আজ ১৮ ই আগষ্ট মুর্শিদবাাদের স্বাধীনতা দিবস ,কিন্তু কেন আসুন দেখে নিই
ওয়েব ডেস্ক :- সন্ধ্যাটা কিন্তু এমন হওয়ার কথা ছিল না। আকাশবাণীর খবর হঠাৎ করে সব হিসেব বদলে দিল এক ঝটকায়। সব আলো যেন দপ করে নিভে গেল মুর্শিদাবাদের আকাশ থেকে— মুর্শিদাবাদ স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। তার ঠাঁই হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে। দেশ ভাগের মানচিত্রের উপরে আঁচড় টেনে সব কেমন তালগোল পাকিয়ে দিয়েছেন Cyril Radcliffe সাহেব। তারই জেরে পাক্কা তিন দিনের আন্দোলনে শেষতক ভাঙে ভুল। ১৮ ই অগস্ট ফের ভারতে অর্ন্তভূক্তি ঘটে মুর্শিদাবাদের।
জেলার বিভিন্ন পত্র পত্রিকা থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ১৪ ই অগস্ট রাতে দেশভাগ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ব পাকিস্তানে পরে যায়। জেলার সর্বত্র পাকিস্তানের পতাকা ওড়ে। পরে দিল্লি থেকে নানা ভাবে খবর মেলে ১৭ ই অগস্ট রাতে, মুর্শিদাবাদ জেলা ভারত-ভুক্ত হয়েছে।
*ঠিক কি হয়েছিল ? কেন এই বিলম্বিত স্বাধীনতা?
১৬ ই মে ১৯৪৬ বৃটিশ পার্লামেন্ট–এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জুলাই ১৯৪৬ গঠিত হল ভারতের সংবিধান সভা (The Constituent Assembly of India ) । প্রথম সভা বসল ৯ ই ডিসেম্বর ১৯৪৬ । ৩ রা জুন ১৯৪৭ বৃটিশ পার্লামেন্ট ভারতের দেশভাগ মেনে নিল । ১৮ ই জুলাই ১৯৪৭ বৃটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ সালের Government of India Act, 1935 কে সংশোধন করে Indian Independence Act, 1947 পাশ করল।এই Indian Independence Act, 1947 এর বলে ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ দিনটিকে ভারত ও পাকিস্থান দুটি পৃথক দেশ গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট করে দিল । ১৯০৫ সালে যা ছিল ‘বঙ্গভঙ্গ’এর মহড়া এই Act এ তা কারযকরী করা হল ‘পূর্ববঙ্গ’ ও ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামে দুটি প্রদেশ তৈরির মধ্য দিয়ে । ১৯০৫ সালে আঁকা মানচিত্রকে ভিত্তি করে একটি মানচিত্র এর সঙ্গে যুক্ত করা হল ।এই মানচিত্র অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, দিনাজপুর, মালদহ, যশোহর এবং বনগাঁ থানাকে ‘পূর্ববঙ্গ’এর মধ্যে ধরা হয় । যদিও বলা হয় Bengal Boundary Commission এর পেশ করা রিপোর্টের উপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৩০ শে জুন ১৯৪৭ গভর্নর জেনারেলের ঘোষনা(Ref. No.D50/7/47R) মোতাবেক Sir Cyril Radcliffe কে চেয়ারম্যান করে পাঁচ জনের Bengal Boundary Commission গঠিত হয় । ৩০ শে জুন থেকে ১৪ ই আগস্ট ১৯৪৭ মাত্র ৪৫ দিন হলেও প্রকৃত পক্ষে ১৮ ই জুলাই ১৯৪৭ থেকে ১২ ই আগস্ট ১৯৪৭ মোট ২৫ দিন কমিশন হাতে পায় । আর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৬ থেকে ১৯ এবং ২১ থেকে ২৪ শে জুলাই ১৯৪৭ মাত্র ৮ দিন পাওয়া যায়। ১২ ই আগস্ট ১৯৪৭ Radcliffe রিপোর্ট পেশ করেন। ১৪/১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ মাঝরাতে যথারীতি দ্বি-খন্ডিত স্বাধীনতা ঘোষিত হল ।১৯০৫ সালের আঁকা মানচিত্রকে রিপোর্টে পেশ করা হয়েছে বলে সুকৌশলে প্রচার করে মুসলিম লীগ ময়দানে নেমে পড়ে ।
১২ ই আগস্ট ১৯৪৭ থেকে ১৪/১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ স্বাধীনতা ঘোষনা মাঝের মাত্র দুদিনে মানুষ Radcliffe রিপোর্টের সঙ্গে পেশ করা নতুন মানচিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না । ১৫ ই আগস্ট সকালে মুসলিম লীগের হৈ চৈ মিছিল মিটিং করে পাকিস্থানের পতাকা উত্তোলনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা, নিউ বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও বিভ্রান্ত হন । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে Radcliffe রিপোর্ট ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে ।শুরু হয় তৎপরতা।বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মহারাণী জ্যোতির্ময়ী দেবী, মুর্শিদাবাদের ওয়াসেদ আলী মীর্জা সহ নানা স্তরের ব্যক্তিত্বের তরফ থেকে রাজ্য ও সর্ব ভারতীয় স্তরে যোগাযোগ করা শুরু হয়।১৬ ই আগস্ট তৎপরতা তুঙ্গে উঠে ।
কলকাতা থেকে দিল্লী প্রশাসনিক স্তরে চিঠি চালাচালি ও দরবারের পর ১৭ ই আগস্ট বিকালে নতুন নোটিফিকেশন জারী করে বিষয়টি পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। নোটিফিকেশন নং 55 G.A. Dated 17.08.1947. u/s.7 of Cr.P.C.1898 তে মুর্শিদাবাদ জেলা গঠন তথা সীমানা চিহ্নিত করে ভারত ভুক্ত করার কথা ঘোষিত হয় ।
Radcliffe এর ‘রায় পরিষ্কার বুঝা যায়নি বলে এই বিভ্রান্তি’ কথাটি যথার্থ নয় । ‘মুসলিমলীগ রণকৌশলে’ যেমন তিনদিন ‘পাকিস্থান ধোঁয়াশা’ ছিল তেমনি নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে এবং সম্প্রীতির বাতাবরণ বজায় রাখতে ‘কংগ্রেসী রণকৌশলে’ Radcliffe এর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ‘রায় না বুঝতে পারা’র কথা প্রচার করা হয় । মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, মালদহ,পশ্চিম দিনাজপুর এবং ২৪ পরগণার বনগ্রাম থানা যে ভারতের অংশ সেটার নতুন ঘোশণা ১৯৪৭ সালের ১৭ ই আগস্ট রাতে করা হয়েছিল।
মুর্শিদাবাদের জেলার প্রবীণেরা তাই এখনো মনে করেন, ১৫ ই অগস্ট নয় ১৮ ই অগস্ট জেলার স্বাধীনতা দিবস।🇮🇳
#murshidabad ❤️
*তথ্যসূত্র ইন্টারনেট 🌐
সৌজন্য :- পার্থ সারথী দত্ত র ফেসবুক পোষ্ট