ওয়েব ডেস্ক :- একুশের ভোটের আগে ‘পত্রবোমা’ বাংলায়। জেল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি লিখলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। চিটফান্ডের ব্যবসার চালাতে কাকে কত টাকা দিয়েছেন, চিঠিতে বিশদে লিখেছেন তিনি, সূত্রের খবর। এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতির আলোকবৃত্তে থাকা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরির নামও রয়েছে চিঠিতে।
কারা দপ্তর সূত্রে খবর, গত ১ ডিসেম্বর চিঠিটি লেখেন সুদীপ্ত সেন। কারা দপ্তর থেকে তা পাঠানো হয়েছিল এডিজির দপ্তরে। সেখান থেকে সিএমও ও পিএমওতে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, দেড় পাতার চিঠিতে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। পত্রে তিনি জানিয়েছন, শুভেন্দু অধিকারীকে ৬ কোটি, সুজন চক্রবর্তীকে ৯ কোটি এবং বিমান বসুকে ২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অধীর চৌধুরি নাকি ৬ কোটি টাকা নিয়েছেন! তিনি নিজেও নাকি ৬ কোটি নিয়েছিলেন।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়কে কত টাকা দিয়েছেন, তা মনে করতে না পারলেও, অঙ্কটা যে বেশ মোটা, জানিয়েছেন সুদীপ্ত সেন, দাবি সূত্রের। চিঠিটি সুদীপ্ত সেনই লিখেছেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। সূত্রের খবর, হাতের লেখা পরীক্ষা করবে সিবিআই। যদিও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোনও বিবৃতিই আসেনি এখনও।
সম্প্রতি সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত দেবযানী মুখার্জির জামিনের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই জানিয়েছিল, সারদা মামলা সংক্রান্ত একটি নতুন ভয়েস রেকর্ড হাতে এসেছে। ওই অডিও–ক্লিপে রয়েছে একাধিক ব্যক্তির কণ্ঠস্বর। তা নিয়ে সুদীপ্ত সেন ও দেবযানীকে ফের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় তারা। আর তারপরই এই পত্রবোমা!
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছে গিয়েছে সেই চিঠি। কী রয়েছে সেই চিঠিতে? সারদা চিটফান্ড ব্যবসা চালানোর জন্য কাকে কত পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন, তারই উল্লেখ করেছেন সুদীপ্ত সেন। সেখানেই রয়েছে শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়ের নাম। এমনকী তিনি জানান, টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাদের কাছেও। সুদীপ্ত সেনের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী ৬ কোটি, অধীর চৌধুরী ৬ কোটি, সুজন চক্রবর্তী ৯ কোটি এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ২ কোটি টাকা নানা সময় তাঁর থেকে নিয়েছেন। তবে মুকুল রায়কে দেওয়া অর্থের পরিমাণ লেখা নেই সেখানে। চিঠিতে সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার অনুরোধও জানিয়েছেন সারদা কর্তা।
বিস্ফোরক এই চিঠি সামনে আসার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী সাফ জানিয়েছেন, তিনি কোনও ‘চোরে’র কথার উত্তর দেবেন না। এদিকে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের দাবি হাস্যকার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁকে দিয়ে টাকা নেওয়ার কথা লেখানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সুজনের অভিযোগ, ভোটের আগে হঠাৎ করে সিপিএমকে খুঁজে পেয়েছেন মোদি ও মমতা। যাঁদের এতদিন দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আসলে তৃণমূল ও বিজেপি বুঝতে পারছে বামেরাই তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ। তাই সুদীপ্ত সেনের মতো লোককে দিয়ে এসব লেখানো হয়েছে। সিট, সিবিআই তদন্ত করে একজন সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলতে পারেনি। আর ভোটের আগে বিমান বসুর মতো নেতা টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করানো হয়েছে। এসব করে দুই শাসকদল মানুষের কাছে আরও হাস্যকর হচ্ছে বলেই মনে করেন বাম পারিষদীয় দলনেতা।