুলে আছে বৃদ্ধার দুই পা। ঘরে রয়েছেন বিবাহবিচ্ছিন্না মেয়ে গার্গী। অসুস্থ তিনিও। তিন জনের পরিবার সম্পূর্ণ রোজগারহীন। ঘরে একদানা খাবার অবশিষ্ট নেই। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা বা ওষুধ!

অনাহার ও দারিদ্র্যের গ্লানিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। অথচ সচ্ছল ছিলেন কমলরা। বৃদ্ধ চাকরি করতেন দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টে। শিক্ষকতা করতেন স্ত্রী গীতা। দুই মেয়ের বড় গার্গী, ছোট কস্তুরি। কমল চাকরি থেকে অবসর নেন ’৯২ সালে। চাকরি শেষে এককালীন যা টাকা পেয়েছিলেন, তা দিয়ে দুই মেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। বড় মেয়ে গার্গী নিজে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ও পিএইচডি। বিবাহ বিচ্ছেদের পর বাবা-মায়ের কাছেই আছেন। চাকরির চেষ্টার কসুর করেননি। কিন্তু বিফল হয়েছেন। ছোট মেয়ে কস্তুরি বারাসতের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি কিছু সহায়তা করতেন বাবা-মাকে। তবে সেই সাহায্যও এখন আসছে না বলে দাবি অসহায় দম্পতির। গার্গী বলেন, ‘আমি যে কোনও একটা কাজ চেয়ে কত লোকের কাছে গিয়েছি। প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কাজ হয়নি। খাবারের ব্যবস্থাই করতে পারছি না, ওষুধ কিনব কী ভাবে?’

বিদ্যুতের বিল দিতে না পারায় আট মাস আলো-পাখা বন্ধ ছিল। গার্গীর কথায়, ‘এক বার তো বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটে দাঁড়িয়ে ভেবেছিলাম, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিই। কিন্তু পারিনি। বেঁচে থাকার আর কোনও উপায় না পেয়েই জেলাশাসকের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছি ৩০ জুলাই।’ চোখের জল সামলে বৃদ্ধ কমল বলেন, ‘আমাদের চাকরিতে পেনশন ছিল না। চাকরির শেষে যা টাকাপয়সা পেয়েছিলাম, তা মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো আর বিয়ে দিতেই খরচ হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু টাকা দিয়ে থাকার জন্য এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলাম। এখন একটা পয়সা নেই হাতে। বাধ্য হয়ে ভিক্ষে করতে হচ্ছে। প্রতিবেশী শ্যামল সরকারের সাহায্যের জন্য কোনও ভাবে বেঁচে আছি।’

শ্যামল বলেন, ‘এক দিন দেখি, এক মহিলা সকালে বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত পাতছেন। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, টানা কুড়ি দিন ভাত খাননি তাঁরা। শুনে খুব কষ্ট হল। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু চাল-ডালের ব্যাবস্থা করি। কিন্তু একার পক্ষে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের সকলেরই উচিত এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।’ বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বিষয়টি শুনে অসহায় পরিবারটিকে পুরসভায় গিয়ে দেখা করতে বলেছেন। সুনীল বলেন, ‘বার্ধক্য ভাতার পাশাপাশি তাঁদের জন্য খাবারের ব্যাবস্থাও করে দেওয়া হবে।’

‘গত দুই সপ্তাহ ধরে অন্যের দেওয়া মুড়ি-বিস্কুট খেয়ে দিন কাটছে তিন জনের,’ হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন বৃদ্ধ। স্বাধীনতা দিবস, রাখিবন্ধন উৎসবের আমেজ ম্লান করে দিচ্ছিল তাঁর কান্নাভেজা আর্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.