বেহালায় বিজেপি’র দুই প্রার্থীর অর্থ খরচে দূর্নীতির অভিযোগ, নিচুতলায় দলীয় স্তরে বাড়ছে ক্ষোভ
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : বেহালা পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে বিগত নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীদের প্রচারে মোট ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে খবর বিজেপি সূত্রের। অথচ কোথায় কোন কোন খাতে কি খরচ হয়েছে তার কোনো বিস্তারিত তথ্য রাজ্য বিজেপি নেতাদের কাছে পৌঁছয় নি। ভোটে প্রার্থীর জন্য বরাদ্দ অর্থ নয়-ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ। আর এ নিয়েই বাড়ছে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ। এনিয়ে বিজেপি’র দলীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে শুরু করে ফেসবুকে কর্মীদের করা পোস্টে ছয়ালাপ হয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত: বেহালায় দুটি বিধানসভায় ৬০ হাজার টাকা ভাড়ায় নেওয়া হয়েছিল দুটি বিয়ে বাড়ি। সেখানে কর্মীদের রোজ খাওয়া দাওয়া বাবদ প্রতিমাসে খরচ হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। অভিযোগ, এই টাকা খরচের বিস্তারিত হিসেব পাওয়া যায়নি। নির্বাচনী পথসভা করার জন্য খরচ হয়েছে ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। প্রতিটি ওয়ার্ডে বিজেপি’র পতাকা লাগাতে খরচ হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা…এরও কোনও পূর্ণাঙ্গ হিসেব পাওয়া যায়নি। স্বভাবতই: এ ধরনের খরচের বহর দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন বেহালার বাসিন্দা তথা বঙ্গ বিজেপি’র উদ্বাস্তু সেলের প্রাক্তন আহ্বায়ক সুজিত শিকদার।
সুজিতবাবু বলেন, “আমি বেহালা পূর্ব বিধানসভার আহ্বায়ক ছিলাম। আমার সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করেই একজন অস্বচ্ছ বিজেপি নেতাকে সহ আহ্বায়ক করে দেওয়া হয়। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করি। প্রথম থেকেই যেভাবে টাকা নয়-ছয় করে খরচ হচ্ছিল, তার কোনও হিসেব নেই। প্রার্থী তালিকা দেখেই আমার মনে হয়েছিল বেহালা পূর্ব ও পশ্চিমে বিজেপি জেতার জন্য নয়, টাকা লুটপাঠের জন্যই পায়েল সরকার ও শ্রাবন্তী চ্যাটার্জীর মতো দু’জন অপরিনত প্রার্থীকে ভোটে দাঁড় করিয়েছে। কারণ এদের সামনে রেখে দলের কিছু নেতার টাকা লুঠতে সুবিধা হবে। কার্যক্ষেত্রে হয়েছেও তাই। আমাদের দুটো বিধানসভায় তেমন কোনও মিটিং-মিছিল-পথসভা কিছুই সেভাবে হয়নি। তাহলে এত টাকা খরচ হলো কি করে…..?”
তিনি আরও বলেন, বুথে যারা বসেছেন, সেই কর্মীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৪ হাজার টাকা, অথচ তাদের দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা। তাহলে বাকি ৩ হাজার টাকা গেল কোথায় ? এখানেও কয়েক লক্ষ টাকার বড়-সড় দুর্নীতি হয়েছে। যেসব নেতা-কর্মীরা এই টাকা খরচ ও লেনদেনে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, বেহালা পূর্ব ও পশ্চিমে ভোট প্রচারে ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এত টাকা গেল কোথায় ? তেমন কোনও প্রচার তো চোখেই পড়লো না। কতিপয় নেতা-কর্মীরা টাকা আত্মসাৎ করায় তার মাশুল দিতে হল বিজেপিকে… এমনই মন্তব্য সুজিতবাবুর।
এই ঘটনায় হতবাক বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বিজেপির প্রবীণ নেতা তথাগত রায়। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সাত মন তেলও পুড়লো আর রাধাও নাচলো না…..। তাই অবিলম্বে এইসব দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আগামীদিনে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হবে বলে জানান দলের প্রবীণ নেতা তথাগত রায়।