রাজ্যে নির্বাচন-ফল ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির দায়িত্ব বাড়াল
তায়েদুল ইসলাম ,প্রতিবেদন :-
রাজ্যে নির্বাচন-ফল বিজেপি বিরোধী ভোটারদের স্বস্তি দিল। বিজেপি বিরোধী সমস্ত শক্তিই কিন্তু সন্তুষ্টিতে ভুগছেন না। একটা অংশ তৃণমূলের এই বিজয়কে দেখছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের প্রস্তুতির জন্য হাতে কিছুটা সময় পাওয়া। সুযোগ পাওয়া। সত্য হল ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা সম্ভব হল। কিন্তু সম্পূর্ণ দূরে রাখা সম্ভব হল না। রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা গেল মানে এই নয় যে, বিজেপির
চালিকা শক্তি আরএসএস নিয়ন্ত্রিত সংঘপরিবার এর কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাবে। তা হলে বলা ভাল আরএসএস বা সংঘপরিবারের রাজনৈতিক শাখার বা বিজেপির অগ্ৰযাত্রার গতিকে শ্লথ করে দেওয়া গেল। কিন্তু অন্যান্য শাখার কাজকর্মে এর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বরং ইতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। ফলে এখন থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিকে একই সাথে দুটো কাজ করতে হবে। একদিকে বিজেপির রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে দূরে রাখাকে স্থায়ী করতে হবে এবং বিজেপির বর্তমান শক্তিকে শূন্য করতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাকে পরাজিত করার লড়াই শুরু করতে হবে।
কিন্তু একটি মূল প্রশ্ন কেউই আলোচনা করছেন না। প্রশ্নটি হল এই নির্বাচনে বিজেপির শক্তি গত বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে বাড়ল না কমল। সবাই বলছে বিজেপি পরাজিত হল। এই মূল্যায়নের মধ্যে ত্রুটি আছে। বিষয়টি আমরা এই ভাবে দেখার চেষ্টা করি। এক ব্যক্তি দুশো মিটার দূরে গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দৌড় আরম্ভ করল। তিন মিটার ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে এসেছে। সেখান থেকে পুনরায় দৌড় শুরু করল এবং সাতাত্তর মিটার দূরে তাকে থামিয়ে দেওয়া গেল। এখন প্রশ্ন হল ঐ ব্যক্তি সফল হল , না ব্যর্থ হল। ব্যর্থ তো একদমই হয়নি। পুরো সফল হয়নি বটে কিন্তু সফলতার পথে অনেকটা এগিয়ে গেল। বিজেপি লক্ষ্য ঠিক করেছিল ,বলা ভাল কল্পনা করেছিল বা স্বপ্ন দেখেছিল দুশো আসনে জয়ী হবে। দুশো আসন বাস্তব নয়। গত নির্বাচনে তিনটি আসনে জয়ী হয়েছিল । এই তিনটি আসন বাস্তব। এখন প্রশ্ন হল বাস্তব ধরে জয় পরাজয় হিসেব করব, না স্বপ্ন ধরে জয় পরাজয় এর হিসেব করব। আসন সংখ্যা তিন থেকে সাতাত্তর হল । অর্থাৎ আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৬% । মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা হিসেবে বৃদ্ধি পেয়েছে ঊনত্রিশ ভাগ। ২০১৬ নির্বাচনে ভোট পেয়েছিল ১০%। এবার পেয়েছে ৩৯%। ৭০ টির বেশি আসনে সামান্য ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। বলে বিজেপির বৃদ্ধি হয়েছে এবং লক্ষ্য অর্জনে এগিয়েছে ৩৮.৫% । এর ফলে তিনটি সমস্যা তৈরি হবে। গত সপ্তাহে একটি লেখায় বলেছি বিজেপির ভোট একটিও বেশি হলে তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। ব্যপক সংখ্যক ভোট বেশি পেয়েছে। তাই সমাজে ব্যপক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। ইতিমধ্যেই তা শুরু করে দিয়েছে। দাঙ্গা লাগানোর মরিয়া চেষ্টা করছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির সামনে জটিল চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। কিভাবে ওদের ফাঁদে পা না দেওয়া এবং রাস্তায় প্রতিরোধ করার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে। দ্বিতীয় কাজটি করবে এই উত্থানকে কাজে লাগিয়ে সংঘপরিবারের প্রতিটি শাখা সংগঠনকে মজবুত করবে। সংখ্যা ও গুণগত মান উভয়
দিকেই। যেমন জনসংঘ ৭৭ সালে জনতা পরিবারের সদস্য হিসেবে কেন্দ্রিয় সরকারের অংশ হয়। সরকারের অংশ হওয়ার ফলে সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে গোটা দেশে আরএসএস ও সংঘপরিবার এর ব্যপক প্রচার প্রসার করে ফেলে। এবারেও পশ্চিম বাংলায় তাই ঘটবে। তৃতীয় যে কাজটি করবে তা হচ্ছে বিজেপি একমাত্র বিরোধী দল হওয়ায় সরকারকে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে দেবে না। মুসলিম ও দলিতদের উন্নয়ন মূলক সব কাজেই বাঁধা দেবে। হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াই এর উপাদান ও কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে বিজেপির সমর্থক প্রায় সকলেই ভোট দিয়েছেন। যারা ভোট দেননি তাদের প্রায় সকলেই বিজেপি বিরোধী। ফলে মোট ভোটারের ৬০% এখনো পর্যন্ত বিজেপি বিরোধী। যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বিজেপি তথা আরএসএস এর কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু জানেন না। একটা অংশ কিছুটা জানলেও একমত নন। তারা শুধুমাত্র টাকার জন্য অথবা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ছড়ানো ঘৃণা বিদ্বেষ এর বশবর্তী হয়ে ভোট দিয়েছেন। এই অংশটির উপর পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে অংশটিকে আরএসএস,সংঘপরিবার ও বিজেপির খপ্পর থেকে বের করে আনা কঠিন কাজ নয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিকে এই মুহূর্তে এই কাজটিই করতে গুরুত্ব দিয়ে নিবিড় ভাবে।