হাসান বাসির .বেলডাঙ্গা :- বেলডাঙ্গার বেগুনবাড়ি শহীদ নাজিমুদ্দিন সেখ এর বাড়ি যাই এস ডি পি আই প্রতিনিধি দল। কথা বলেন তাঁর বাবা আলায়োল ইসলাম, মা, বড় ভাই আব্দুর রহিম সহ তিন ভাইয়ের সাথে। নাজিমুদ্দিন এর স্ত্রী নার্গিস খাতুন এর সাথেও কথা বলেন। নার্গিস খাতুন জানালেন কুড়ি দিন আগে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে যায়। সোমবার ১৩ ডিসেম্বর রাতে বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল। শিয়ালদহ থেকে রাত ৮ টা ১০ র ট্রেন ধরে। তাঁর সাথে রাত ৯ টার সময় শেষ কথা হয়। নাজিমুদ্দিন এর বড় ভাই আব্দুর রহিম জানালেন ট্রেনে এক বৃদ্ধার কাছে কিছু মরিচ ছিল। একই কামরায় ১০/১২ জন ছানা ব্যবসায়ী ঘোষ ছিল। ছিলেন নাজিমুদ্দিন সহ তাঁর কয়েকজন বন্ধু। ট্রেন বেথুয়াডহরী ছাড়ার পর ঐ বৃদ্ধা কান্নাকাটি করে বলতে থাকেন তাঁর কিছু মরিচ কেউ চুরি করে নিয়েছে। বৃদ্ধার কান্নাকাটি শুনে নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান এবং জানতে চান তাঁর কত টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। বৃদ্ধা জানান দু আড়াইশো টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে দুশো টাকা দিয়ে দেন। তার পর যাত্রীদের মধ্যে কেউ নিয়েছে কি না তার জানার জন্য খোঁজা শুরু করেন। খোঁজ পাওয়া যায় এক ছানা ব্যবসায়ী মরিচ চুরি করেছে। তখন নাজিমুদ্দিন এর সাথে ছানা ব্যবসায়ীদের বচসা শুরু হয়। এর পর ট্রেন দেবগ্ৰাম স্টেশনে দাঁড়ালে ছানা ব্যবসায়ীরা নাজিমুদ্দিন ও তাঁর দুই বন্ধু রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয়। ব্যপক মারধর করে। ট্রেন ছেড়ে দিলে রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে ছেড়ে দেয়। তাঁরা ট্রেনে উঠে পড়ে। নাজিমুদ্দিনকে ট্রেনের চাকার নীচে ফেলে দেয়। ট্রেন নাজিমুদ্দিন এর দেহকে দু টুকরো করে চলে যায়। এক দিকে থাকে বুক থেকে মাথা। অন্য দিকে থাকে কমর থেকে নীচের দিক।
নাজিমুদ্দিন এর বাবা অটোরিকশা চালক। নাজিমুদ্দিনরা চার ভাই এক বোন। নাজিমুদ্দিন সবার ছোট। বয়স ২২। দুই সন্তান। নাজিমুদ্দিন চার চাকা গাড়ির চালক।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ সাহাবুদ্দিন, সমাজসেবী ডাঃ এম হাসনাৎ ।
প্রকাশ থাকে যে এক বৃদ্ধার ক্যাপসিকামের ব্যাগ চুরি হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হল বছর পঁচিশের তরতাজা যুবক নাজিমুদ্দিনকে। চলন্ত ট্রেন থেকে নামিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল নিত্যযাত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ– দেবগ্রাম স্টেশনে ছানা ব্যবসায়ীরা ওই যুবককে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেওয়ার পর তাঁকে মারধর শুরু করে এবং ফের ট্রেন চলতে শুরু করলে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে লাইনে ফেলে দেয়। ট্রেনে কাটা পড়ে দু’টুকরো হয়ে যায় নাজিমুদ্দিনের দেহ। নৃশংস এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার দেবগ্রামে।
জানা গেছে, দেবগ্রাম রেলস্টেশনের কাছে লাইনের ওপর বীভৎস অবস্থায় উদ্ধার হয় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার এক যুবকের দেহ। মৃতের নাম নাজিমুদ্দিন শেখ (২৫)। রেললাইনের দু’পাশে তাঁর দেহের দুটি টুকরো পড়েছিল। মাথা থেকে বুক পর্যন্ত পড়ে রয়েছে একদিকে। অপরদিকে উলটো হয়ে পড়ে রয়েছে কোমর থেকে দেহের বাকি নীচের অংশ। মাঝখান থেকে কাটা!
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে– নাজিমুদ্দিন পেশায় স্কুল ভ্যানের চালক। সম্প্রতি তিনি হায়দরাবাদে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। সোমবার তিনি ট্রেন-পথে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু রাতে বাড়ি না ফেরার দুশ্চিন্তা বাড়ে। পরিবারের তরফে সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খোঁজ করা হয়। মঙ্গলবার সকালে নদিয়ার দেবগ্রাম স্টেশনের রেললাইনের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজনের থেকে খবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন– ট্রেনে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন নাজিমুদ্দিন। তাঁকে কয়েকজন মারধর করেন। দেবগ্রাম স্টেশনে ট্রেন এলে ছানা ব্যবসায়ীরা তাঁকে ট্রেন থেকে নামিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ।
নাজিমুদ্দিনের ভাই আতিউর রহমানের অভিযোগ যাদের সঙ্গে বচসাই জড়িয়েছিলেন নাজিমুদ্দিন– তারা ছানা ব্যবসায়ী । ওই ছানা ব্যবসায়ীদের বাড়ি দেবগ্রামে। তিনি জানান– ট্রেনে এক বৃদ্ধার ক্যাপসিকামের একটি ব্যাগ হারিয়ে যায়। ওই সময় বৃদ্ধা কান্নাকাটি শুরু করলে তাঁকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন নাজিমুদ্দিন। এক ছানা ব্যবসায়ীর দুধের ক্যান থেকে ওই বৃদ্ধার ক্যাপসিকামের ব্যাগটি উদ্ধার করে দেন তিনি। এর পরই আরও বাক্-বিতণ্ডা শুরু হয় নিজামুদ্দিনের সঙ্গে। শেষমেশ ট্রেনটি দেবগ্রাম স্টেশনে এলে ছানা ব্যবসায়ীরা নিজামুদ্দিনকে মারতে মারতে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয়। এর পর ট্রেনটি যখন চলতে শুরু করে ওই সময় তাকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের তলায় ফেলে দেয় বলে আতিউর রহমান অভিযোগ করেন।