নিউজ ডেস্ক:- রাম মন্দির ইস্যুতে কংগ্রেসের অবস্থান কী? দীর্ঘদিন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যুতে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো অবস্থান নিয়ে এসেছে কংগ্রেস। কখনও এর স্পষ্ট বিরোধিতা করেনি, আবার রাজীব গান্ধী ছাড়া আর কোনও কংগ্রেস নেতা প্রকাশ্যে এর সমর্থনও করেননি। কিন্তু অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হতেই এই মাঝামাঝি অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিল দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পর এবার খোদ রাহুল গান্ধী ভগবান শ্রীরামের বন্দনায় ব্রতী হলেন।
কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর (Rajiv Gandhi ) ঘনিষ্ঠ কমল নাথের দাবি, কংগ্রেস শুরু থেকেই রাম মন্দিরের পক্ষে। রাজীব গান্ধীর আমলেই প্রথমবার মন্দিরের শিলান্যাস হয়। সাধারণ মানুষের জন্য মন্দিরের দরজাও খুলে দিতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এক সর্বভারতীয় সাক্ষাৎকারে কমল নাথ (kamal Nath) বলেছেন,”আমি শুরু থেকেই বলছি, মন্দির নির্মাণকে সমর্থন করি। ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে সবার সম্মতিতে এভাবে মন্দির নির্মাণ সম্ভব। ভুলে গেলে চলবে না যে ১৯৮৬-তে রাম মন্দিরের দরজা কিন্তু রাজীব গান্ধীই খুলেছিলেন। ১৯৮৯ সালেই একরকম ভূমিপুজো হয়ে গিয়েছিল। রাজীব ভোটের প্রচারেও রামরাজ্যকেই স্লোগান করেছিলেন।”
এমনিতে এতদিন কংগ্রেস রাম মন্দির ইস্যুটি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে ‘বিচারাধীন বিষয়’ বলে। কিন্তু ভূমিপুজোর দিন দুই আগে থেকে হঠাৎ মন্দিরের সমর্থনে সুর চড়াতে থাকেন কংগ্রেস নেতারা। মঙ্গলবার রামভক্তির সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ । তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “আমি শুরু থেকেই বলছি, মন্দির নির্মাণকে আমরা সমর্থন করি। ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে সবার সম্মতিতে এভাবে মন্দির নির্মাণ সম্ভব।” কমল নাথের পর খোদ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাম মন্দিরের সমর্থনে মুখ খোলেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন,’জাতীয় ঐক্যের উৎসব হয়ে উঠবে রাম মন্দিরের এই ভূমিপুজো।’ কংগ্রেস নেতা শশী থারুরকেও আজ জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে দেখা গিয়েছে।
প্রিয়াঙ্কার পর মন্দির নির্মাণ নিয়ে মুখ খুললেন দীর্ঘদিন ধরে এই ইস্যুতে নীরব থাকা রাহুল গান্ধী। এক টুইটে প্রভু রামের ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা গেল প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিকে। সেই সঙ্গে বর্তমান মোদি সরকারকে সুক্ষ কটাক্ষেও বিঁধলেন রাহুল। টুইট বার্তায় কংগ্রেস (Congress) নেতা বললেন,”মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম সর্বোত্তম গুণের স্বরূপ। আমাদের মনের গভীরে বসে থাকা মানবতার মূল ভাবনা। রাম মানে প্রেম, তিনি কখনও ঘৃণা করবে পারেন না। রাম মানে করুণা। তিনি কখনও নিষ্ঠুর হতে পারেন না। রাম মানে ন্যায়। তিনি কখনও অন্যায়ের মধ্যে অবস্থান করতে পারেন না।”
ইতিহাস বলছে, ১৯৮৬ সালে রাজীব গান্ধীর আমলেই প্রথম খোলা হয় বিতর্কিত ইমারতের দরজা। উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর সিংকে ওই নির্মাণের দরজা খোলার জন্য রাজীবই রাজি করান। তখন থেকেই রামলালার দর্শন করার অনুমতি পাওয়া শুরু করে হিন্দুরা। এর আগে ১৯৮৫ সালে রাজীবের অনুরোধেই প্রথমবার দূরদর্শনে দেখানো শুরু হয় রামায়ণ। এরপর ১৯৮৯ সালে নিজের নির্বাচনী প্রচারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দেন। এবং সে বছরই রাজীব বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে রাম মন্দিরের শিলান্যাসের অনুমতি দেন। ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর ঐতিহাসিকভাবে রামজন্মভূমির অদূরেই মন্দিরের শিলান্যাস করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেই অনুষ্ঠানে রাজীব নিজে উপস্থিত না থাকলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুটা সিংকে নিজের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিলেন। যদিও তারপরে আদালতের গেরোয় আর মন্দির নির্মাণের প্রক্রিয়া এগোতে পারেনি। কিন্তু রাজীবের তৎপরতায় যে মন্দিরের প্রথম শিলান্যাস হয়েছিল, তা অস্বীকার করে না হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিও।