ওয়েব ডেস্ক :- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সভায় অনুপস্থিত থাকায় মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে এবার চরম সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেই সুত্র ধরে জানা গিয়েছে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি অধীর চৌধুরীর উপস্থিতিতে তাঁরা কংগ্রেসে যোগ দেবেন। যদিও এই ব্যাপারে তৃণমূলের দাবি, তাদের দলের কোনও ক্ষতি হবে না। ২০২১-এর নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের তাদের দল আশাতীত ভাল ফল করবে।
মঙ্গলবার বহরমপুরে জেলা তৃণমূল ভবনে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের খান এপ্রসঙ্গে বলেন, “দীর্ঘ দু-তিন মাস ধরে পার্টির সাথে এই লুকোচুরি খেলছে। সে চাইছে শুভেন্দু অধিকারীর দেখানো পথে সে-ও হাঁটবে। সেই পথেই যখন সে হাঁটতে চায়, তখন আমরাও আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাই না। পথকে আরও প্রশস্ত করতে চাই। পথকে পরিষ্কার করতে চাই। যে পথ ভালো লাগে, সে পথে সে চলবে। আগামিকাল মিটিং ডেকেছি। মিটিংয়ে জেলা পরিষদের সমস্ত সদস্য-সদস্যারা উপস্থিত থাকবেন। সেইসঙ্গে আমাদের জেলা নেতৃত্বও থাকবেন। তাকে নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সে যদি গরহাজির থাকে, তাহলে দলের পক্ষ থেকে যা যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আমরা নেব।”
অন্যদিকে, সভাধিপতি মোশারফ হোসেন এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানান, “আমি সমস্ত বিষয়টা নজরে রাখছি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রকাশ্যেই আমার বক্তব্য জানাব।” এদিকে তৃণমূলের এই গোষ্ঠীকোন্দলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস এপ্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের যেটুকু মনে হয় জেলা তৃণমূল সভাপতি তিনি হয়তো আস্থার জন্য সভাধিপতিকে ডাকছেন। আর সভাধিপতি হয়তো বলতে চাইছেন, তোমার উপরেই আমাদের আস্থা নেই। তাই তোমার ডাকা সভায় যাব কেন? ব্যাপারটা হয়তো এইরকম হচ্ছে।”
১৯ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিতে চাওয়া উল্লেখযোগ্য নাম হল মোশারফ হোসেন। তিনি জেলা পরিষদের সভাধিপতি। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে দলের সম্পর্ক ভাল নয়। নভেম্বর শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থাকার সময়েই দলীয় এক নেতার স্মরণসভায় শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে হাজির ছিলেন এই মোশারফ হোসেন। তিনি মূলত শুভেন্দু অধিরাকী অনুগত বলেই পরিচিত ছিলেন। কার্যত শুভেন্দু ঘনিষ্ঠতার কারণে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তরক্ষী তুলে নেয় প্রশাসন। সেই সময় তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু হাতের বলেছিলেন মোশারফ হোসেন শুভেন্দু অধিকারীর পথে চলছেন। আবু তাহেরের সঙ্গে মোশারফ হোসেনের সম্পর্ক ভাল ছিল না।
১৯ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের আরও যে নেতা কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন, তিনি হলেন নীলতরন আঢ্য। ২০১৬-তে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া এই নেতাও শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। সাম্প্রতিক কালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বেসুরো হয়েছিলেন তিনি।
এই দলবদলে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না, দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, এই জেলায় শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা এখন কংগ্রেসে যাচ্ছেন। ফলে দুই দলের সম্পর্ক বোঝাই যাচ্ছে। ২০২১-এর নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল আশাতীত ভাল ফল করবে বলেও সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন তিনি।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে ২২ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১৬ টি আসনে। আর বিজেপি মাত্র একটি আসনে এগিয়ে ছিল। কংগ্রেস এগিয়ে ছিল ৫ টি আসনে।