বালিকাদের বিদ্যালয় শিক্ষার সরকারি নীতির উপর রাইট টু এডুকেশন ফোরামের সুপারিশ নিয়ে অনলাইন আলোচনা

Spread the love

 

 

বালিকাদের বিদ্যালয় শিক্ষার সরকারি নীতির উপর রাইট টু এডুকেশন ফোরামের সুপারিশ নিয়ে অনলাইন আলোচনায় অংশগ্রহণ করলেন রাজ্য শিশু-অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন শ্রীমতী অনন্যা চক্রবর্তী, নারী আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার চৌধুরী*

বিপ্লব দাস ও শ্রী মনোজ সরকার  :- রাইট টু এডুকেশন ফোরামের পশ্চিমবঙ্গ শাখার তরফ থেকে গত ৯ নভেম্বর ২০২১ বালিকাদের বিদ্যালয় শিক্ষার উপর জাতীয় নীতির একটি সংক্ষিপ্তসার এবং কিছু সুপারিশ প্রকাশ করা হয় এবং এই উপলক্ষে বালিকাদের বিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে সরকারী নীতির উপর একটি অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয়। এই আলোচনায় প্রায় ২০০ জন সমাজ কর্মী, নাগরিক, শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন। বিগত ৩ বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিক্ষা আন্দোলনের কর্মী এবং ছাত্রীদের সঙ্গে নিরন্তর আলোচনার মাধ্যমে বালিকাদের শিক্ষা নিয়ে এই নীতির সংক্ষিপ্তসার এবং সুপারিশ গুলি তৈরি করা হয়েছে।

রাইট টু এডুকেশন ফোরামের পক্ষ থেকে শ্রীমতী শ্রীজিতা মজুমদার এই নীতির সংক্ষিপ্তসার এবং সুপারিশগুলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন ভারতে ১৬ লক্ষ বালিকা বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে । জাতীয় শিশু-অধিকার সুরক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন (২০১৮) বলছে ১৫-১৮ বছর বয়সী বালিকাদের মধ্যে ৩৯.৪ শতাংশ বালিকা বিদ্যালয়ের বাইরে আছে এবং ৫৭ শতাংশ ছাত্রী একাদশ শ্রেণীতে পৌঁছানোর আগেই বিদ্যালয় ছেড়ে দেয়। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার হার ছেলেদের তুলনায় কম, দলিত, আদিবাসী এবং মুসলিম মেয়েদের মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার অংশগ্রহণের হার আরও অনেক কম। সমাজে তীব্র লিঙ্গ-বৈষম্য ছাড়াও বিদ্যালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা, মেয়েদের জন্য বিদ্যালয়ে শৌচালয় ইত্যাদির অভাব, ইত্যাদি মেয়েদের বিদ্যালয় থেকে দূরে থাকার অন্যতম কারণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে। হিসাব করে দেখা গেছে অতিমারীর ফলে ভারতের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি থেকে এক কোটি ছাত্রী বিদ্যালয়-ছুট হতে পারে এবং তারা বাল্য বিবাহ, বালিকা অবস্থায় সন্তানধারণ, দারিদ্র, পাচার এবং হিংসা র শিকা র হতে পারে । রাইট টু এডুকেশন ফোরামের সুপারিশ হল শিক্ষার অধিকার আইনের পরিধি শিশুর জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত প্রসারিত করা, বিদ্যালয়ে এবং বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বালিকাদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বিদ্যালয়ে বালিকাদের জন্য শৌচাগার এবং ঋতু-কালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, বিদ্যালয়ে যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ, বালিকাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত শিক্ষাদান, ব্রিজ কোর্স ইত্যাদির ব্যবস্থা।

এই আলোচনার শুরুতে ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইট টু এডুকেশন ফোরাম – এর পক্ষ থেকে ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক শ্রী স্বপন পান্ডা স্বাগত ভাষণ দেন এবং এই আলোচনা সভার গুরুত্ব নিয়ে বলেন |

আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজ্য শিশু-অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ার পার্সন শ্রীমতী অনন্যা চক্রবর্তী বলেন যে তিনি মেয়ের শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন এবং তিনি মনে করেন মহামারী এবং ডিজিটাল বিভাজন বিগত দি বছরে মেয়েদের বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। তদুপরি কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা বাজেট হ্রাস করা, পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের বিদ্যালয়ে আছেন কিনা এবং নথিভুক্ত মেয়েদের মধ্যে কতজন বিদ্যালয়ে ফিরে আসছে তা স্কুল পুনরায় খোলার পরে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার প্রক্রিয়া বন্ধ ও ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য স্কুল শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন।

গ্লোবাল মিডিয়া এডুকেশন কাউন্সিল-এর সচিব প্রফেসর উজ্জ্বল কুমার চৌধুরী, ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে এই সময়কালকে ‘শিক্ষার জরুরী অবস্থা’ হিসাবে উল্লেখ করেন, কেননা এই সময় ভারতের ৫২% শিক্ষার্থী ডিজিটাল শিক্ষার সাথে নিজেদের সংযোগ করতে পারেনি| তিনি বাজেট বরাদ্দ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বলেছেন বহু প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও এখন শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপি-র ৬ শতাংশ ছুঁতে পারেনি বরং বিগত কয়েক বছর দরে শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট বরাদ্দ প্রতি বছর কমেছে। তিনি বলেছেন কেয়ার ইন্ডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, স্কুলগুলি আবার চালু হলে দশ মিলিয়ন মেয়ের শিক্ষা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন ২০২০ সালে প্রকাশিত নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি লিঙ্গ নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং শিক্ষার অধিকার আইনের উল্লেখ পর্যন্ত করেনি। তিনি মনে করেন এই শিক্ষা নীতি অনেকাংশেই বেসরকারিকরণের সহায়ক হয়ে উঠবে। তিনি সর্বান্ত করণে রাইট এডুকেশন ফোরামের বালিকাদের শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ গুলি সমর্থন করেছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ, তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সময়ে কিশোরী মেয়েদের মানসিক চাপের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার জন্য ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজ, সরকার ও রাজনৈতিক দলের কাছে বর্ধিত বাজেট বরাদ্দ এবং বর্ধিত পদক্ষেপের উপর জোর দিয়েছেন |
এই আলোচনায় তিনজন ছাত্রী রিয়া নস্কর, সালমা এবং কাজল শাহ তাদের স্কুল শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে | স্কুল বন্ধ থাকার ফলে তাদের বা তাদের বন্ধুদের কি ধরণের অসুবিধা হয়েছে সেই বিষয়গুলিও তাদের বক্তব্যতে উঠে এসেছে | তারা তিনজনেই শিক্ষার অধিকার আইনের পরিধি বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করে এবং আবেদন জানায় যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি মেয়ের শিক্ষা যেন নিশ্চিত করা হয়।

আলোচনার শেষে ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইট টু এডুকেশন ফোরাম – এর পক্ষ থেকে ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক শ্রী প্রবীর বসু আলোচনার সামগ্রিক সারমর্ম উল্লেখ করেন এবং সকল অংশগ্রহণকারীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন | আগামী দিনে খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে কাজ করার ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হবে বলে তিনি জানান |
———————————————————————————————————————-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.