নিউজ ডেস্ক :- নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে এবার ডিজিটাল মিডিয়ার পোর্টাল এবং ইউ টিউব নিউজ চ্যানেলগুলি সঙ্গবদ্ধ হওয়ার প্রয়াসে এক ছাদের নিচে আসার জন্যে একটি ফোরাম গড়ে তুলল, যার নাম দেওয়া হয়েছে West Bengal News Portal & You Tube Channel Forum (WBPYCF) এই ফোরাম ডিজিটাল নিউজ পোর্টাল, বা ইউ টিউব নিউজ চ্যানেলগুলির এবং তাদের সাংবাদিকদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার কাজ করবে। এতদিন ডিজিটাল মিডিয়ার কর্মী বা সাংবাদিকদের কোনো সংগঠন ছিল না।সম্ভবত এই প্রথম ভারতে ডিজিটাল মিডিয়ার কর্মীদের নিয়ে কোনো সংগঠন তৈরি করা হল। এই পর্যন্ত থেকেই সাংবাদিক এবং পোর্টাল মালিকরা যোগ দিয়েছেন।
একটা সময় ছিল যখন মানুষ সংবাদ শুনত রেডিওতে , অথবা পরের দিনের খবরের কাগজে পাওয়া যেত আগের দিনের সংবাদ। মফস্সল শহরে সেই সংবাদ পত্র পাওয়া যেত পরের দিন সন্ধ্যেবেলায়। ততক্ষণে সেই সংবাদ যথেষ্ট বাসি হয়ে যেত। এরপর এল টেলিভিশন, যা সংবাদকে জলজ্যান্ত করে দর্শকের সামনে নিয়ে আসল। টেলিভিশন এসে যাওয়ায় রেডিওর সংবাদ এবং খবরের কাগজগুলি ব্যবসায়িক ধাক্কা খেয়েছিল প্রবলভাবে।
বর্তমান যুগে এসে গিয়েছে ডিজিটাল মিডিয়া। গোটা দুনিয়ায় যখন যে ঘটনা ঘটছে, তা নিমেষে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। এখন প্রায় প্রতিটা মানুষের হাতে চলে এসেছে মোবাইল ফোন। এই মোবাইল ফোন মানুষের নিকট আত্মীয়ের চেয়ে কম কিছু নয়। মানুষ এখন স্মার্ট ফোনের ওপর এক রকম নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। হাতের মুঠো ফোন এখন মানুষের কাছে নিজস্ব এক জগৎ। সেই জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে অন্য কোনো কিছুতে মন বসানোর সময় কই ? ঠিক এই জায়গাটিতেই সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মিডিয়া সংবাদমাধ্যমগুলো।কেননা ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে হাতে ধরা মোবাইল ফোনেই গোটা দুনিয়ার খবর এসে পৌঁছে যাচ্ছে নিমেষে।
গোটা বিশ্বে যখন যা কিছু ঘটছে, নিমেষে মুঠো ফোন বা কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে চলে আসছে সব মানুষের কাছে। গোটা জগৎ যেন হাতের তালুতেই বন্দী হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। মানুষ এখন আর টেলিভিশনের সামনেও যেন বসে থাকতে চাইছে না। তাছাড়া অন্য সমস্যাও তো আছে ! পরিবারে হয়ত একটাই টেলিভিশন, সেখানে পরিবারের কোনো সদস্য হয়ত চাইছেন খেলা দেখতে, কেউ চাইছেন সিনেমা দেখতে, কেউ সংবাদ দেখতে চাইছেন, আবার কেউ চাইছেন সিরিয়াল দেখতে। কিন্তু টেলিভিশনে চ্যানেল তো একটাই চলবে, তাই বাকিরা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। অথচ হাতে ধরা মুঠোফোনের মাধ্যমে সবটাই সম্ভব। যখন তখন সম্ভব। অতিরিক্ত খরচ না করেও সম্ভব।
তাছাড়া মানুষ এখন আর ‘বাসি’ সংবাদ গ্রহণ করতে চাইছেন না। ডিজিটাল মাধ্যমের কল্যাণে এখন যখনকার ঘটনা, তখনই দেখে নিতে চাইছেন। যার জন্যে বর্তমানে সাধারণ মানুষের কাছে ডিজিটাল মিডিয়া নিউজ অত্যন্ত গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেছে। সাধারণত ডিজিটাল মিডিয়ায় কয়েকরকমভাবে নিউজ পাওয়া যায়। কোনো নিউজ পোর্টাল থেকে, ইউ টিউব অথবা আবার নিউজ ফেসবুক পেজ থেকে। এই মুহূর্তে ভারতে কয়েক হাজার ডিজিটাল নিউজ মিডিয়া রয়েছে। এই সংখ্যাটা এত বেশি, যে নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। কে কত আগে সঠিক নিউজ নিখুঁতভাবে মানুষের কাছে নিউজ পৌঁছে দিতে পারবে, তার প্রতিযোগিতা। এই সুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে সংবাদের যে কোয়ালিটি, সেটাও উন্নত হয়ে চলেছে প্রতিদিন। এই মুহূর্তে ডিজিটাল মিডিয়ার গ্রহণ যোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা আকাশ ছুয়েঁছে।
সংবাদ পরিবেশনের এই অত্যাধুনিক পরিবেশনা এবং এই প্রতিযোগিতায় একটু একটু করে পিছিয়ে পড়ছে টেলিভিশন এবং সংবাদপত্র মিডিয়া। বিশ্বের বহু দেশেই প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা বন্ধ হওয়ার মুখে। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া এখন ধুঁকছে। টিওআরপি কমে যাচ্ছে টেলিভিশনের সংবাদ অনুষ্ঠানগুলির। এর ফলে বিজ্ঞাপনের মূল্য কমে যাচ্ছে এই মিডিয়াগুলোতে। উল্টোদিকে অল্প খরচে ডিজিটাল মিডিয়া শুধু যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে দিচ্ছে তাই নয়, সেই বিজ্ঞাপনগুলিকে নিয়েও আবার বিভিন্ন মানুষের মধ্যে আলাদাভাবে প্রাচার করে দিচ্ছে, যাকে Social Media Optimisation বলা হয়। আর এখানেই আরও পিছিয়ে পারছে টেলিভিশন এবং প্রিন্ট মিডিয়াগুলি। ডিজিটাল মিডিয়াতে আছে আরও অনেক রকম সুযোগ সুবিধা, যেগুলো অন্য মিডিয়া দিতে পারছে না।
ভারত সরকার বা রাজ্য সরকারগুলি এখনো পর্যন্ত এই ডিজিটাল মিডিয়াগুলিকে কোনো নিবন্ধীকরণ করতে পারে নি, যার জন্যে এই ডিজিটাল মিডিয়াগুলি সংবাদ পরিবেশন করার সময় লাগামছাড়া এবং স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারছে। যেটা দর্শকরা আরও ভালভাবে গ্রহণ করছে। যদিও সরকার ইতিমধ্যেই এই ডিজিটাল মিডিয়াকেও নিবন্ধিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। হয়ত আগামী কিছুদিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিবন্ধীকরণ হয়েও যাবে ডিজিটাল মিডিয়াগুলোতে।. কিন্তু ডিজিটাল মিডিয়ার এই দূরান্ত উত্থান মেনে নিতে পারছে না প্রিন্ট এবং টেলি মিডিয়াগুলি। কারণ ডিজিটাল মিডিয়ার জন্যেই তাদের ব্যবসায়ে বড়সড় ধাক্কা লেগে গিয়েছে।
বিভিন্ন পরিসরে কাজ করতে গিয়ে সেই ক্ষোভের আঘাত বেশ কিছুদিন থেকেই লাগতে শুরু করেছে ডিজিটাল মিডিয়ায় কর্মরত লক্ষ লক্ষ সাংবাদিক ও কর্মীদের গায়ে। ডিজিটাল মিডিয়া নিয়ে নানারকম কুৎসা করা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিচারকের আসনে বসে রয়েছেন সেই দর্শক। মিডিয়ার কোন অংশকে তাঁরা প্রাধান্য দেবেন, আর কোন অংশকে দেবেন না, সেটা সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যাপার। আর এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে চলেছে ডিজিটাল মিডিয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তো দেশকে ডিজিটাল বানাতে চেয়েছেন, তাই না !