পাঠকের কলম :- এই ভদ্রলোকের নাম ফুয়াদ হালিম। চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক কর্মী। বাড়ি কিড স্ট্রিটে। গত লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসাবে লড়ে ৬.৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন থেকে এই ভদ্রলোক গরীব মানুষের জন্য ডায়েলেসিস করছেন মাত্র ৫০ টাকায়। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, ফুয়াদ হালিমের নিজের বাড়ির একাংশে তৈরি হওয়া হাসপাতালে গরীব মানুষ ডায়েলেসিস করাতে পারছেন মাত্র ৫০ টাকায়।
ফুয়াদ নিজের বাড়ির পাশেই একটা হাসপাতাল চালান। গরীব লোকের হাসপাতাল। স্কুলের বন্ধুরা মিলে তৈরি করেছেন ২০০৮ সালে। এসি নেই। ঝাঁ চকচকে ক্যান্টিন নেই। লিফট নেই। অপেক্ষা করার সুদৃশ্য লাউঞ্জ নেই। আছে একদল নিম্মবিত্ত অথবা দরিদ্র রোগী, ফুয়াদ-সহ কয়েকজন বিনা মাইনের ডাক্তার আর কিছু স্বাস্থ্যকর্মী। লকডাউন শুরুর আগে ফুয়াদের হাসপাতালে ডায়েলেসিস করতে খরচ পড়ত ৩৫০ টাকা। লকডাউন শুরু হওয়ার পর ওঁরা দেখলেন, বাস, ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরীব মানুষ ডায়লেসিস করাতে হাসপাতালে আসতে পারছেন না। যাতায়াত খরচ বেড়েছে বিপুল। এত টাকা খরচ করে এসে ৩৫০ টাকা দিয়ে ডায়েলেসিস করা সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের পক্ষে। চিকিৎসক ফুয়াদ আর তাঁর সঙ্গীরা তাই সিদ্ধান্ত নিলেন, যতদিন লকডাউন চলবে, তাঁরা ডায়েলেসিস করবেন ৫০ টাকায়। হ্যাঁ, মাত্র ৫০ টাকায় ডায়লেসিস করছেন ডাক্তার ফুয়াদ হালিমরা। প্রতিদিন। লকডাউনের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ওঁদের ওখানে ৫০ টাকায় ডায়লেসিস হয়েছে মোট ১৫৭৩ বার।
ফুয়াদ হালিমদের ‘স্বাস্থ্য সংকল্প’ হাসপাতাল সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানি না। উনি যে রাজনৈতিক দল করেন, আমি তার সমর্থকও নই। আমি প্রথম ভোট দিই ২০০৯ সালের লোকসভায়। তারপর ২০১০ সালের পুরসভা এবং ২০১১ সালের বিধানসভায়। এই তিনটি ভোটই আমি ফুয়াদ হালিমদের পরাজিত করতে যে বিরোধী জোট তৈরি হয়েছিল, তাদের দিয়েছিলাম। ২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৬ সালের বিধানসভাতেও আমি ফুয়াদ হালিমদের দলকে ভোট দিইনি। ২০১৯ সালে ভেবেছিলাম ওঁদের ভোট দেব, কিন্তু সেবার আর ভোট দিতে যাওয়াই হয়নি। আগামীতেও হয়তো ফুয়াদের দলকে ভোট দেব না। অথবা হয়তো দেব। তাতে কী-ই বা যায় আসে! আমার একটা ভোটের তেমন কোনও গুরুত্বই নেই।
কিন্তু একজন নাগরিক হিসাবে ডাক্তার ফুয়াদ হালিমের এই উদ্যোগকে আমি সেলাম জানাচ্ছি। মাত্র ৫০ টাকায় গরীব মানুষের ডায়লেসিস করছেন যে চিকিৎসক, তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ অভিবাদন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের নিরলস যোদ্ধা ডাক্তার পূণ্যব্রত গুণের সঙ্গে কথা বলছিলাম। রাজনৈতিক ভাবনা ও অনুশীলনে তিনি ফুয়াদের ভিন্ন মেরুর মানুষ। যোগ্য সমালোচকও বটে। তিনিও বললেন, এই উদ্যোগটি সত্যিই চমৎকার।
কিড স্ট্রিটের গরীব লোকের হাসপাতালের কর্ণধার ফুয়াদ হালিমের ছোট্ট অফিসঘরটি অগোছালো। দরজা ঠেলে যে কেউ ঢুকে পড়ছেন, ফুয়াদকে সমস্যার কথা বলছেন। ফুয়াদ শান্তভাবে সমাধান বাতলে দিচ্ছেন। স্পষ্টই বলছেন, “আমরা কিন্তু মেডিকা বা পিয়ারলেস বা বেলভিউ নই। আমাদের হাতে অ্যাটম বোমা দূরের কথা, ভাল রাইফেলও নেই। তবে ঢাল-তরোয়ালটুকু আছে। সেটা দিয়েই লড়ে যাব। আর হ্যাঁ, খরচ প্রায় লাগবেই না। ডায়েলেসিসে আমরা শহরের অন্য কোনও হাসপাতালের চেয়ে কম নই।”
ফুয়াদ হালিমরা কি একা? নাকি এমন উদ্যোগ আরও কোথাও রয়েছে? জানি না। আশা করি, ওঁরা ছাড়াও অন্য কিছু বেসরকরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নামমাত্র খরচে ডায়েলেসিস করছেন এই বিচ্ছিরি সময়ে। তাঁদের কথা জানতে পারলে ভাললাগবে।
লকডাউনের দিনগুলিতে ৫০ টাকায় ডায়লেসিস করানো ডাক্তার ফুয়াদ হালিম ভাল থাকুন।
অর্ক ভাদুড়ি