“ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে বেআইনি নির্মাণ বহরমপুরে”
মফিজুল ইসলাম :- প্রায় ২৯০ বিঘা এলাকাজুড়ে থাকা একটি কবরস্থানকে দখল করে বেআইনি নির্মাণের মাধ্যমে চলছে রমরমিয়ে ব্যবসা। এই সম্পত্তি ওয়াকফ লিল্লাহ হওয়া সত্বেও, তার কোনও সুবিধা পাচ্ছে না মুসলিম সম্প্রদায়। তার কোনও ব্যবস্থাও করতে পারছে না ওয়াকফ বাের্ড। সেই সুযােগে নতুন করে ওই মার্কেট কমপ্লেক্স। ১২৮ খানা দোকান সম্পত্তির উপর বেআইনি নির্মাণ শুরু হলে রুখে দাঁড়ায় এলাকার মানুষ। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের কারবালা ওয়াকফ এস্টেটের কথা বলা হচ্ছে। যার ইসি নম্বর হল ১২৩৭৭।
মুর্শিদাবাদ জেলায় একাধিক ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। নবাব আমলে এই জেলার জমিদাররা সম্পত্তি ওয়াকফ লিল্লাহ করে যান। সেই সব সম্পত্তি এখন বেদখল। কোথাও আবার মােতাওয়াল্লিরা বিক্রি করে দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে দফায় দফায় বেলডাঙ্গার মিল্কি মসজিদ ওয়াকফ (ইসি- 1207) সম্পত্তির খবর প্রকাশ হয়েছে। যে সম্পত্তি প্রাক্তন মােতাওয়াল্লিরা বিক্রি করে দিয়েছেন। এবার, সেই জেলার খােদ বহরমপুরে ওয়াকফ সম্পতি দখল করার অভিযােগ উঠেছে।
জেলার তৎকালিন বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদ এই সম্পত্তিকে সরকারি সম্পত্তি হিসাবে রেকর্ড করিয়ে নেয়। এই সম্পত্তি এক নম্বর খতিয়ান হিসাবে দেখানাে হয়। যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে করা হয়েছে বলে অভিযােগ। এরপর কবরস্থানের মধ্যে তৈরি হয় বিরাট ঘর তৈরি হয়েছে। যা লিজে দিয়ে ভাড়া তুলছে জেলা পরিষদ। কিন্তু তার কোনও ভাগ পাচ্ছে না ওয়াকফ বাের্ড। অর্থাৎ সম্পূর্নটাই জবর দখল হয়েছে। এই অবস্থায় এলাকার বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। এলাকার মানুষেরা হস্তক্ষেপ করলেও, সেই সময় ওয়াকফ বাের্ড দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। এমন সময় ২০০৬ সালে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই সম্পত্তির নতুন করে দখল করা বন্ধ হয়। বহরমপুর মহকুমা শাসকদের দফতরে প্রশাসন ও এলাকার মানুষের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়, কবরস্থানের বাকি সম্পত্তিতে নতুন করে নির্মাণ করা হবে না। অবশিষ্ট অংশ প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। সেই সমস্ত ৭০ বিঘা এলাকা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়। সেখানেই নিয়মিত চলে মৃত ব্যক্তিদের দাফনের কাজ। কিন্তু, সেই সময় হনুমানের পিঠে ভাগ করার মতাে, সরকার প্রায় ২২০ বিঘা সম্পত্তি দখল করে নেয়। যা নিয়ে নিশ্চুপ ওয়াকফ বাের্ড। ২০১১ সালে পালা বদল হলেও, সেই সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য কার্যকারী কোন ভূমিকা নেয়নি ওয়াকফ বাের্ডের বর্তমান কর্তারাও। কিন্তু অবশিষ্ট
অংশ দেখভাল করার জন্য যে কমিটি গঠন হয়েছিল , তার কার্য কর্তাদের বিরুধেই সম্পতি জবর দখল করে বেআইনি নির্মান করার অভিযোগ উঠেছে ।
মুর্শিদাবাদ সম্পত্তি দেখভাল করার জন্য ওয়াকফ বাের্ডের তরফে পাঁচ সদস্যের একটি সুপারভাইজার কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য হােমিওপ্যাথি চিকিৎসক হাসনত আলি বলেন, কারবালা ওয়াকফ এস্টেটের অধীনে যে বাকি সম্পতি রয়েছে, তারও দখল করার চেষ্টা করছে মােতাওয়াল্লি কমিটি। কবরস্থানের প্রাচীর ভেঙে বেআইনি নির্মাণ করা হচ্ছে। এলাকার মানুষ এতে আপত্তি জানায়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এর বিরােধীতা করে। তখন ওয়াকফ বাের্ড এই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার জন্য জেলা পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। সেই মতো, ওই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। হাসনত সাহেব আরও বলেন, করবস্থানের ওপর এই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার জন্য ওয়াকফ বাের্ডে মাস পিটিশন দেওয়া হবে।জেলার অন্যান্য ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারের পাশাপাশি, কারবালার এই সম্পত্তি উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে এসডিপিআই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তাহিদুল ইসলাম বলেন, পুর্বের সরকার সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে এই সম্পত্তি দখল করেছে। বর্তমান সরকার দখল হওয়া সেই সম্পত্তি নিয়ে ব্যবসা করছে। আর যাদের এই সম্পত্তি, সেই মুসলিম সম্প্রদায় পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে। এ জিনিস আমরা চলতে দেব না। এর বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। আমরা আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করেছি।
Sourse :দিন দর্পণ (03.11.2020)