রঘুনন্দনের পরিবারের কাউকে চাকরি দিলনা রাজ্য সরকার, মৃত্যু দিবস পালনের দিন অভিযোগ কংগ্রেস নেতার
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : ১৯৯০ সালের ১ আগস্ট বাম সরকারের আমলে বাসভাড়া ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে যুব কংগ্রেসের আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মী ও ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দরা। শান্তিপূর্ন আন্দোলনে বিনা প্ররোচনায় ওইদিন নির্বিচারে বাম সরকারের পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায়। তারাতলা-জেমস লং সরণি ক্রশিংয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্র পরিষদের কর্মী রঘুনন্দন তেওয়ারী। সেই থেকে প্রতি বছরই এই দিনটি তাঁর মৃত্যু দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন কংগ্রেস কর্মীরা। এদিনও তার অন্যথা হলনা, বেহালার জয়কৃষ্ণ পাল রোডে রঘুনন্দন তেওয়ারির ছবিতে মাল্যদান ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান অগণিত কংগ্রেস কর্মী।
প্রসঙ্গত: রঘুনন্দন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পরই এই মৃত্যু নিয়ে সোচ্চার হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর নানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক পটভূমিকে আরও শক্ত করেন বলে কংগ্রেস কর্মীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে যাকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় পর্বের আন্দোলনের সূচনা…. পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসেও সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রঘুনন্দনের পরিবারের কাউকে আজ পর্যন্ত একটা সরকারি চাকরি দেননি বলে অভিযোগ কংগ্রেস কর্মীদের।
পূর্ব বেহালা ব্লক কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি বিদ্যুৎ মিত্র জানান, ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের সোমনাথ চট্টোপাধ্যাযকে পরাজিত করে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচত হন। কিন্তু পরেরবার (১৯৮৯) লোকসভা নির্বাচনে তিনি সিপিএমের মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে এই যাদবপুর কেন্দ্রেই পরাজিত হন। পরাজিত হওয়ার পরই তাঁর আন্দোলন যেন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তারপরেই ১৯৯০ সালের ১ আগস্ট বাম সরকারের বিরুদ্ধে বাস ভাড়া ও মূল্য বৃদ্ধির এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই উঠে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, রঘুনন্দননের মৃত্যুর পরের দিনই অর্থাৎ ২ আগস্ট কংগ্রেস নেতা পঙ্কজ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহালা থানা অবরোধ করে ওসি’র চেয়ার দখল করে বসে পড়েন।
এরপর ১৬ আগস্ট কংগ্রেসের ডাকে কলকাতা বন্ধের দিন হাজরায় আক্রান্ত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের লালু আলমের লাঠির আঘাতে মাথা ফাটে তাঁর। ভর্তি করা হয় নার্সিং হোমে… সংবাদমাধ্যমে প্রচারের বন্যা বয়ে যায়। এরপরই তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নজরে পড়ে যান। এরই মধ্যে এসে যায় লোকসভা নির্বাচন। ১৯৯১ সালে যাদবপুরের বদলে জয়ের পক্ষে কিছুটা “সেফ” সিট দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে…. শুরু হয় তাঁর দ্বিতীয় পর্বের উত্থান…. এমনটাই দাবি বিদ্যুৎ মিত্রের।
বিদ্যুৎ বাবু আরও বলেন, এরপর তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শুধুই ইতিহাস আর উত্থানের পর্ব। তবে এইসঙ্গেই তিনি বলেন, রঘুনন্দন শ্যামাপ্রসাদ কলেজে পড়তো। ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়েই ও নিহত হয়েছে। ওদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়…. বছর তিনেক আগে তাঁর বাবাও প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন, তবে সেইসময় কংগ্রেস কর্মীরা কিছুটা সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন। তবে ক্ষমতায় আসার পর এসব জেনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আজ পর্যন্ত তাদের পরিবারের কাউকে একটা সরকারি চাকরি দিলনা…এটাই আক্ষেপের।
প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক সৌমেন বিশ্বাস বলেন, “এই দিনটিতে আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের সহকর্মী বন্ধু রঘুনন্দনকে। এই দিনটি আমাদের কাছে অভিশপ্ত ও বেদনাময়। আজ ৩১ বছর পরেও তাঁকে আমরা ভুলতে পারিনি। তাই প্রতি বছরই এইদিনে তাঁর প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি….”।
রঘুনন্দন তেওয়ারির মৃত্যু দিবস পালন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক সৌমেন বিশ্বাস, প্রাক্তন ব্লক কংগ্রেস সভাপতি বিদ্যুৎ মিত্র, খোকা মণ্ডল, শুভাশিস মুখার্জী, তানভীর খালেক, সমাদ্রি মণ্ডল, মিন্টু মণ্ডল, গোষ্ঠ জানা প্রমুখ কংগ্রেসের অগণিত নেতা ও কর্মী।