ডিসপেপসিয়াঃ
স্ব্যাস্থ ডেস্ক,অয়ন বাংলা:-
আজকের যুগ-জমানায় কে কে সুস্থ—এই সেন্সাস করা উচিৎ ; অথচ কয়েকদশক আগেই কে কে অসুস্থ— এই গণণা করা লাগত, কে কে সুস্থ -সেটা গণণা করা প্রয়োজন পড়তনা!
বহুবিধ নানা স্বাস্থ্য-সমস্যা আজকের যুগে বাচ্চা থেকে বুড়ো , ছেলে থেকে মেয়ে প্রায়ই সকলকেই কোনও না কোনভাবে চেপে ধরেছে! হ্যাঁ, এখানে আকস্মিক দূর্ঘটনা বা শারিরীক সমস্যার কথা বাদ দিয়েই কথা হচ্ছে৷ কথা হচ্ছে, নানাবিধ নির্ণীত বা অনির্ণীত রোগ বা সমস্যার ব্যাপারে৷ ঘুম না আসা, দূঃশ্চিন্তা, এনজাঈটি, ডিমেনসিয়া, মনযোগের অভাব, মাইগ্রেন, মাথা ব্যাথা, ক্রনিক কল্ড,এজমা,ব্রঙ্কাঈটিস,এমফাঈসেমা,প্যালপিটেশন,হাইপারটেনশন,ব্লাডসুগার ইমব্যালান্স,আইবিএস,ক্রন্স ডিজিজ, ক্রনিক মিউকয়েড স্টুল, ক্রনিক কোষ্ঠ্যোকাঠিন্য,ডিসপেপসিয়া,এক্সেসিভ বার্পিং, গলা মুখ টক টক,হিমোরয়েড,মাংশপেশীর ও জয়েন্টের ব্যাথা, টিনাঈটাস, ভার্টাইগো, ইনফার্টিলিটি, সাদাস্রাব, অনিয়মিত মাসিক, হাত পা জ্বালা যন্ত্রনা, প্রভৃতি নানা দূরহ জটিল সমস্যা ৷ প্রত্যেকটির সঠিক মূল্যায়ন ও তার সঠিক কারণসহ কীভাবে এই সকল সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া যায় তা খুব সরল ও সহজ পন্থায় সমস্যাভিত্তিক আলোচনা করব ইনশাল্লাহ৷
তবে , আজকের বিষয়— “ডিসপেপসিয়া”
এটি হল—খাদ্য বা পাণীয় গলাধঃকরণ পরবর্তী খাদ্যথলি(স্টোম্যাক), ক্ষুদ্রান্ত্র,বৃহদন্ত্র এ সৃষ্ট বিশেষ কিছু কারণের জন্য খাবার ঠিক ১০০% পাচিত হয়না; ফলতঃ হজমের গন্ডগোল, পেট ফেঁপে যাওয়া, ঢেকুর উঠা, মুখ গলা তিক্ত বা টক থাকা, কষ্ঠ্যো ঠিকমত না হওয়া প্রভৃতি ৷
আজকের জমানায় এই সমস্যায় প্রায় সকলেই বিভিন্ন মাত্রায় আক্রান্ত৷ একবার এই জাতীয় সমস্যার প্রকোপে পড়লে , জীবন-ভোর বা আমৃত্যু সেটা থেকে আর সম্পূর্ণ মুক্তি মিলেনা!!
হ্যাঁ, সত্যিই মিলেনা৷ প্রচলিত এলোপ্যাথ, হোমিও বা নানা পন্থায় সাময়িক স্বস্তি বা আরাম পাওয়া যায় নিঃসন্দেহে৷ কিন্তূ, ঔষধের বিরতিতে আবার যেকার সেইই!!!
এই অভিজ্ঞতা হাজার হাজার মানুষের৷ মানুষের মন অবিরত খুঁজে চলেছে তার এই জাতীয় সমস্যার প্রকৃত রহস্য বা কারণ উদঘাটনে ও উত্তরণের প্রকৃত উপায় হাসিল করতে৷ স্থানীয় ও রাজ্যের সকল অভিজ্ঞ ও নামী চিকিৎসকদের চেম্বার কয়েকবার পাক মেরে—নামে প্রশংসিত দক্ষিণভারতে উড়ে গিয়েও অনেকক্ষেত্রে ডিসপেপসিয়া নামক জটিলকৃত সমস্যাটি এখনও নির্মূল হচ্ছেনা৷ তাহলে, দোষটা রোগীর বা ডাক্তারের কী?
না, কারোরই নয়! আপনি নিজ থেকে বা আপনার দেহ নিজ থেকে সিম্পটমস সৃষ্টি করছেনা বরং কোন ফ্যাক্টর যেটা বহির্জগত থেকে দেহের জগতে কোন না কোনভাবে প্রবেশ করেছে৷ আপনার ইমিউনিটি বা জ্বিনগত ত্রুটির জন্য সমস্যার উৎপত্তি— এই বিশ্বাস বা ধারণা ত্রুটিপূর্ণ!!
তাহলে, ডিসপেপসিয়ার সূত্রপাত কীভাবে?
একটু শুনুন৷ মন দিয়ে অনুধাবন করুন৷
পূর্বপ্রজন্মের দেহে বা রক্তে বা বাভিন্ন অর্গানে বিশেষ করে লিভারে ও প্রজননঅঙ্গে সন্চিত স্লো গ্রোয়িং ভাইরাস বিশেষ করে হারপিস ফ্যামিলির ভাইরাস, বিভিন্ন হেভি মেটালস যেমন- মারকারী, এলুমিনিয়াম, কপার, আর্সেনিক, স্টিল, এলয়, প্রভৃতি
প্রজনন অঙ্গের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে একটা ভেরিয়াবল ফ্রাকশনে মাতৃগর্ভেই সন্তানের দেহে প্রবেশ করছে৷ মাতৃগর্ভে বিভিন্ন কোষ ও অঙ্গকে ঐ সকল বিষাক্তছোবল থেকে বাঁচাতে জরায়ুর আধারে বেড়ে উঠা লিভার আত্মবলিদান দিতে চলে আসে৷ লিভার এমনই একটি অর্গান যার ক্যামিক্যাল জগতে অপরিসীম কার্যক্ষমতাধর ও হাজার হাজার রাসায়নিক ক্রিয়া- কর্ম অনবরত করেই চলে৷ ফলে, অন্যান্য অর্গান মাতৃগর্ভে রক্ষা পেলেও বিষাক্ততার মাত্রা অনুযায়ী, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রায় ২০-৩০% শিশুর লিভারজনিত সমস্যা যেমন—জন্ডিস, পেট ফেঁপে যাওয়া,পায়খানার গন্ডগোল, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা প্রভৃতি এখনকার জমানায় দেখা যাচ্ছে৷
কোন শিশু তার পূর্বপুরুষ থেকে কী বিষ ও ভাইরাস, কী মাত্রায় পেয়েছে এবং পৃথিবীতে জীবন-যাপনে সে নিজেই ঐ সকল বিষ ও জীবাণুতে কী মাত্রায় ও কতটা পরিমাণে এক্সপোজ হয়েছে বা হচ্ছে —তার ভেরিয়েশনে নির্ভর করছে — কোন একটি মানুষ ঠিক কোন বয়সে, কোন মাত্রার রোগে বা সমস্যায় ভুগবে৷
তো, কথা হচ্ছিল—ডিসপেপসিয়া নিয়ে৷
তাহলে আপনার লিভার বিভিন্ন মাত্রার ঐ সকল বিষ ও বিভিন্ন স্ট্রেনের ভাইরাস, মাইক্রোবস, প্রভৃতি দেহের জন্য ক্ষতিকর বস্তূ দিয়ে লোড আছে( এটা বর্তমানে প্রায় ৯০% লোকের ক্ষেত্রে সত্য)৷ যদি লিভার অভারবার্ডেনড্ হয় বা স্লাগিশ হয় তবে খাদ্যপাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাইল এসিড( কমপ্লেক্স কম্বিনেশন অব ডিফারেন্ট বাঈল সল্ট, মাইক্রোমিনারেলস) তার গুণগত মান ও পরিমাণগত মান দুটোই কমে যায়৷ ফলে, খাদ্যপাচনের জন্য উপযুক্ত ও পরিমিত বাঈল এর অভাবে গৃহিত খাদ্য ১০০% পাচিত হয়না৷ আবার, স্টোম্যাকের হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মূল নিয়ন্ত্রনও লিভারের হাতে৷
ফলে, লিভার যে কোন প্রকারেই হোক অভারবার্ডেনড্ বা কার্যকারিতায় ৭০% এর অধিক শক্তিশালী না হয়, তবে—
১) হাইড্রোক্লোরিক এসিড কমে যাচ্ছে: গৃহিত খাদ্য পুরোপুরি পরিপাক ও পরবর্তী পাচন প্রক্রিয়ার জন্য ১০০% উপযুক্ত থাকেনা৷
২) বাইল এসিড কমে যাচ্ছে: গৃহিত খাদ্যকে আরো গভীর ও জটিল প্রক্রিয়ায়(বিশেষ করে প্রোটিন ও ফ্যাটকে) ১০০% শোষণযোগ্য হয় না৷
এরপরই শুরু হয় যাবতীয় পেটের অপ্রীতিকর ঘটনা৷ এই অপাচিত খাদ্যভাগটি এগিয়ে চলে ক্ষুদ্রান্ত্রে,বৃহদন্ত্রে,সিকামে, রেকটামে৷ খাদ্যনালীতে ভাল ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও থাকে অনেক রকম অপ্রীতিকর ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া( অনেক সময় গৃহিত খাদ্য বা পাণীয়র মাধ্যমেও পেটে চলে আসে)৷ এই হার্মফুল ব্যাকটেরিয়া অন্যান্য দুষ্ট সহযোগী নিয়ে তাদের প্রিয় অপাচিত খাবারে হানা দেয়৷ শুরু হয় প্রবলহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মিথেন,এমোনিয়া গ্যাস ফর্মেশন৷ লোকালি ইনফ্লামশনও হয় বহু ক্ষেত্রে৷ মিউকাস তৈরী হয়, ইনটেস্টিনাল নার্ভ প্লেক্সাস যা পেরিস্টলটিক মুভমেন্ট ঠিক রাখে, দূর্বল হয়ে পড়ে৷ ফলে, লুজ মোশন বা কনস্টিপেশন দেখা দিতে শুরু করে৷ গ্যাস ফর্মেশনের জন্য পেট ফাঁপে, ঢেকুর উঠে, বায়ু সরে৷ এমোনিয়া ভোলাটাইল হওয়ার জন্য খুব সহজেই ইন্টেস্টিনাল ওয়াল ক্রস করে ব্লাডে চলে যায়৷ ইজিলি ব্লাড-ব্রেন বেরিয়ার ক্রস করে বলে মাথা ধরা, মাথা ব্যথা হয়৷ এই জন্যই অনেকেরই গ্যাস হলে মাথা ব্যাথা হয়৷
গৃহিত খাদ্যের সঠিক মানে ও গুণে পাচন বা পরিপাক না হলে —এইভাবে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়৷
তাই, সকল পেটের সমস্যার উৎপত্তি লিভার এটা জেনে রাখুন৷
সিম্পটমস আর এনাটমিক্যাল লোকেশন প্রভৃতির ভেরিয়েশনে এই সমস্যাগুলিই নানা নামে চিকিৎসাজগতে পরিচিত৷ তাই,অসুখের নামে নয়—আসল ঘটনায় চিনুন৷
তাহলে, উত্তরণের উপায়???
লিভারকে নিঃশর্তভাবে সাপোর্ট করুন , লিভার আপনাকে অপরিসীমভাবে রক্ষা করবে৷
ডায়েট থেকে ডিম,এনিম্যাল প্রোটিন, এনিম্যাল ও ভেজেটেবল ফ্যাট ( অন্ততঃপক্ষে ৫০%) দুধজাত দ্রব্য, গমজাতদ্রব্য, ক্যানোলা,কর্ণ(সাদাতেল) পর্ক, মাংস (চিকেন, বিফ, মটন,পল্ট্রি) , ব্রাউন বা হোয়াঈট সুগার প্রভৃতি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন৷
লিভার হিলিং ফুড বা ফ্র্যুট প্রতিদিন নিয়মিত খান— যেমন লেবু, আপেল, শশা, খেজুর, মধু, আঙ্গুর, নাসপাতি, কলা, বিট,গাজর প্রভৃতি, সমস্ত শব্জী, পেষ্টিসাইডমুক্ত মাছ খান৷
প্রাকৃতিক এন্টিভাঈরাল বা এন্টিমাইক্রোবিয়াল ফল ও
সাপ্লেমেন্ট খান৷ নিয়মিত হেভি মেটাল ডিটক্সিফিকেসন করুন৷
## খুবই গুরুত্বপূর্ণ হল— দৈনিক ব্রেকফাষ্টের আগে ২২৫_২৫০ মিলি সেলেরি বা জোয়ান জ্যুস
ক্রনিক ডিসপেপসিয়াকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করুন৷ আপনার সুস্থতায় জাতির সুস্থতা; আর সুস্থ জাতিই গড়ে তুলতে পারে সুস্থ দেশ৷
#https://asshifatrust.com/2019/10/06/root-causea-of-dyspepsia/