নিউজ ডেস্ক :- বস্তুত, করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে ফের সুদৃঢ় করতে শ্রম আইনে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। শিল্পকারখানার মালিকদের উপর বোঝা কমাতে শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক গাইডলাইন শিথিল করার পক্ষে সরকার। প্রয়োজনে কাজের সময়ও বাড়ানো হতে পারে। যা শ্রম আইনের পরিপন্থী। কংগ্রেস দলগতভাবে আগেও এর বিরোধিতা করছে। শোনা যাচ্ছে সংসদের অধিবেশনেও কংগ্রেস এই নতুন বিধিগুলির বিরোধিতাই করবে। তবে সংসদে বিজেপির যা শক্তি তাতে, এই আইন পাশ হতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভারতের লাখ-লাখ মানুষ। মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে দেশের অর্থনীতিরও। আর সেই পরিস্থিতিকেই শিখণ্ডি করে দেশের শ্রম আইনে আমূল বদল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের খবর এমনটাই। এ নিয়ে অবশ্য অনেকদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। অবশেষে আসন্ন বাদল অধিবেশনেই শ্রম আইনে নতুন তিনটি বিধি যোগ হতে চলেছে বলে খবর। ঠিক কোন কোন বিধি যোগ হচ্ছে সে সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট রূপরেখা দেখা না গেলেও করোনা আবহে মালিকপক্ষকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হতে পারে বলে খবর।
উল্লেখ্য, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ একের পর এক বিজেপি-শাসিত রাজ্য করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অধিকাংশ শ্রম আইন হয় সাসপেন্ড, না-হয় সংশোধনের কাজে হাত দিয়েছে। এর প্রতিবাদে লকডাউন ওঠার পর দেশ জুড়ে যাতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়াক কথা ঘোষণাও করেছিল ইনটাক, সিটু, এআইটিইউসি-র মতো কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন ও ফেডারেশন।
অভিযোগ ওঠে, করোনা পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি সরকার শ্রম আইনগুলোয় হাত দিচ্ছে, যা বেআইনি। এ নিয়ে ওই সব রাজ্যের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ও হাইকোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিল শ্রমিক সংগঠনগুলি। এরই মাঝে এবার কেন্দ্রীয় শ্রম আইনে নতুন বিধি যোগ করে মালিকপক্ষকে সুবিধা দিতে পারে, এমন জল্পনা তৈরি হয়েছে।
অবশ্য সম্প্রতি নয়, গত বছরের জুন মাস থেকেই শ্রম আইন সংশোধনের কাজে হাত দেয়। তখনই শ্রম আইনের ৪৪টি বিধি কমিয়ে চারটি করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কেন্দ্র। যার মধ্যে ছিল ন্যূনতম বেতন, বোনাস, সমকাজে সমবেতনের মতো বিষয়। এবার যোগ হতে চলেছে নতুন তিনটি বিধি। আর এখানেই দেখা দিয়েছে সংশয়। সূত্রের খবর, যোগ হতে পারে সামাজিক সুরক্ষা বিধি, যার মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিমা এবং মাতৃত্বকালীন সুবিধায় বদল আনা হতে পারে। আবার মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের বিধিতে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া, ট্রেড ইউনিয়নগুলির অধিকারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হতে চলেছে বলে খবর। আর পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা বিধিতে শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং তাঁদের অন্যান্য সুবিধাগুলি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি থাকবে বলে জল্পনা।
যে তিনটি বিধি নতুন করে শ্রম আইনে যুক্ত করা হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সামাজিক সুরক্ষা বিধি। এই বিধির অধীনে প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিমা এবং মাতৃত্বকালীন সুবিধায় বেশ কিছু বদল আসতে পারে। সূত্রের খবর, মালিকপক্ষের খরচ কমানোর লক্ষ্যেই এই বদল। নতুন বিধিগুলির দ্বিতীয়টি মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া, ট্রেড ইউনিয়নগুলির এক্তিয়ার প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শেষ বিধিটি হল পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা বিধি। এতে মূলত শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং তাঁদের অন্যান্য সুবিধাগুলি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, সেটা নির্ধারণ করা হবে।