একটা কারণই যথেষ্ট এনআরসি-এনপিআর-সিএএ বিরোধিতার জন্য

Spread the love

বাসব রায়: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পোশাক দেখেই বোঝা যায় সিএএ-বিরোধী আন্দোলন কারা করছে।’
অসমের অর্থ তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিভি-সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আসুন সমুজ্জ্বল, একসঙ্গে কাজ করি। আপনি সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষকে মেনে নিন, আমরা ৭৫ লক্ষ মানুষকে তাড়াব।’
এটা আর বলে দিতে হয় না দু’জনের বক্তব্যের লক্ষ্যই এক এবং অভিন্ন-– মুসলমান। এবং মাত্র গতকাল (একটি প্রথমসারির বাংলা দৈনিকের) খবর হল, সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকে বিজেপি-র শীর্ষস্তর তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাদের মতে, এই আন্দোলন মূলত করছেন মুসলমান, বামপন্থী এবং উদার বাঙালিরা। দেশের মূলস্রোতের মানুষ সিএএ সমর্থন করে।
অথচ প্রায় গোটা দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা উপলব্ধি করে এনআরসি প্রসঙ্গে সভাপতির টুইট মুছে ফেলতে হয়েছে বিজেপি-কে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অন্তত দু’বার পরস্পর-বিরোধী ব্যাখ্যা দিয়েছে নাগরিকত্ব সম্পর্কে। আর বিজেপি সমর্থকরা সিএএ সমর্থনে প্রচার করছেন, মিছিল করছেন, তর্কও করছেন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন রিলিজিয়াস, সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু এটুকু বললে কোথাও গিয়ে আইনের কনটেন্ট মান্য হয়ে যায়। কনটেন্টের যাথার্থ্য নিয়ে না টিভি, না সংবাদপত্র, না সোশাল মিডিয়া, কোথাও খুব বেশি তর্ক-প্রশ্ন-বিতর্ক-আলোচনা হচ্ছে না। বলার কথা হল এই, আফগানিস্তান কোনও কালে ভারতের অংশ ছিল না। বরং ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ভারতের অঙ্গ ছিল বার্মা, বর্তমান মায়ানমার। তাই আইনে আফগানিস্তান থাকলে মায়ানমারেরও থাকা উচিত। আর মায়ানমারের বৌদ্ধদের অত্যাচারে শুধু মুসলমান নয়, কিছু হিন্দুও বিতাড়িত হয়েছে।
বছরখানেক আগে বরাক উপত্যকায় প্রায় ত্রিশজন রোহিঙ্গিয়াকে তুলে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের হাতে। তাঁদের অভিজ্ঞতা এরকম…
‘আমাদের ভোটাধিকার নেই। আমাদের সন্তান স্কুলে ভর্তি হতে পারে না। কোনও চাকরি আমরা পেতে পারি না। জমিবাড়ি কেনার কোনও প্রশ্নই নেই। আমরা শুধু কাজ করি ভাত খাই। সেটাও সহ্য হয়নি ওদের। মেরেকেটে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখন এসেছি ভারতে। এদেশে যেখানে খুশি আমাদের থাকতে দেওয়া হোক, কোনও অধিকার চাইব না, কোনও অসামাজিক কাজে জড়াব না; আমরা শুধু কাজ করব ভাত খাব। ব্যস আর কিছু চাই না আমাদের, শুধু শান্তিতে থাকতে চাই।’
পরিস্থিতি কতটা করুণ হলে এরকম বলতে পারে মানুষ! হিটলারের সেই তত্ত্ব মনে পড়ে-– এত শোষণ করো যে বেঁচে থাকাটাকেই বিকাশ-উন্নয়ন ভাববে মানুষ।

আর একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় সিএএ তৈরিই করা হয়েছে অন্য দেশ থেকে আগত মানুষকে দুটো ভাগ করতে। মুসলমান এবং অমুসলমান। মডেল খুব পরিষ্কার-– আগে এনপিআর তারপর এনআরসি। সেই তালিকায় বাদ পড়া মুসলমানদের পাঠাও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে তারপর ওই রোহিঙ্গিয়াদের মতো বানিয়ে দাও।
একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কেন অন্য দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন-পার্সি-খ্রিস্টানকে নাগরিকত্ব দেবে তার কোনও উত্তর নেই। বেছে বেছে তিনটে মুসলমান প্রধান দেশকে কেন আইনের অংশ করা হল তার কোনও উত্তর নেই। এদেশে ৫০-৭০ বছর থাকার পর কেন সবাইকে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে তার কোনও উত্তর নেই। অসমের ক্ষেত্রে এনআরসি রূপায়ণের একটা প্রেক্ষিত ছিল। গোটা দেশের জন্য কী প্রেক্ষিত?
অমিত শাহ উত্তর দিয়েছেন, ‘আমাদের ইশতেহারে ছিল, সেটাই প্রেক্ষিত।’ ব্যস আর কিছুর দরকার নেই।
এত খোলাখুলি, এত স্পষ্ট, এত পরিষ্কার করে আর কোনওভাবে মনে হয় না বলা যায় যে, কেন সিএএ, কেন এনআরসি-র আয়োজন।
ভারতের অনন্যতা তার বহুত্বে। এই একটা দল এসে সব চুরমার করে দিচ্ছে। শুধু এই একটা কারণই যথেষ্ট এনআরসি-এনপিআর-সিএএ বিরোধিতার জন্য।

সৌজন্য:-মহানগর ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.