জয়নাল আবেদি ,অয়ন বাংলা :- গোটা বাংলা জুড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভোগাচ্ছে শাসক দলকে।তাই লোকসভা নির্বাচনে।,এই মুহূর্তে কোন ধরণের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না’। শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই হুঁশিয়ারির পর বাঁকুড়ার দক্ষিণের জঙ্গলমহল থেকে উত্তরের ইন্দাস বিধানসভা এলাকার দলীয় নেতৃত্ব অনেকটাই সাবধানী।
এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণেই সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গল মহলে বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছিল শাসক শিবিরের। তার মধ্যে শুধুমাত্র তিন তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত সিমলাপাল ব্লকেই। যার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন তৃণমূল ব্লক সভাপতি সনৎ দাশকে সরিয়ে এলাকার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রামানুজ সিংহ মহাপাত্রকে ওই পদে বসানো হয়।
একদিকে বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত ক্যারিশমা৷ অন্যদিকে ব্লক সভাপতি হিসেবে সাধারণ কর্মী সমর্থকদের কাছে রামানুজ সিংহ মহাপাত্রের গ্রহণযোগ্যতা এখানে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সামাল দিতে অনেকটাই কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এক সময়ে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জর্জরিত এই জেলায় দলের তরফে ‘অবজারভার’ হিসেবে পাঠান হয় তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
প্রায় প্রতি মাসেই একবার হলেও জেলা সফরে আসেন তিনি। বার বার দলের সব পক্ষকে ডেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। তার পরেও ইন্দাসে বিধায়ক গুরুপদ মেটে বনাম ব্লক সভাপতি রবিউল, বিষ্ণুপুরে পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বনাম বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্যের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা সকলেরই জানা। কিন্তু দলের জেলা ‘অবজারভার’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কড়া হুঁশিয়ারি’র পর সেই ঘটনা এখন আর সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি।
আসন্ন লোকসভা ভোটে জেলার দুই কেন্দ্রের মধ্যে বিষ্ণুপুর নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয়নি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে। এলাকায় কাজের মানুষ, কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা৷ তাঁকে প্রার্থী করে ভোটের হাওয়া এখনই নিজেদের দিকে অনেকটা টেনে নিয়েছে শাসক শিবির।
শুধু তৃণমূল নয়, দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছেই সমান গ্রহণযোগ্য এই মানুষটি। সেকারণে তাঁর জেতার সম্ভাবনা প্রায় একশো শতাংশ। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আর তাছাড়া ভোট ঘোষণার আগে থেকেই সব স্তরের দলীয় নেতা, কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন শ্যামল সাঁতরা নিজেই৷
কিন্তু ‘জঙ্গলমহল’ যে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে সেই বাঁকুড়ায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই সাবধানী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে ঘাস ফুল শিবিরকে। একে এই লোকসভা কেন্দ্রের ‘বিদায়ী’ সাংসদ চিত্রাভিনেত্রী মুনমুন সেনের বিগত পাঁচ বছরের ‘পারফরম্যান্স’ মোটেই ভালো নয়। গত দুই পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গল মহলে ভালো ফল করেছে বিজেপি। এক সময়ের ‘লাল দুর্গ’ জঙ্গলমহলে বামেরাও শক্তিবৃদ্ধি করতে শুরু করেছে।
বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, রানীবাঁধের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমের ‘জ্বালাময়ী’ ভাষণের পর এখানে উজ্জীবিত বাম কর্মী সমর্থকরা। তাছাড়া বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে এবার সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণ বাঁকুড়ার দুই সিপিএম নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রেও ‘স্থানীয় পরিচিত মুখ’ প্রার্থী হিসেবে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ভোটে বড় ধরণের ভাগ বসাবে সিপিএম।
তাছাড়া চার নম্বরে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ হিসেবে রাইপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সম্ভাবনার জমি আগে থেকে তৈরি হয়েই আছে। সেই পরিস্থিতিতে জেলার কোন নেতাকে প্রার্থী করা হলে সব তৃণমূল নেতা কর্মী ভোটের লড়াইয়ে নামবেন কিনা, নিশ্চিত ছিলেন না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সেকারণেই মধ্যপন্থা হিসেবে বাংলার রাজনীতিতে অতি পরিচিত মুখ, বাঁকুড়াকে প্রায় হাতের তালুর মতো চেনা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আগুনে জল ঢেলে দেওয়ার উদ্যোগ বলেই অনেকে মনে করছেন।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের দলে কোন গোষ্ঠী নেই। আমাদের একজনই নেত্রী তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বাকি যারা আমরা রয়েছি তারা সবাই ‘তৃণমূলের সৈনিক’ বলে দাবি করেন তিনি৷ রাজ্যের ৪২ কেন্দ্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী। আমাদের দলের প্রতীকে ভোট দেওয়া মানেই সেই ভোট ‘দিদি’কে দেওয়া। মানুষ এটা জানেন, বোঝেন বলেও তিনি দাবি করেন।’’