ওয়েব ডেস্ক: -যোগীরাজ্যে ভাঙা পড়ল মসজিদ । অবৈধভাবে মুসলিমদের উপাসনাস্থল ভাঙা হয়েছে বলে সরব হয়েছে উত্তরপ্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম ল’বোর্ডও। সোমবার রাতে উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি জেলার একটি মসজিদ ভাঙে। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, মসজিদটি অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। উপযুক্ত নথিও দেখাতে পারেনি মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তাই সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
রাম সনেহি ঘাটের লোকালয়ে গরিব নমাজ মসজিদ ছিল। যদিও প্রশাসনের দাবি, ওই নির্মাণটি বেআইনি। মসজিদটি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলাও চলছিল। গত মার্চ মাসে এ নিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে নোটিসও দেয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু মসজিদ কর্তৃপক্ষ তার জবাব না দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে বলে খবর। এদিকে ১৭ মে ওই নির্মাণ ভেঙে ফেলার অনুমতি পায় প্রশাসন। এর পরই ভেঙে ফেলা হয় মসজিদ।
এ প্রসঙ্গে অল ইন্ডিয়া মুসলিম ল বোর্ডের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মৌলানা খালিদ সইফুল জানিয়েছেন, “কোনওরকম আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই পুলিশের উপস্থিতিতে গরিব নমাজ মসজিদ গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” তাঁদের দাবি, “মসজিদটা নিয়ে কোনও সমস্যাই ছিল না। বরং মসজিদটি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডে নথিভুক্ত রয়েছে। রাম সনেহি ঘাটের সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে নথি দেখতে চেয়েছিল মার্চ মাসে। যার পালটা এলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।” মসজিদ ভেঙে ফেলার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, প্রশাসনের উচিৎ মসজিদ তৈরি করে সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া। যদিও বেআইনিভাবে মসজিদ ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করেছে যোগী প্রশাসন। তাঁদের দাবি, আদালতের নির্দেশেই এই কাজ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
তবে অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এই মসজিদ ভাঙার তীব্র নিন্দা করে গোটা ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে।
বরাবাঁকির স্থানীয় মুসলিমরাও বলছেন গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই মসজিদে লাগাতার নামাজ পড়া হয়ে আসছিল।
বরাবাঁকির রাম সনেহি ঘাট তহসিলে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবনের লাগোয়া চত্ত্বরেই ছিল গরিব নেওয়াজ মসজিদ – কিন্তু মাসদুয়েক আগে জেলা প্রশাসন সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর থেকে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়।
বরাবাঁকির জেলা প্রশাসক আদর্শ সিং এরপর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ওই অবৈধ স্থাপনা কেন ভেঙে ফেলা হবে না তার কারণ দেখাতে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ দিয়েছিলাম গত ১৫ মার্চ।”
“কিন্তু ওখানে বসবাসকারীরা শুনানিতে না-এসে সেখান থেকে পাট গুটিয়ে চলে যান। এরপর ২রা এপ্রিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনৌ বেঞ্চের রায়েই প্রমাণিত হয়ে যায় যে ওই কাঠামো অবৈধ।”
আদালতের আদেশেই কাঠামোটি ভাঙা হয়েছে বলে প্রশাসন দাবি করলেও গরিব নেওয়াজ মসজিদের খাদেম রমজান আলি বলছেন তাদের বক্তব্য পেশ করার কোনও সুযোগই দেওয়া হয়নি।
তিনি জানাচ্ছেন, “গত ১৭ই মার্চ আমরা নোটিশের জবাব দিতে গেলেও কাছারি তা গ্রহণ করেনি। এরপর ওরা জেসিবি এনে আমাদের মসজিদের গেট ভেঙে ওখানে রাতারাতি দেওয়াল তুলে দেয়।”
“তারপর থেকেই বলা শুরু হয়, এটা নাকি কোনও মসজিদই নয়! অথচ আমাদের পূর্বপুরুষরা সেই কবে ব্রিটিশ আমল থেকে এই মসজিদ চালাচ্ছেন, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডেও এটি নথিভুক্ত।”
“অথচ সেই মসজিদের চারপাশে ব্যারিকেডে ঘিরে, পুলিশ মোতায়েন করে আমাদের সেখানে ঘেঁষতেও দেওয়া হচ্ছিল না।”
গতকাল মসজিদটি ভেঙে ফেলার পর অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ওই মসজিদটি নিয়ে কখনো কোনও বিতর্ক ছিল না এবং সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সেটি ধূলিসাৎ করা হয়েছে।
সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মৌলানা খালিদ সাইফুল্লা রেহমানি আরও বলেছেন, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিমরা সেখানে নামাজ পড়ে আসছেন – যে বক্তব্য নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও কোন দ্বিমত নেই।
বরাবাঁকির প্রবীণ শের আলি আজন্ম এই গরিব নেওয়াজ মসজিদেই নামাজ পড়েছেন – কিন্তু গত দুমাস ধরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তার হিন্দু প্রতিবেশী বেণী শর্মাও জানাচ্ছেন, “সেই ছোটবেলা থেকে এখানে কখনো নামাজ পড়া বন্ধ হয়েছে বলে দেখিনি।”