দেশের এই সংকটকালে দেশ রক্ষার্থে বিজেপি, আর,এস,এস, কে এগিয়ে আসা উচিত।
বিবেক ভাবনায় পাশারুল আলম :-
হ্যাঁ, ভুল একটা হয়েছে। দেশের মানুষ বুঝে হোক, না বুঝে হোক কিংবা আবেগের বশে হোক। মাননীয় নরেন্দ্র মোদি মহাশয়কে দেশের প্রধানমন্ত্রী করেছে। আমরা জানি বেশ কয়েকটি কারনে দেশের মানুষ উনাকে ভোট দিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদীজির জয়ের জন্য যে সমস্ত কারন সব চেয়ে বেশি প্রবল ছিল, সেগুলি ক্রমানুসারে সাজালে দেখা যাবে এক, ইউ,পি,এ, দুই সরকারের আমলে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা সামনে এসেছিল। যা মানুষের মনে দাগ কেটেছিল। সেই সমস্ত মামলা আজ আর নেই। কোর্টও তাদের খালাস করে দিয়েছে। অপরাধ হয়েছিলো কিনা ? সেটা প্রমান করার দায়িত্ব ছিল এই সরকারের উপরে। সেই কাজ হয়তো এই সরকার সঠিকভাবে করতে পারেনি কিংবা সত্যিকারের কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়নি।
দুই, লোকপাল নিয়োগ নিয়ে আন্না হাজারের আন্দোলন জন আন্দোলনে পর্যবসিত হয়েছিল। তার ফল জাতীয় স্তরে বিজেপি এবং রাজ্যে স্তরে দিল্লীতে কেজরিওয়াল লাভ পেয়েছে। কিন্তু যে লোকপাল নিয়ে দেশব্যাপী এত শোরগোল সেই লোকপাল কোন পালে হারিয়ে গেছে, সেই কথা জনগনও ভুলে গেছে। তিন, মোদীজির নানা প্রতিশ্রুতি মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করেছিল। যেমন কালো টাকা ফেরত নিয়ে আসা, প্রত্যেক ভারতবাসীর Bank account এ পনের লক্ষ টাকা প্রদানের গ্যারান্টি, দুর্নীতিমুক্ত দেশ সহ একাধিক প্রতিশ্রুতি জনমানসে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। চার, ধর্মীয় একটি বিষয় প্রকাশ্যে বা গোপনে কাজ করেছিল। বহু মানুষ ভেবেছিল, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিশেষ একটি সমাজকে কোণঠাসা করা যাবে বা তাদের বিতাড়ন করা সম্ভব হবে। এছাড়া আরও কিছু ধর্মীয় এজেন্ডা ছিল। এই সমস্ত এজেন্ডা কার্যকরী করতে গিয়ে দেশে বিদেশে যথেষ্ট সমালোচিত হতে হয়েছে। দেশব্যাপী কয়েকটি মবলিঙচিন হয়েছে। এতে সেই বিশেষ সমাজের কিছু মানুষের প্রাণ গেছে কিন্তু সেই সমাজের মানুষকে বিতাড়ন করার মত কোন রাস্তা সংবিধানে দেয়নি। সে কথা বিজেপি দলও বলেনি। তবে আনাচে কানাচে এই প্রচার যে ছিল তা অস্বীকার করা যায়না। এতে দেশের মানুষের মনে মানসিক বিভাজন হয়েছে। তার মাশুল হয়তো আরও বেশ কিছু দিন আমাদের গুনতে হবে।
এখন প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটা সফল আর কতটা বিফল তা বিচার করবে ইতিহাস। তবে ফলাফল দুই প্রকারের হয়, যেমন পরীক্ষার ফল বের হতে দেরী করে তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে খেলার মাঠের ফল নগত পাওয়া যায়। এই বিজেপি সরকার, না, সরকার বললে ভুল হয়ে যাবে। কেননা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাস অনেক বেশী। তিনি যেকোন সিদ্ধান্ত এককভাবে নেন। যদিও কোনো একটি গণতান্ত্রিক দেশে তা কাম্য নয়। যেমন ধরুন নোটবন্দী করার সিদ্ধান্ত কেউ জানত বলে আজ অবধি শোনা যায়নি। এরফলে দেশের ও দেশের আপামর মানুষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। এই সত্যটা স্বীকার না করলেও সবাই হারে হারে টের পাচ্ছেন। জি,এস,টি, চালু করে দেশের ছোট বড় ব্যবসায়ী শেষ হয়ে গেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে তার ভয়ংকর প্রভাব পড়েছে। প্রভাব পড়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্য সরকারের অর্থনীতিতে। কেননা কেন্দ্র সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে ট্যাক্স আদায় করলেন কিন্তু রাজ্যের ভাগ দিতে গড়িমসি কিংবা বহু ক্ষেত্রে আটকে রেখে রাজ্য সরকারগুলিকে সংকটে ফেলে দিয়েছে।
সবচেয়ে বিপদজনক হল দেশব্যাপী তালাবন্দী করার সিদ্ধান্ত। এরফলে দেশের অর্থনীতি একেবারে পঙ্গু হয়ে গেল। কয়েক দশকেও দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয়না। কেউ হয়তো বলবেন এটা প্রয়োজন ছিল। আসলে যখন তালাবন্দী করা হয়, তখন দেশে সংক্রমন সেইভাবে ছড়াইনি। তখন বড় চারটি শহর আর বিমানবন্দর সামলালেই হয়ে যেত। এটাও একটি হটকারী সিন্ধান্ত। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রথমে আটকে রেখে পরে তাদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে দেশব্যাপী সংক্রমন ছড়িয়ে দেওয়ার মত ভুলের মাশুল দেশ দেশবাসী গুনেছে। এই তালাবন্দী বিষয়ে কারো সঙ্গে বসে আলোচনা করেছিল বলে আজ অবধি জানা যায়নি। এ বিষয়ে কেউ বলেনি যে, আমি কিংবা আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে ছিলাম। কেননা, তিনি একজন সফল নেতা। সফল নেতা মানে দেশের মানুষের বড় সংখ্যংক মানুষ তাকে মেনেছে, কিন্তু তিনি সার্থক নেতা নন, সার্থক নেতা সেই যার দ্বারা দেশ ও দেশবাসী উপকৃত হয়। সেই সার্থক, যে দেশের সর্বস্তরে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি করে, কিন্তু তিনি একের পর এক জাতীয় সম্পত্তি বিক্রি করে পুঁজিপতিদের হাতে দেশকে বিক্রি করে দিয়ে দেশবাসীকে পুঁজির গোলাম বানিয়ে দিলেন। এই জন্য তিনি সার্থক নেতা নন। ব্যক্তি জীবনের সফলতা তাকে সফল নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু তিনি সার্থকতা এনে দিতে পারেননি। এরফলে যে গতিতে দেশ পেছনের দিকে যাচ্ছে তাতে দেশ দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। যদি এমনটা হয়, তাহলে বুঝবেন কি ভুলটাই না আপনি করে ছিলেন।
আজ সবার কাছে একটিই প্রশ্ন দেশবাসীর জীবন বড় নাকি দেশের প্রধানমন্ত্রীর গরিমা বড় ? মানুষের জীবন বড় নাকি দল বড় ? অক্সিজেন বড় নাকি উঁচু মূর্তি বড়? প্রধানমন্ত্রী আবাস জরুরি নাকি হাসপাতাল জরুরি ? এই রকম লাখো প্রশ্ন বুকের মধ্যে নিয়ে দেশবাসী ঘুমোতে পারছে না। অথচ এমন একজন মানুষকে আমরা প্রধানমন্ত্রী করেছি যিনি নিজের ছাড়া কারোর ভালো বুঝতে চান না। যিনি নিজের কথা বলেন, অন্যের কথা শুনতে চান না। চিরকাল শুধু মনকি বাত করলেন কিন্তু কাম কি বাত করলেন না। তার ফল আজ ভোগ করছে সমগ্র দেশ। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত শুধু মৃত্যু সংবাদ। একটি সরকারি হিসাব আর একটি বে-সরকারি হিসাব। সবাই আজ মৃত্যু চেতনায় কাতর। এর জন্য দায়ী কে ? কেন আমরা এই পনের মাসে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিষয়ে উন্নয়ন করতে পারলাম না ? কেন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে না দেশের মানুষ নির্দ্বিধায় পিএম কেয়ারে কোটি কোটি অর্থ দান করলেন, শুধু মাত্র দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করার জন্য কিন্তু তিনি বললেন, সেই টাকার হিসাব তিনি দেবেন না। আমরা সবাই চুপ থেকে গেলাম। কেউ সামনে এসে বললাম না, হুজুর এই টাকা তো মানুষ বিশেষ একটি উদ্দেশ্যে দান করেছে।
সেই টাকার সঠিক ফিগার বলুন এবং সঠিক কাজে খরচ করুন।। না আমরা কেউ প্রশ্ন করিনি, কেউ করে থাকলে আমরা তাকে ট্রোল করেছি। সেই ভুলে আজ সমগ্র জাতি ট্রোল হতে বসেছে।
প্রতিদিন চারলক্ষের অধিক সংক্রমন আর চার হাজারের অধিক মৃত্যু। এতো সরকারি হিসাব। না জানি আসল চিত্র কত ভয়ানক। এই মৃত্যু মিছিলের কারন কি ? কারন কারো অজানা নয়, দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তখন তিনি নির্লিপ্ত থেকে সামনেই নির্বাচনী সভা সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত। ব্যস্ততায় আজ মানুষের জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। এই রকম একজন ব্যর্থ দেশ নায়ক ক্ষমতায় থাকলে মৃত্যু মিছিল আরও বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মোটকথা দেশের যে হাল, তাতে দেশকে রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় একজন যোগ্য ও সুচতুর ব্যক্তিকে দায়িত্ব নিতে হবে। অনেকেই এখনও ধর্মীয় নেশায় বুদ হয়ে আছেন। আপনি আমি থাকব তবেই ধর্মকর্ম। দেশের একটি অংশ চীনের দখলে গেছে । এই সত্য জানা সত্বেও বলতে দ্বিধা করছে সরকার। বর্তমান এই সংকটকালে চীন আমাদের দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চীন যে কোন সময়ে বড় রকমের ক্ষতি করতে পারে বলে অনেকেই চিন্তিত। একদিকে মহামারি অন্যদিকে চীনের আগ্রাসন সমস্ত দেশবাসীর মনে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
নাগরিকদের মধ্যে মাঝে মাঝে মতবিরোধ হতে পারে। তবে সংকটকালে সবাই এক হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে। আজ দেশে ভয়ংকর সংকট। এই সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সবাইকে এক হয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। কিভাবে মোকাবিলা করা যায় ? আমার মনে হয়, এই সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র বিজেপি; ও আর,এস,এস। কেননা এই সংকটের কালের জন্য একমাত্র দায়ী আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার বেশ কয়েকটি হটকারী সিদ্ধান্তের ফল আজ দেশ ভোগ করছে। তার এই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হওয়ার পরেও তিনি যেমন ভুল স্বীকার করেন না, তেমনি তাকে সংশোধন করারও কোনো চেষ্টাও করেন না। যদি তার ভুল স্বীকার করার মতো মন মানসিকতা থাকত তাহলে তিনি এতদিন পদত্যাগ করতেন। তা কিন্তু হবার নয়।
তাই বিজেপি,ও আর,এস,এস, উচিত প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে মাননীয় নরেন্দ্র মোদীজীকে সরিয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ঠ ফর্মাল এডুকেটেট মানুষকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানো। আর,এস,এস, যে স্বদেশী ভাবনার কথা বলে । এই ভাবনাকেই এবার উদার মনে বিকশিত করতে হবে। কেননা, এটা আজ প্রমাণিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন ব্যর্থ দেশ নায়ক। শিক্ষায়, চাকুরিতে, কর্মসংস্থানে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে হাহাকার পড়েছে। হাহাকার আজ শ্মশানঘাটে আর কবরস্থানে।
তাই সঙ্ঘ পরিবারের উচিত বিলম্ব না করে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বদল করা। তা না হলে দেশ সার্বিক ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাবে। দেশ দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পথে। নিজে বাঁচুন, দেশকে বাঁচান। নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎকে বাঁচান। জীবনে ভুলটাই বড় ব্যাপার নয়, বড় ব্যাপার হল তাকে সংশোধন করা।
জয়হিন্দ, জয় ভারত।
জয় বিবেক।