অভিযোগ এক বিপন্ন ছাত্রীর ,সরশুনা কলেজের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে
নিজস্ব সংবাদদাতা,কোলকাতা:- সরশুনা কলেজের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা রায় চৌধুরীর অভিযোগের তীর সরশুনা কলেজের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, ২০১৭ সালে এই কলেজে ভর্তি হয় অত্যন্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে শর্মিষ্ঠা। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য একটি সংবাদপত্রে এবং মিডিয়া হাউজে পার্ট টাইম কাজ করে সে। কলেজের প্রিন্সিপাল শুভঙ্কর ত্রিপাঠী শর্মিষ্ঠা ফ্যাশন মিডিয়ায় যোগাযোগ নিয়ে ক্রমাগত তাঁকে মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন বলে অভিযোগ।
এমনকি অভিভাবকদেরও কলেজে ডেকে শর্মিষ্ঠার নামে নানারকম মিথ্যে অভিযোগ করেন। চরম অপমান করেন ওই প্রিন্সিপাল এবং তাঁদের বলেন শর্মিষ্ঠাকে ফ্যাশন মিডিয়া থেকে বের করে আনতে। শর্মিষ্ঠার আরো অভিযোগ, এরপর থেকে তাঁকে নাকি প্রিন্সিপালের নানারকম অশালীন আচরণের শিকার হতে হয়। এর তীব্র প্রতিবাদ করলে প্রিন্সিপাল অভিভাবককে দেখে তাদের সামনেই শর্মিষ্ঠাকে চ্যালেঞ্জ করেন যে তিনি শর্মিষ্ঠাকে কিছুতেই কলেজ থেকে পাস করতে দেবেন না। এর আগে ফলাফলের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির উপর থাকায় শর্মিষ্ঠাকে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০২০ সালের কোভিড পরিস্থিতিতে ম্যাথামেটিক্স জেনারেল সাপ্লি পরীক্ষা ইউনির্ভার্সিটির তত্ত্বাবধানে কলেজ নেয় এবং খাতা দেখেন সেই কলেজেরই গণিতের অধ্যাপক। ২০২১-এর জানুয়ারি মাসে এই পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে ওয়েবসাইটে
‘রেজাল্ট নট ফাউন্ড’.দেখায়।
এই ঘটনার পর শর্মিষ্ঠা যিনি পরীক্ষার খাতা দেখেছেন সেই অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন তাঁর রোল নাম্বারে একটা ডিজিট ভুল আছে, অফিসে যোগাযোগ করলে ঠিক করে দেবে, যদিও শর্মিষ্ঠা নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর এবং ফোন নম্বর সহ খাতা জমা দিয়েছিলেন। শর্মিষ্ঠা কলেজে যোগাযোগ করলে সেই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁকে বারবার কলেজে দেখা করতে বলা হয়। রেজাল্ট কারেকশন করে প্রাপ্ত নম্বর ইউনির্ভার্সিটিতে পাঠানো হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নম্বর কারেকশনের আশায় শর্মিষ্ঠা কলেজে যেতে থাকে। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় শর্মিষ্ঠা আবারো সেই অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন যে তিনি শর্মিষ্ঠার পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর অফিসকে দিয়ে দিয়েছেন এবং শর্মিষ্ঠা ভালো নম্বর পেয়ে পাস করেছে, শুধুমাত্র প্রিন্সিপালের একটি অনুমোদন প্রয়োজন। অথচ সেই নম্বর কলেজ এখনো কেন ইউনিভার্সিটিতে পাঠায়নি সেই ব্যাপারে প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, মেইল করলেও প্রিন্সিপাল শুভঙ্কর ত্রিপাঠী তার সঙ্গে একইরকম দুর্ব্যবহার করতে থাকেন।
শর্মিষ্ঠা বাধ্য হয়ে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট কন্ট্রোলারের কাছে তার লিখিত অভিযোগ জানান, তিনিও বলেন পুনরায় প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। প্রিন্সিপালের থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে শর্মিষ্ঠা ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ইনস্পেকশন ডিপার্টমেন্টেও ঘটনাটি জানায়। এতে আরো ক্ষুব্ধ হয় প্রিন্সিপাল,জানিয়ে দেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় শর্মিষ্ঠাকে পাস করানো হবে না। শর্মিষ্ঠা কলেজের ইউনিয়নের কাছে ঘটনাটি জানান। এরপর শর্মিষ্ঠা তাঁর মাকে নিয়ে কলেজে গেলে বলপূর্বক সিকিউরিটি দিয়ে প্রিন্সিপাল শর্মিষ্ঠা ও তাঁর মাকে কলেজ থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। প্রিন্সিপালের এই দুর্ব্যবহারে অসহায় শর্মিষ্ঠা স্থানীয় সরশুনা থানায় প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ শর্মিষ্ঠাকে জানান, রোল নম্বরের ডিজিটটা ভুল হওয়া কোনো অসুবিধা হওয়ার কারণ হতে পারে না।
২০২০ সালের কলকাতা তিলোত্তমা উইন করা শর্মিষ্ঠার অভিযোগ ফ্যাশন জগতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শুভঙ্কর ত্রিপাঠী তা মেনে নিতে পারেননি এবং তিনি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন যে তাকে কোনোভাবে পাস করানো হবে না। শর্মিষ্ঠার জমা দেওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে আমরা দেখতে পাই ২০২১ সালে শর্মিষ্ঠা ও তার মা প্রিন্সিপালের কাছে তার প্রাপ্য রেজাল্ট চাইতে গেলে শুভঙ্কর ত্রিপাঠি কলেজের পুরুষ সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে শর্মিষ্ঠা এবং তার মায়ের সাথে এক বর্বরোচিত আচরণ করেন। আরেকটি অডিও ক্লিপে শোনা যায় সরশুনা কলেজের টি এল স্যার বলেছেন যে শর্মিষ্ঠার নাম্বার অত্যন্ত ভালো, তাও কোন এক অজানা কারণে প্রিন্সিপাল শর্মিষ্ঠার নাম্বার ইউনিভার্সিটিতে পাঠাতে দিচ্ছেন না তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। অফিস স্টাফের অডিও ক্লিপিং থেকে শোনা যায়, যেহেতু প্রিন্সিপাল শর্মিষ্ঠার ওপর অফেন্ডেড, তাই তিনি শর্মিষ্ঠার পরীক্ষার নাম্বার ইউনিভার্সিটিতে পাঠাবেন না। এর মধ্যে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী শর্মিষ্ঠার প্রায় দুটো বছরের এডুকেশন কেরিয়ার থেকে নষ্ট হয়ে যায়। শর্মিষ্ঠা কলকাতা ইউনিভার্সিটি সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দায়ের করতে থাকেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের ছাত্র ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস কমিশন, উইমেন্স রাইট কমিশন শর্মিষ্ঠার বিরুদ্ধে চলতে থাকা এই ঘৃণিত চক্রান্তকে উপরে ফেলতে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অবশেষে ২০২২-এ শর্মিষ্ঠা কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন এবং মাত্র দুটো শুনানির পর মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রায় দেন যে দুই সপ্তাহের মধ্যে সুরশুনা কলেজকে শর্মিষ্ঠার প্রাপ্ত নাম্বার পাঠাতে হবে। সেইমতো সেই রায়ের ভিত্তিতে মেধাবী বিপন্ন ছাত্রীটি গতকাল তার বিএসসি রেজাল্ট হাতে পান।
যদিও সরশুনা কলেজের প্রিন্সিপালের জন্য তার দুটো বছর জীবন থেকে নষ্ট হয়ে যায়।