ওয়েব ডেস্ক: গত ৯ ডিসেম্বর লোকসভায় পাশ হয়েছে ক্যাব অথবা নাগরিকপঞ্জি সংশোধনী বিল। দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবীরা কিন্তু তীব্র বিরোধিতা করছেন এই বিলের। তাঁদের দাবি, এই বিল ‘অসাংবিধানিক, স্বৈরাচারী এবং মুসলিম বিদ্বেষী’।
সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত চার আইনজীবী— প্রশান্ত ভূষণ, সঞ্জয় হেগড়ে, কলিন গনজালভেস এবং শাদন ফারাসত জানালেন ঠিক কী কারণে ক্যাব অসাংবিধানিক। সংবিধানের ১৪ নম্বর (আইনের চোখে সমান অধিকার) ধারা অনুসারে, ভারতের মধ্যে উপস্থিত থাকা প্রতিটি মানুষ আইনের চোখে সমান। শাদন ফারাসতের মতে, এই ধারাই ক্যাব খারিজ করার জন্য যথেষ্ট। এর পাশাপাশি, তিনি এটাও জানান যে এই বিল সংবিধানের ১৫ নম্বর (বৈষম্য বিরোধিতা), ২১ নম্বর (জীবন অধিকার এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা) এবং ২৫ নম্বর (ব্যক্তিগত ধর্ম পালনের অধিকার) ধারারও বিরোধী। ক্যাব একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি অন্যায্যভাবে বৈষম্যমূলক এবং প্রকাশ্যভাবে স্বৈরাচারী।
এই বিলের কথা বলার সময়, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার ‘রিজনবল ক্ল্যাসিফিকেশন’ অর্থাৎ বিধিসম্মত শ্রেণিবিন্যাস শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে জানিয়েছেন, ‘শব্দটি অত্যন্ত ভুল অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বিধিসম্মত শ্রেণিবিন্যাস সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে বিন্যাসের সঙ্গে সেই নির্দিষ্ট শ্রেণির কোনও যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে উদ্বাস্তুদের ভাগ করা হচ্ছে ধর্মের ভিত্তিতে। সেটা করতে হলে যে কোনও ধর্মের মানুষকেই আশ্রয় দিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ। সুতরাং ধর্মীয় কারণে নিগৃহীত মানুষকে আশ্রয় দিতে হলে, সেখানে আবার ধর্মের কারণেই বৈষম্য করা যায় না। সেটা আমার মতে স্বৈরাচার।’
আর এক প্রবীণ প্রশান্ত ভূষণ আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা অনুসারে কোনও রকম বৈষম্যই নিষিদ্ধ। ছাড়া, এই ধারা অনুসারে কোনও রকম আইনি স্বেচ্ছাচারও নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে মাত্র তিনটি দেশের নির্বাচিত নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া যায় না।’ কলিন গনজালভেসের দাবি, ‘বোঝাই যাচ্ছে ক্যাব বিষয়টাই সম্পূর্ণ ভাবে ধর্ম ভিত্তিক। এর স্বপক্ষে তুচ্ছ অজুহাত দেওয়া হচ্ছে, যেগুলো সুপ্রিম কোর্টে গেলে ধোপে টিকবে না।’ প্রশান্ত ভূষণ জানান, ‘ক্যাব বৈষম্যমূলক এই কারণে, যে এই বিলে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে। এটা ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক ভাবের বিরোধী। ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামো।’