মোদির ৭ বছরে ৫ লক্ষ কোটির ব্যাঙ্ক জালিয়াতি
৫০টি অ্যাকাউন্ট থেকেই লোপাট ৭৬ শতাংশ
ওয়েব ডেস্ক :- জীবানন্দ বসু, কলকাতা: সাত বছর প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আর এই সাত বছরে দেশের ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ঋণ জালিয়াতির সৌজন্যে লোপাট হয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। প্রদত্ত ঋণের সাড়ে চার শতাংশ এভাবেই কার্যত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ‘খরচের খাতা’য় চলে গিয়েছে। এই তথ্য দেশের সামনে এনেছে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। মহারাষ্ট্রে আরটিআই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সৌরভ পানধারের এক প্রশ্নের উত্তরে সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করেছে আরবিআই। ঋণ নেওয়ার নাম করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে বেপাত্তা হয়ে যাওয়া মোদি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মেহুল চোকসি বা নীরব মোদিদের দেশে ফেরানোর বিতর্ক যখন নতুন করে দানা বেঁধেছে, তখন আরবিআইয়ের এই রিপোর্ট নিশ্চিতভাবেই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সৌরভকে দেওয়া তথ্যে আরবিআই জানিয়েছে, দেশের মোট ৯০টি ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সাকুল্যে ৪৫ হাজার ৬১৩টি ঋণ খেলাপের ঘটনা ঘটেছে। মোট জালিয়াতির অঙ্ক ৪ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। সোজা অঙ্কে প্রায় পাঁচ লক্ষ কোটি। এর মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ঘর থেকে জালিয়াতি হয়েছে ৭৮ হাজার ৭২ কোটি টাকা। পিএনবি, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক সহ দেশের প্রথম সারির পাঁচটি ব্যাঙ্ক মিলিয়ে জালিয়াতির অঙ্ক ২ লক্ষ ৬ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। সবটাই নেওয়া হয়েছে ঋণের নাম করে। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিও এই খাতে তাদের মতো করে অবদান রেখেছে। তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক। ৩১ মার্চ পর্যন্ত তারা যে ঋণ দিয়েছে, তার ৫.৩ শতাংশ ফেরেনি কোষাগারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইয়েস ব্যাঙ্ক (৪.০২ শতাংশ) ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক (২.৫৪ শতাংশ)। মোট জালিয়াতির অঙ্কের ০.৫৫ শতাংশ ঘাড়ে চেপেছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২০১৪-’১৫ সাল থেকে ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের মধ্যে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণ জালিয়াতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ২০১৮-’১৯ এবং ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে জালিয়াতির ঘটনা যথাক্রমে ৯০.২ শতাংশ এবং ৯৮.১ শতাংশ বেড়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলি ঋণখেলাপিদের ২ হাজার ২৬১টি অ্যাকাউন্টকে চিহ্নিত করেছে। এই অ্যাকাউন্টগুলিতে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকায়। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ‘রাঘব-বোয়াল’দের এমন ৫০টি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যেগুলির মাধ্যমে জালিয়াতির অঙ্কের ৭৬ শতাংশ টাকা লোপাট হয়েছে। আরটিআই আইনে দেওয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই তথ্য নিশ্চিতভাবেই দেশের অর্থনীতির পক্ষে অশনি সঙ্কেত। বিজেপি-বিরোধী তামাম রাজনৈতিক দল এই ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার নতুন অস্ত্র পাবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
তীব্র আক্রমণ কংগ্রেসের
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: সুদূর অ্যান্টিগায় যখন মেহুল চোকসি এপিসোড ক্রমশ জমে উঠেছে, ঠিক তখনই গত সাত বছরে নরেন্দ্র মোদির নাকের ডগায় লাগাতার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ইস্যুতে সরব হল কংগ্রেস। প্রশ্ন তুলল, কেন বছরের পর বছর ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পরিমাণ বাড়ছে? সরকারের মধ্যে কার মদতে নিঃশব্দে চলছে জালিয়াতি? কেন সরকার কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
এআইসিসি মুখপাত্র অর্থনীতিবিদ ডঃ গৌরব বল্লভ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশ তৈরি করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত সাত বছরে সব মিলিয়ে যে ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার (প্রায় ৫ লক্ষ কোটি) ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়ে গেল, তার জবাব কে দেবে?’ এআইসিসির মুখ্য মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার ট্যুইট, ৮০ লক্ষ কোটি কালো টাকা বিদেশ থেকে ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তা হয়নি। ফের প্রতিশ্রুতি পাঁচ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির। কিন্তু প্রকৃত সত্য কী? তা হল, সাত বছরে পাঁচ ট্রিলিয়ন বা পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি। কাদের যোগসাজশে কারা এই টাকা নিয়েও দিব্যি রয়েছেন, সরকারকে তা স্পষ্ট করতে হবে বলেই দাবি করেছে কংগ্রেস।
সৌজন্য :- বর্তমান পত্রিকা