নিউজ ডেস্ক:- ত্রিপুরার শাসক দল বিজেপির ভাঙ্গন হতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। বেশ কয়েকদিন ধরে ত্রিপুরার রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস ওই রাজ্যের সংগঠন করার কাজ শুরু করতেই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিজেপি দলের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে কারণ বিপ্লব দেবের সরকারের কাজকর্ম নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এবার বিপ্লব দেব সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত তোপ দাগলেন বিজেপি নেতা সুদীপ রায় বর্মন। সুদীপ শুধু বিজেপি নেতা নন তিনি একজন বিধায়ক একইসঙ্গে মন্ত্রীও ছিলেন রাজ্যের। এই সুদীপ বর্মন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি বিপ্লব দেবকে আক্রমণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তাতে তিনটি মূল প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি। স্থানীয় ভাষা হিসাবে ওই পরীক্ষায় কীভাবে ইংরাজি স্থান পেল, সে প্রশ্ন তুলেছেন। পরীক্ষার সিলেবাস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কেন সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সিলেবাসের পরিসীমা নির্দিষ্ট নেই, সেই প্রশ্নও তোলেন বিধায়ক। এছাড়া স্থানীয়দের অধিকার কেন নিশ্চিত হল না পরীক্ষাতে সে প্রসঙ্গেও ক্ষোভ উগড়ে দেন সুদীপ।
এ প্রসঙ্গে টুইট করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তিনি লেখেন, “সরকারি চাকরির পরীক্ষা নিয়ে বিজেপি বিধায়ক সুদীপ বর্মনের পোস্ট। কী অবস্থা! মুখ্যমন্ত্রীকে জরুরি বিষয় বলার সুযোগ দলের সিনিয়র বিধায়কেরই নেই। পোস্ট করতে হয়।”
ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলে বিপ্লব দেব বনাম সুদীপ বর্মন এর লড়াই সর্বজনবিদিত। 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে যদি বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত না হতো তাহলে ত্রিপুরা সরকারের নেতৃত্বে ভেঙে যেত বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সুদীপ বর্মন এর মুখ খোলায় পরিস্থিতি যে জোরালো হতে চলেছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সুদীপ বর্মন যদি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয় তাহলে বিজেপির পরিস্থিতি এই রাজ্যে যে আরও খারাপ হবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
সিপিএম, কংগ্রেস এমনকী বিজেপি ছেড়েও অনেকে তৃণমূলে যোগ দিতে ইচ্ছুক, গত কয়েকদিন ধরে এমনই দাবি করছে ত্রিপুরা তৃণমূলের (Tripura Tmc) শীর্ষ নেতারা। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন জিতেন সরকার (Jiten Sarkar) যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূলের সঙ্গে৷ এর পরেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে ত্রিপুরায়৷ সত্যিই কি জিতেন সরকার যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে? সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না দীর্ঘ দিনের রাজনীতিবিদ জিতেন বাবু নিজেও। তবে বাংলার সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক বলতেই তিনি বলছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের কথা৷
তাঁর কথায়, ‘আমি দীর্ঘ সময় ওনার সাথে কাটিয়েছি। বিদেশে অবধি গেছি৷ ওনার থেকে বাংলার রাজনীতির স্বাদ আমি পেয়েছি৷’ জিতেন বাবু একটা সময় বামেদের হয়ে ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকার ছিলেন৷ আপাতত তিনি অবশ্য বিজেপি নেতা বলেই পরিচিত। বাংলার রাজনীতির স্বাদ পাওয়া এই ব্যক্তি অবশ্য বুঝতেই পারছেন তৃণমূলের ত্রিপুরা দখলের পরিকল্পনা। তবে বিজেপির নেতাদের কখনও বিমানবন্দরে নামলে তৃণমূল নেতাদের তালিবানি কায়দায় আক্রমণ বা গাড়ি ভাঙচুর বা হোটেলে থাকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
জিতেন বাবু জানিয়েছেন, “এই সব আচরণের নিন্দা মানুষই করবে৷ মানুষ এই সব ভালো চোখে দেখে না। যে বা যারা এই সব করছেন তাদের অবিলম্বে বিরত হওয়া উচিত।” তাঁর কথায়, ‘বামেরাও একটা সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন আচরণ করেছিল। মানুষ মেনে নেয়নি। বিজেপিকেও বুঝতে হবে সুযোগ পেলে নিজেকে রক্ষা করতে সবাই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে৷ তবে সেটা গণ প্রতিরোধ হলেই মুশকিল হবে। জিতেন বাবুর কথায়, “দলকে অনেকবার বলেছি এমনটা না করতে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। আমি রাজ্য সভাপতিকে বলেছি৷ দীর্ঘদিনের রুলিং পার্টিকে মানুষ কিন্তু এই কারণেই হারিয়ে দিল। প্রাণ রক্ষার জন্যে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ ভয়ংকর হয়ে যায়৷ এই সব গুন্ডামি করলে, মানুষ পথে নামবে। সিপিএম যা করত, বিজেপি এখন তা শুরু করেছে। এটা একদম ঠিক নয়।” দলের প্রতি তার এই বক্তব্য অনেকেই মনে করছে তিনি বিরক্ত৷ প্রায় ৬০ বছর ধরে ত্রিপুরার রাজনীতির সাথে যুক্ত জিতেন বাবু ‘পরিবর্তন’ এর পক্ষে সওয়াল করেন কিনা নজর এখন সকলের সেদিকেই৷ বাংলার পর এবার ত্রিপুরা। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরাই এখন তৃণমূলের পাখির চোখ। ত্রিপুরার আসন্ন ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপ্লব দেবের সরকারকে হারানোই এখন এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূল শিবির। পড়শি রাজ্যে নিজেদের সংগঠন মজবুত করতে সর্বশক্তি দিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে ঘাসফুল শিবির। আর সেই সূত্রে তৃণমূল সক্রিয়তা চোখে পড়ছে ত্রিপুরার বাকি রাজনৈতিক দলগুলির ‘অখুশি’ নেতা-কর্মীদেরও। তাই তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে।
ইতিমধ্যেই সুবল ভৌমিকের মতো নেতা চলে এসেছেন ঘাসফুল শিবিরে। এবার ত্রিপুরার প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং পাঁচ বারের বিধায়ক জিতেন সরকারের তৃণমূলে আসা নিয়েও জল্পনা প্রবল হয়ে উঠেছে।জিতেন সরকারের দলবদল নিয়ে শোরগোলের কারণ স্বয়ং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকেই জিতেন সরকারের প্রসঙ্গ আনেন মমতা। জানান, ত্রিপুরার প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং পাঁচ বারের বিধায়ক জিতেন সরকার তাঁর বেশ কিছু অনুগামীকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে তাঁকে চিঠি দিয়েছেন৷