হিমোফিলিয়া কী??

Spread the love

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস
ডাঃ মহম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী,
শিশু বিশেষজ্ঞ, কান্দী মহকুমা হাসপাতাল

১৭ এপ্রিল, বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতি বছরই এই দিনটি সারা বিশ্বের সাথে সাথে ভারতবর্ষেও বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই দিনটা ওয়ার্লড ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়া এর প্রতিষ্ঠাতা Frank Schnabel এর জন্মদিন। হিমোফিলিয়া রোগ এবং অন্যান্য রক্তক্ষরণজনিত রোগের আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস হিসাবে এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়।
প্রত্যেক বছরই নির্দিষ্ট একটা থিম থাকে মানুষকে হিমোফিলিয়া রোগ এবং অন্যান্য রক্তক্ষরণজনিত রোগ সম্বন্ধে সচেতন করার জন্য। এবছরের থিম হল OUTREACH AND IDENTIFICATION এটার অর্থ হল নতুন নতুন রোগীর কাছে যাওয়া এবং সঠিক রোগটা নির্ণয় করা।

হিমোফিলিয়া রোগটা কি
হিমোফিলিয়া হল একটি বংশগত বা জেনেটিক রোগ। এটা এক্স লিঙ্কড রিসেসিভ ডিজিজ। ছেলেদের এক্স ক্রোমোজম ও ওয়াই ক্রোমোজম থাকে তাই সাধারণত ছেলেদেরই এটা হয়।এটা রক্তক্ষরণ জনিত রোগ যেখানে রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ কারী নির্দিষ্ট ক্লটিং ফ্যাক্টর কম থাকে। ফলস্বরূপ রক্ততঞ্চন হতে পারে না অর্থাৎ রক্তের জমাট বাঁধায়
সমস্যা দেখা দেয়, ফলে রক্তপাত হয়। অনেক সময় শরীরের ভিতরেও নিজে নিজেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এই সমস্যাকেই হিমোফিলিয়া বলে।

এটা কত প্রকারের
হিমোফিলিয়া তিন প্রকারের। তিনটি বিভিন্ন ক্লটিং ফ্যাক্টর এর অভাবের ফলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেগুলো হল হিমোফিলিয়া এ, হিমোফিলিয়া বি এবং হিমোফিলিয়া সি। এর মধ্যে হিমোফিলিয়া এ সবচেয়ে বেশী হয়। এটি রক্ততঞ্চনকারী ফ্যাক্টর Vlll এর অভাবে হয়।শতকরা ৮৫ ভাগ হিমোফিলিয়া রোগী হিমোফিলিয়া এ-তে আক্রান্ত। প্রতি ৫০০০জনের মধ্যে একজনের হয়।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়া পৃথিবীতে প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে একজন হিমোফিলিয়াসহ অন্যান্য রক্তক্ষরণজনিত রোগে ভুগছে। এবং চিকিৎসা বা সনাক্ত করা যায়নি এমন রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

সচেতনতা প্রয়োজন কেন
দূর্ভাগ্যবশত অনেক হিমোফিলিয়া রোগী আছে যার এখনও সনাক্তকরণই (Diagnosis) হয়নি। অথবা যারা Diagnosed হয়েছে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাই এই বিশেষ দিনে মানুষকে সচেতন করলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
হিমোফিলিয়া নিরাময় করা যায় না, কিন্তু উপসর্গগুলো এবং রক্তক্ষরণজনিত সমস্যাগুলি অনেকটা আয়ত্তে আনা যায়।
উপসর্গগুলো নির্ভর করে কত কম ফ্যাক্টর কম আছে তার উপর। অল্পঘাটতি থাকলে আঘাত লাগলে রক্তক্ষরণ হয়। বেশী ঘাটতি থাকলে মাংসপেশীতে, জয়েন্ট ‌, এমনকি ব্রেনে ও আপনা আপনি রক্তক্ষরণ হয়।
কখন সন্দেহ করবেন যে হিমোফিলিয়া রোগে আপনার বাচ্চা আক্রান্ত—
১.সদ্য হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চার যদি নীলাভ কালো কালো দাগ দেখা দেয়
২.বাচ্চা পড়ে গিয়ে গায়ে নীলাভ কালো দাগ অথবা জয়েন্ট এব্যথা অথবা ফুলে যাওয়া।
৩.সামান্য কাটা-ছেঁড়ায় রক্ত বন্ধ হতে না চাওয়া।

কি করা উচিত
এইসব লক্ষণগুলে দেখলে বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা বাঞ্ছনীয়। ভর্তি করার পর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। বিশেষ করে নির্দিষ্ট ফ্যাক্টর এর মাত্রা দেখে কোন প্রকার হিমোফিলিয়া হয়েছে তা ডাক্তারবাবু নির্ধারণ করবেন।

চিকিৎসা
এর স্থায়ী সেরকম কোন চিকিৎসা নেই। অভাবজনিত ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানোই হল মূল চিকিৎসা। অস্থিসন্ধিতে সমস্যা হলে ফিজিওথেরাপিতে উপকার পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়মিত চিকিৎসা এবং নির্দেশ মেনে চললে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
বাচ্চার হিমোফিলিয়া হলে পিতামাতার কর্তব্য কি হওয়া উচিত
১. মাংসপেশীতে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ব্যাপারে এড়িয়ে চলা। মাংসপেশীর ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে নেওয়া।
২. কনট্যাক্ট গেমস না খেলা।
৩. শরীরে আঘাত লাগতে পারে এ ধরণের কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করা,
৪. অ্যাসপিরিন এবং NSAID জাতীয় ওষুধ পরিহার করা।

  1. সাধারণ ভাবে অল্প কাটা ছেড়ায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেরকম বড় কোন সমস্যা না হলেও হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
    সচেতনতাই একমাত্র পথ এইসব থেকে দূরে থাকার। এটা বংশগত রোগ তাই শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ বুঝতে পারে না তারা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোগটি সম্পর্কে সচেতন হন, সতর্ক থাকুন তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকিটা অনেক কমানো যেতে পারে। বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস-ই হল সবচেয়ে ভাল প্লাটফর্ম সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এবং হিমোফিলিয়া রোগীর যথাযথ চিকিৎসার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.