ওয়াকফ সংশোধনী বিল সহ একাধিক ইস্যুতে জমিয়তের মহা সমাবেশে স্তব্ধ গোটা শহর কলকাতা

Spread the love

ওয়াকফ সংশোধনী বিল সহ একাধিক ইস্যুতে জমিয়তের মহা সমাবেশে স্তব্ধ গোটা শহর কলকাতা।

মোমিন আলি লস্কর কলকাতা:-

যখন কোন মুসলমান তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি আল্লাহর নামে ধার্মিক, দাতব্য ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে তখন ঐ জাতীয় সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে।
ওয়াকফ বোর্ড বর্তমানে ভারত জুড়ে 9.4 লক্ষ একর বিস্তৃত 8.7 লক্ষ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে যার আনুমানিক মূল্য 1.2 লক্ষ কোটি টাকা। বিশ্বের বৃহত্তম ওয়াকফ হোল্ডিং ভারতে রয়েছে।ভারতীয় রেলওয়ের পরে ওয়াকফ বোর্ড ভারতের বৃহত্তম জমির মালিক।

ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলি সমাধানের জন্য ওয়াকফ অ্যাক্ট, 1995 সংশোধন করা হয়। ভারতের ওয়াকফে্র ইতিহাস দিল্লি সালতানাতের প্রথম দিকের দিনগুলিতে খুঁজে পাওয়া যায়। সুলতান মুইজুদ্দিন সাম ঘোর মুলতানের জামে মসজিদের পক্ষে দুটি গ্রাম উৎসর্গ করেছিলেন এবং এর প্রশাসন শাইখুল ইসলামের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ভারতে দিল্লি সালতানাত এবং পরবর্তীতে ইসলামি রাজবংশের বিকাশের সাথে সাথে ভারতে ওয়াকফ্ সম্পত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।19 শতকের শেষের দিকে ভারতে ওয়াকফ্ বিলোপের জন্য একটি মামলা করা হয়েছিল । 1913 সালের মুসলিম ওয়াকফ বৈধকরণ আইন ভারতে ওয়াকফে্র প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করেছিল।ওয়াকফ্ অ্যাক্ট, 1954 – ওয়াকফ্ শুধুমাত্র স্বাধীনতা পরবর্তী শক্তিশালী হয়েছে। 1954 সালের ওয়াকফ্ আইনটি ওয়াকফে্র কেন্দ্রীকরণের দিকে একটি পথ প্রদান করে। সেন্ট্রাল ওয়াকফ্ কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা 1964 সালে ভারত সরকার 1954 সালের এই ওয়াকফ্ আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কেন্দ্রীয় সংস্থাটি বিভিন্ন রাজ্য ওয়াকফ্ বোর্ডের অধীনে কাজ তত্ত্বাবধান করে যা ওয়াকফের ধারা 9(1) এর বিধানের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আইন, 1954।
ওয়াকফ অ্যাক্টকে 1995 সালে মুসলমানদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছিল, যা এটিকে একটি ওভাররাইডিং আইনে পরিণত করেছিল। ওয়াকফ অ্যাক্ট, 1995 ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির (ধর্মীয় এনডাউমেন্ট) প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রণীত হয়েছিল। এটি ওয়াকফ কাউন্সিল, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতা এবং কার্যাবলী এবং মুতাওয়াল্লির দায়িত্বগুলির জন্য প্রদান করে।2013 সালে সংশোধনী – ওয়াকফ্ ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করতে 2013 সালে আইনের কিছু বিধান সংশোধন করা হয়েছিল।ওয়াকফ আইন, 1995 সংশোধিত হিসাবে 8 ডিসেম্বর রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছিল, 2023।
ওয়াকফের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানা ওয়াক্ফ্ থেকে আল্লাহর কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং আল্লাহর কাছ থেকে সম্পত্তি ফেরত নেওয়া যায় না, তাই একবার কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ হয়ে গেলে তা সর্বদা ওয়াকফ্ থাকবে, এটি অপরিবর্তনীয় হয়ে যাবে। একবার কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ ঘোষণা করা হলে তা চিরকালই থাকে। বেঙ্গালুরু ঈদগাহ মাঠ, 1850 সাল থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে দাবি করা হয়েছে। সুরাট মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বিল্ডিং, মুঘল যুগে হজের সময় সারাই হিসাবে ঐতিহাসিক ব্যবহারের কারণে দাবি।
সব ইসলামী দেশে ওয়াকফ সম্পত্তি নেই। তুরস্ক, লিবিয়া, মিশর, সুদান, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, তিউনিসিয়া এবং ইরাকের মতো ইসলামিক দেশগুলিতে ওয়াকফ নেই। ভারতে, ওয়াকফ বোর্ডগুলি শুধুমাত্র বৃহত্তম শহুরে জমির মালিক নয়, তাদের আইনগতভাবে তাদের রক্ষা করার জন্য একটি আইনও রয়েছে।ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত 356, 051টি ওয়াকফ এস্টেট রয়েছে।
ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত 872,328টি স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত 16, 713টি অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।ওয়াকফ্ বোর্ডের এখন পর্যন্ত 330000টি ডিজিটালাইজড রেকর্ড রয়েছে।মোকদ্দমা এবং অব্যবস্থাপনা: ওয়াকফ আইন, 1995 এবং এর 2013 সংশোধনী অকার্যকরতার জন্য সমালোচিত হয়েছে।

ওয়াকফ আইনের ধারা 40 ব্যাপকভাবে একটি সম্পত্তি অধিগ্রহণ এবং সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করার জন্য অপব্যবহার করা হয়েছিল। এটি শুধুমাত্র বিপুল সংখ্যক মামলাই নয়, সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্যও সৃষ্টি করেছে।

ওয়াকফ্ আইন দেশের শুধুমাত্র একটি ধর্মের ধর্মীয় সম্পত্তির জন্য একটি বিশেষ আইন, যখন অন্য কোনো ধর্মের জন্য এই ধরনের কোনো আইন নেই।প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল সহ একাধিক ইস্যুতে জমিয়তের মহা সমাবেশে স্তব্ধ গোটা শহর কলকাতা।
বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত ওয়াকফ্ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার, প্যালেস্টাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে কুশ্রী মন্তব্য,জাতীয় সংহতি ও ঐক্যকে সূদৃঢ় করার সহ একাধিক দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়তে উলামার হিন্দের ডাকে মহা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হল কলকাতায়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজ্য জমিয়তে উলামার হিন্দের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরী । এদিনের সভায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ জমিয়তের কর্মী সমর্থকরা উপস্থিত হয়ে গোটা শহর কলকাতাকে স্তব্ধ করে দেয়। সভাস্থল ও তার পার্শ্ববর্তী ময়দানে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার জমিয়েত হিন্দ সমার্থকদের ফিরে যেতে দেখতে পাওয়া যায়। সভায় বক্তব্য রাখেন মাওলানা সিদ্দীকুল্লা চৌধুরী। মাওলানা সিদ্দীকুল্লা চৌধুরী বলেন -আজ ঐতিহাসিক দিন যা আমার কাছে জাতির ঐক্য সাধন দিনের সমস্যা উদ্দেশ্যে এক জায়গায় জমায়েত হতে পেরেছি এটা আল্লাহর কাছে লক্ষ লক্ষ কোটি শুকরিয়া তিনি বলেন ত্বহা ছিদ্দিকী বলেছেন আমরা ধৈর্য ধারণ করি। আমাদের আন্দোলন সারা রাজ্য জুড়ে চলবে। তিনি দাবি করেন আমাদের (মুসলমানদের) বাদ দিয়ে ভারতবর্ষ চলবেনা , চলবেনা,। পশ্চিমবঙ্গের তিন টি খুঁটি, তার মধ্যে মুসলমানরা একটি খুঁটি। আমরা হলাম বাংলার খুঁটি ।এই সভা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তিনি সভা করবেন বলে জানান।
ত্বহা ছিদ্দিকী এই সভা থেকে ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন প্রথম আমি বলবো বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী কে ক্ষেপ্তার করা হয়েছে যদি অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয় তার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি । বাংলাদেশের মানুষের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ও রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানালেন সাম্প্রদায়িকতার বিভাজন যাতে না ঘটে তার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি গদি মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন কিছু পা চাটা গদি মিডিয়া আছে তারা দিন রাত মুসলমানদের কিভাবে জঙ্গি বানানো কিভাবে সাম্প্রতিকতা বানানো যায় সেই চেষ্টা করছে। কিন্তু যাদের টুপি মাথায় যাদের মুখে দাড়ি আছে যারা নামায আদায় করে এরা কোনদিন জঙ্গি হয়না,হযনা, কখনো হবেনা। তিনি বলেন যার আল্লাহ আছে তার সব আছে ।আজ 28শে নভেম্বর সভা হচ্ছে আগামী 30 নভেম্বর সভা হবে । সবশেষে আমি ফাইনাল খেলা খেলবো 19 শেষ ডিসেম্বর।তিনি বিধায়ক ও সাংসদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। কিন্তু আমরা কোন লুকোচুরি খেলা খেলতে দেনা।ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা কে হিন্দু,কে মুসলিম,কে শিখ এটাই জানতাম না।এই বিজেপি সরকার ক্ষমতা আসার পর থেকে এই বিভাজন সরকারের একটা ইস্যু । আমি কেন্দ্রীয় সরকারের জানিয়ে দিতে চাই তুমি যতই খেলাই খেলো না আমরা ভারতবর্ষের হিন্দু মুসলমান বিশেষ করে বাংলার হিন্দু মুসলমানদের ঐক্য একান্ত ভ্রাতৃত্ব ভালোবাসা শুধু আছে যা চিরকাল থাকবে। কখনো ফাটল ধরাতে পারবেন না। তিনি গদি মিডিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন পা চাটা গদি মিডিয়া, তোমরা যত চেষ্টা করো না যেন বাংলাদেশ কে ইস্যু করে পশ্চিমবাংলার বিভাজনের চেষ্টা করছো তোমাদেরকে জ্যান্ত পুঁতে মেরে দেবো।সভায় উপস্থিত ছিলেন
আহমাদ হাসান ইমরান, মুফতি আব্দুস সালাম, মাওলানা মঞ্জুর আলম, পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, পীরজাদা খুবাইব সিদ্দিকী, মাওলানা আবুল কাসেম, ক্বারী ফজলুর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলী, মুফতি ইব্রাহিম কাসেমী, মাওলানা বদরুল আলম, মুফতি ইমদাদুল ইসলাম, ক্বাজী আরিফ রেজা, হাফেজ নজরুল ইসলাম, মুফতি ম‌ইদুল ইসলাম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আরশাদ আলী খান, মুফতি লিয়াকত আলী, মাওলানা আরিফুল্লাহ চৌধুরী- প্রত্যেক জেলার সভাপতি ও সম্পাদকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.