কাঁচা শাকসবজি খাওয়া কি নিরাপদ !

Spread the love

প্রতিবেদন ,অয়ন বাংলা ,যাদবপুর:-
বাজার থেকে কিনে আনা উজ্জ্বল সবুজ ধনেপাতা আর পুঁইশাক কিনে বাড়ি ফিরছিলেন যাদবপুর কাটজুনগরের বাসিন্দা শ্যামল সেন। স্মিত হেসে বছর তেইশের একটি মেয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘মেসোমশাই, বাড়িতে যা নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে কী আছে আপনি জানেন?’

প্রবীণ শ্যামলের উত্তর, ‘রোজ তো কিনি। এতে আর কী থাকবে! গিন্নি ধুয়ে পুঁইশাক রান্না করবে। আর ধনেপাতাটা একটু ধুয়ে পাবদার ঝোলে ছড়িয়ে দেবে। এর মধ্যে কোনও দিন কিছু তো পাইনি!’

মেয়েটি বিনীত স্বরে অনুরোধ করল, একটু সময় চেয়ে। তার পরে প্রবীণ শ্যামলকে একটি টেবিলের সামনে নিয়ে গিয়ে, বোতলে থাকা তেল জাতীয় এক ধরনে তরলে একটু তুলো চুবিয়ে ধনেপাতা আর পুঁইয়ের ডাঁটায় ঘষে দিল। সাদা তুলো চোখের সামনেই সবুজ হয়ে গেল!

শ্যামল তো অবাক। মেয়েটি তাঁকে জানালো, তুলোর গায়ে লেগে থাকা সবুজ হচ্ছে ম্যালাকাইট গ্রিন। যা নিয়মিত শরীরে ঢুকলে অনেক ধরনের জটিল রোগ হতে পারে। শুনে শ্যামল বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন কেনা আনাজ ফেরত দিতে। মেয়েটি বলল, ‘ফেরত দিতে হবে না। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘণ্টা তিনেক জলে চুবিয়ে রেখে ভালো করে তার পরে ব্যবহার করবেন। আর ঘরে খানিকটা বাদাম তেল বা সোয়াবিনের তেলের মতো ভেজিটেবল তেল রেখে দিলেই হবে।’
এই ভাবেই রবিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত যাদবপুর এইট-বি বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তায় শ’পাঁচেক মানুষকে ভেজাল ধরার হাতেখড়ি দিলেন বিজ্ঞানকর্মী অরুণিমা সোম, হিমাদ্রিশেখর সরকার, সন্দীপ বিশ্বাস এবং মনোতোষ সরকার। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ নিয়ন্ত্রিত যাদবপুর বিজ্ঞান কেন্দ্রের এই উদ্যোগ বিজ্ঞানকর্মীরা বলছিলেন, মানুষ দৈনন্দিন যে সব খাবার খাচ্ছেন তাতে ভেজাল আছে কি না জানার জন্য সব সময় ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার দরকার হয় না। গৃহস্থালির খুঁটিনাটি দিয়েই ধরা যায় সেই ভেজাল।

তাঁরাই যেমন জানাচ্ছেন, দুধে মেশানো হয় চার ধরনের জিনিস। ঘন করার জন্য ময়দা, আটা, অ্যারারুট। কয়েক ফোঁটা বেটাডিন ফেলে দিলেই দুধ নীলচে হবে। বোঝা যাবে এতে আটা, ময়দা বা অ্যারারুট মেশানো আছে। দুধে ডিটারজেন্ট আছে কি না, তা বুঝতে এক চামচ দুধে একটু হলুদ দিলেই বোঝা যাবে। দেখা যাবে, দুধ লালচে হয়ে যাচ্ছে। দুধ যদি দু’দিন পরেও কেটে গিয়ে দই না-হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে ওই দুধে ফর্মালিন আছে। ঘিতেও মেশানো হয় আটা, ময়দা, চর্বি। কয়েক ফোঁটা বেটাডিন ফেললেই তা বোঝা যাবে। মধুতে আবার মিশিয়ে দেওয়া হয় পুরোনো সিরাপ। এক চামচ মধু নিয়ে, তাতে একটা দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে দিলে, দেখা যাবে পুরো মধুটাই পুড়ে গিয়েছে। লাড্ডু, চানাচুর, কচুভাজা, ঘুগনি, বিরিয়ানির মতো মুখরোচক খাবারে দেওয়া হয় মেটালিক ইয়েলো, যে রঙ নিয়মিত শরীরে গেলে মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত বা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে তা ধরাও সম্ভব। বাথরুমের পরিষ্কারের জন্য রাখা কয়েক ফোঁটা মিউরিয়াটিক অ্যাসিড ফেলে দিলেই দেখা যাবে, তা কালচে হয়ে আসছে। যাদবপুর বিজ্ঞানকেন্দ্রের সম্পাদক সম্রাট মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের এই আয়োজনে যদি একজন মানুষও উপকৃত হন তা হলে সেটাই আমাদের সাফল্য।

♋ *অনুভব -দুর্গাপুর।*
# *পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ।*??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.