নিউজ ডেস্ক:- ঘূর্ণিঝড় উম্পুনের ধ্বংসলীলা চলছে গোটা বাংলাজুড়ে। আয়লার ক্ষেত্রে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার। অথচ বাংলার সুন্দরবন উপকূলে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় বইল। তবে, বেশ কয়েকঘণ্টা ধরে টানা ঝড় চলছে ১৫০-১৭০ কিলোমিটার। শুধু তাই নয়, কলকাতাতেও ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি উঠল ১৩০ কিমি।
এরই মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে উম্পুনের দাপটে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হাওড়াতে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। তাঁর নাম লক্ষ্মী কুমারী সাউ(১৩)। টিনের চাল উড়ে গলা কেটে তাঁর মৃত্যু হয়। বসিরহাট মহকুমায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এখনও পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বসিরহাট মহকুমার মিনাখাঁ ধুতুরদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বারগা গ্রামে নূরজাহান বেগম নামে এক মহিলার ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে ওই মহাকুমার মাটিয়া থানার মমিনপুর গ্রামে ঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে মহতা দাস নামে ২২ বছরের এক যুবকের।
জেলাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আপাতত জানা যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও কলকাতাতে চলছে প্রবল বেগে ঝড়। ইতোমধ্যে উপকূলে প্রায় ১৫০-১৬০ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালাচ্ছে উম্পুন। কলকাতাতে বইছে ১০৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়। তবে, আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৩০ কিমি।
ইতোমধ্যে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, কচুবেরিয়ার জেটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে। কাকদ্বীপ, কৈখালি, কুলতলি, পাথরপ্রতিমায় একের পর এক বাঁধ ভেঙে পড়েছে। বানভাসী হতে চলেছে বহু গ্রাম। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু হাজার-হাজার কাঁচা বাড়ি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোসাবার ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে এনেছে প্রশাসন। এ ছাড়া কুলতলি থেকে ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, শ্রাবণী ঘোষ (৪৬) নামে এক মহিলা বাড়ির দেওয়াল ভেঙে আহত হয়েছেন। তাঁকে জেলা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে।
উম্পুনের হাত ধরে অন্য একটি প্রবণতাও আলোচনায়। পর পর দু’বছর ঘূর্ণিঝড় বাংলা শেষবার দেখেছিল ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালে। অর্থাৎ, তিন দশক পর এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছে রাজ্য। বুলবুলের ক্ষত পুরোপুরি সারিয়ে ওঠার আগেই এল উম্পুন। অথচ, বাংলায় বুলবুল এসেছিল আয়লার ঠিক দশ বছর পরে। তার আগে ঘূর্ণিঝড়টি এসেছিল ২০০২ সালে। অনেকগুলি বছরের বিরতি দিয়ে। পর পর দু’বছর পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আসার ঘটনাও খুব কম। রাজ্যের ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় প্রবণ সময়কাল ধরা হয় ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সালকে। প্রতি বছরই একটি করে ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপ্টা সইতে হয়েছিল রাজ্যকে। এর মধ্যে শেষ বার একই বছরে দু’টি। পর পর দু’বছর আবার ঘূর্ণিঝড় দেখা যায় ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে। বুলবুল-উম্পুন সেই স্মৃতিই উস্কে দিল। আর এখন পর্যন্ত যা ধারণা করা হচ্ছে, তাতে ধ্বংসালীলার আয়লাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে উম্পুন।
উম্পুনের প্রভাব দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি চাল উড়ে গিয়েছে। গাছ ভেঙে পড়ার খবর আসছে কলকাতা থেকেও। সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের দাপট বাড়ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিন সকাল থেকেই সাইক্লোনের প্রভাবে চলছে ঝড়ো হাওয়া। বিকেল চারটে থেকে কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ বেড়ে ১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা হবে বলে জানানো হয়েছিল হাওয়া অফিসের তরফে। আবহাওয়া দপ্তরের সেই তথ্য অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিয়ে ১১২ কিলোমিটার গতি ছাড়িয়ে ১৩০ কিলোমিটার গতি ধরেছে সুপার সাইক্লোন। শহরের একাধিক প্রান্তে বিদ্যুতের খুঁটির পাশাপাশি উপরে পড়েছে প্রচুর গাছ। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিবেগ বাড়বে বলে জানানো হয়েছে নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে। ঝড়ের দাপট চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। এহেন পরিস্থিতিতে পুর কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি নবান্নের কন্ট্রোলরুম থেকে গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলেই কন্ট্রোল রুম থেকে জানিয়েছেন পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নবান্ন থেকে খোলা হয়েছে মোট ৬০ টি হেল্পলাইন নম্বর। তারমধ্যে টোল ফ্রি নম্বর রয়েছে 1070। এছাড়াও নবান্ন কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর 033 2214 3526. 033 2214 1995। ঝড় চলাকালীন, ও তার আগে এবং পরের যে কোন সাহায্যের জন্য এই নম্বর গুলিতে ফোন করা যেতে পারে। ফোন করা যেতে পারে কলকাতা কর্পোরেশনের হেল্পলাইন নম্বরেও। কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমের নাম্বার 228612 12 /2286 1313 /2 286 1414। 24 ঘন্টা রেডি থাকছে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুম। খোলা থাকছে 24 ঘন্টা কলকাতা পুলিশ হেল্পলাইন নম্বর। কলকাতা পুলিশ হেল্পলাইন নম্বর 9432624365। এই নম্বরে ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ করা যেতে পারে। পুলিশ কন্ট্রোল রুম নম্বর 033 2214 3024 / 3230 / 1310। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত বিপর্যয়ে সরাসরি বিদ্যুৎমন্ত্রীর দফতরের ২৪x৭ হেল্পলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। নম্বরটি হল 7449300840 ও 9433564184।