ওয়েব ডেস্ক :- তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ ফুটের রাবণের কুশপুতুল। কিন্তু রাবণের মাথার বদলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখের ছবি। পাশে রাবণের অন্যান্য মাথার জায়গায় কোথাও অমিত শাহ, কোথাও ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত শিল্পপতিদের ছবি। কৃষি আইন এনে মোদী সরকার যে সব শিল্পপতির ফায়দা পাইয়ে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ।
দশেরা পালনে রবিবার সন্ধ্যায় পঞ্জাবের বিভিন্ন শহরে-গ্রামে এমনই রাবণ দহন হয়েছে। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনীতির তর্কবিতর্ক। কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, এ হেন রাবণ দহন চাষিদের ক্ষোভের প্রকাশ। মোদী সরকারের উচিত তা বুঝে চাষিদের সঙ্গে কথা বলা। বিজেপির অভিযোগ, এর পিছনে আসলে কংগ্রেসের হাত রয়েছে।
বিশালাকার রাবণ। দশেরায় লঙ্কাধিপতির কুশপুতুলে আগুন দেওয়াই রীতি। এদিনই রাবণ-নিধন করেছিলেন রাম। কিন্তু একী! পঞ্জাব হরিয়ানায় রাবণের কুশপুতুলে বসল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখের ছবি। রবিবার পঞ্জাব, হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন ও অন্যান্য কৃষক সংগঠন মোদির ছবি বসানো রাবণের কুশপুতুল দাহ করে।তাদের যুক্তি, কৃষি আইনের বিরুদ্ধেই এই প্রতিবাদ। যাতে সামিল হয়েছে সব জায়গার সব শ্রেণির মানুষ।
মোদি ছাড়া রাবণের অন্যান্য মাথার জায়গায় কোথাও অমিত শাহ, কোথাও অম্বানি, আদানিদের ছবি। কৃষি আইন এনে মোদি সরকার যে সব শিল্পপতিদের সুবিধে করে দিয়েছে, এই অভিযোগেই এই অভিনব রাবণ-দহন।
এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতির তর্কবিতর্ক। এই ঘটনায় কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, এটি চাষিদের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ এর পিছনে হাত আছে কংগ্রেস সহ বিরোধীদেরই।
বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেসই এই কাজ করিয়েছে। বিজেপি নেতা রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠোরের মতে, বিরোধী আসনে থাকতে হওয়ায় কংগ্রেসের হতাশা প্রকাশিত হচ্ছে।
রাহুল গাঁধী এ ভাবে দশেরায় মোদির কুশপুতুল দহনের বিষয়ে বলেন, ‘রবিবার পঞ্জাব জুড়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পঞ্জাবে যে এই রকম রাগ তৈরি হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক ও বিপজ্জনক প্রবণতা।’
রবিবার পঞ্জাব-হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন ও অন্যান্য কৃষক সংগঠন প্রধানমন্ত্রী ছবি-সহ রাবণের কুশপুতুল দাহ করেছে। কৃষক সংগঠনের নেতাদের যুক্তি, এই প্রতিবাদে গ্রাম থেকে শহর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষ অংশ নিয়েছে। গোটা পঞ্জাবের মানুষ মোদী সরকারের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর পরে ২৭ অক্টোবর জাতীয় স্তরে কৃষক সংগঠনগুলির পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক হবে। ৫ নভেম্বর পঞ্জাবে বন্ধ পালন হবে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি সরকার বিক্ষুব্ধদের কথা না-শুনে দমনের চেষ্টা করছে। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী আজ এক নিবন্ধে অভিযোগ তুলেছেন, দেশের গণতন্ত্রের প্রতিটি স্তম্ভের উপরে হামলা চলছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে হয় কব্জা করার চেষ্টা হচ্ছে, নয়তো এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থাকে বিরোধীদের নিশানা করতে কাজে লাগানো হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এ ভাবে দশেরায় মোদীর কুশপুতুল দহনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “রবিবার পঞ্জাব জুড়ে এই ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পঞ্জাবে যে এই রকম রাগ তৈরি হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। এটি খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা, দেশের জন্যও খারাপ।” বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেসই এই কাজ করিয়েছে। বিজেপি নেতা রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠোরের যুক্তি, বিরোধী আসনে থাকতে হওয়ায় কংগ্রেসের হতাশা ফুটে বার হচ্ছে। যদিও রাহুলের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রীর উচিত চাষিদের সঙ্গে কথা বলা। তাদের কথা শোনা। সুরাহার বন্দোবস্ত করা। সিপিএমের পলিটবুরো নেতা নীলোৎপল বসুরও মত, চাষিদের এ-হেন কুশপুতুল দহন ক্ষোভেরই প্রকাশ।
সৌজন্য :- আনন্দ বাজার পত্রিকা