নিউজ ডেস্ক:- করোনা পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বর্তমানে দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। দেখা গেছে, বিশ্বের যে দেশগুলো আগে থেকেই লকডাউন করেছে তাদের সংক্রমণের সংখ্যায় তুলনায় কম। সেই একই পথে হেঁটেছে ভারতও, কিন্তু দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে তার মধ্যেও ভারত ভালো জায়গায় রয়েছে, এমন দাবিই করল রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, করোনা ভাইরাসের জেরে গোটা বিশ্বে যেখানে অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে সেখানে জি-২০ দেশগুলোর মধ্যে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশী ।
ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বিশ্ব জুড়েই অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে সেই তুলনায় আগামী ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ভারতের সামগ্রিক বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার ৭.৪ শতাংশ থাকবে, যা একরকম ভালোর দিকেই বলে দাবি করেছেন আরবিআইয়ের গভর্নর। আইএমএফ ২০২০ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ১.৯ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে, যা কিনা জি -২০ দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ওদিকে ২০২১ এবং ২০২২ সালে গোটা সামগ্রিক জিডিপি-র পরিমাণ প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন ডলার হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
লকডাউন পরিস্থিতি জারি হওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সাংবাদিক সম্মেলন করলেন আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করে তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের টালমাটাল আর্থিক পরিস্থিতির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে আরবিআই।
শুক্রবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করেন রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্যে আর্থিক প্যাকেজ, রিভার্স রেপো রেট কমানোর মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করা হয় আরবিআইয়ের তরফে। এসআইডিবির জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও ঘোষণা করেন শক্তিকান্ত।
এদিকে রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরের সাংবাদিক সম্মেলন চলার সময় দেশের শেয়ার বাজার বেশ চাঙ্গা হয়। সেনসেক্স এবং নিফটি দুটোরই সূচক ঊর্ধ্বগামী হয়। সেনসেক্স ৫৬০ পয়েন্ট এবং নিফটি ২৪০ পয়েন্টের উপরে উঠে যায়। এছাড়া দেশের ব্যাংকিং সংস্থাগুলোর শেয়ারের দামও বৃদ্ধি হতে দেখা যায়।
এদিন শক্তিকান্ত দাস জানান, IMF বিশেষজ্ঞরা এই বিপর্যয়ের নাম দিয়েছেন ‘দ্য গ্রেট লকডাউন’। ২০২০২১ অর্থবর্ষে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে। এই বিপুল অঙ্ক জাপান ও জার্মানির মিলিত জিডিপি’র চাইতেও বেশি। এহেন সময়ে ভারতে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংক ও NBFCগুলিকে ৫০ হাজার কোটি টাকার নগদ জোগান দেবে রিজার্ভ ব্যাংক। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রামীণ ব্যাংকগুলিকে নগদ জোগানের জন্য NABARD-কে ২৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে ন্যাশনাল হাউজিং বোর্ডকে ১০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দিচ্ছে রিজার্ভ ব্যাংক। পাশাপাশি, জিডিপির ৩.২ শতাংশ নগদের জোগান দেওয়া হয়েছে। রেপো রেট অপরিবর্তিত রেখে রিভার্স রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে আরবিআই। সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরও নগদ জোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে রিজার্ভ ব্যাংক।
