মমতাকে বাঁচিয়ে আমি তো কোনও অন্যায় করিনি, একুশে জুলাই দিনটি এলেই মন খারাপ হয়ে যায়

Spread the love

*মমতাকে বাঁচিয়ে আমি তো কোনও অন্যায় করিনি, একুশে জুলাই দিনটি এলেই মন খারাপ হয়ে যায় সিরাজুলের*

অয়ন বাংলা ,নিউজ ডেস্ক:- তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী তথা আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গুলির হাত থেকে বাঁচাতে নিজের হাতের বন্দুক তাক করেছিলেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার দীনেশ বাজপেয়ীর দিকে৷ মমতা বেচেঁ ছিলেন ঠিকই তবে তার খেসারত দিতে হয়েছে সিরাজুলকে৷ ১৯৯৬ সালে ২৩ বছর আগে চাকরি খুইয়ে এখন অভাবের সাথেই তার নিত্য লড়াই। গত ২৩ বছর ধরেই এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সেদিনের যুবক সিরাজুল মণ্ডল। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার, গোবরডাঙ্গা ইছাপুর ভদ্রডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল।

চাকরিতে যোগদান ১৯৮৮ সালের ১৯ শে জানুয়ারি। চাকরি হারিয়ে নিজের আর সংসার করা হয় নি। ৮৪ বছরের বৃদ্ধ বাবা ইসরাইল মন্ডল ও ৭০ বছরের বৃদ্ধ মা রুপভান মন্ডল সরকারী সাহায্য থেকে বঞ্চিত এই দুই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা৷ সিরাজুলের আক্ষেপ চাকরি নেই কোন মতে দিনমজুরি করেই দিন গুজরান হয় বৃদ্ধ বাবা-মা বার্ধক্য ভাতা টুকুও পাননি। আপাতত যখন যে কাজ পান তাই করেই দিন চলে তাঁর।

এদিন সিরাজুল জানান, আজ থেকে ২৬ বছর আগে একুশে জুলাই ১৯৯৩ সালের ঘটনা৷ সেদিন পুলিশকর্মী সিরাজুলের ডিউটি ছিল রাইটার্স বিল্ডিং-এর সামনে তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন। ব্রাবন রোড দিয়ে যাবার সময় তাদের পথ আটকায় পুলিশ শুরু হয় বচসা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে মাথা ফাটে মমতার। বিনা প্ররোচনায় লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসআই নির্মল বিশ্বাস, সার্জেন্ট প্রদীপ সরকার এবং কনস্টেবল সিরাজুল মন্ডল। মমতাকে বাঁচাতে সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৎকালিন কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দিকে নিজের বন্দুক তাক করেছিলাম সেটাই আমার বড় অপরাধ।

২৩ বছর আগে চাকরি হারিয়ে এখন অভাব তার নিত্যসঙ্গী। রাজ্যে পালাবদলের পর মিলেছিল সাহায্যের প্রতিশ্রুতি কিন্তু বাস্তবে সে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি’। স্বাভাবিকভাবে একুশের মঞ্চে ব্রাত্য সিরাজুল। হারানো চাকরি ফিরে পেতে মমতার বাড়ি থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে আজ ক্লান্ত। গত বছরও গেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এর সাথে দেখা করতে। তার দপ্তরে জমা দিয়েছেন প্রয়োজনিয় কাগজ। তবুও চাকরি ফিরে পাননি সিরাজুল। ১৮ বছর আইনি লড়াই চালিয়ে চাকরি ফিরে পেয়ে ছিলেন নির্মল বিশ্বাস, সরকারী কোন প্রমোশন ছাড়াই প্রদীপ সরকার অবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন। আর সিরাজুল ইসলাম হাইকোর্টে মামলা করেও টাকার অভাবে বেশিদিন মামলা লড়তে পারেন নি।

এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত, সামলেছেন বুথ সভাপতির দায়িত্ব। প্রয়াত তৃনমুল সাংসদ কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আক্ষেপ সেদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের পরিবারকে চাকরি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি তো নতুন চাকরি চাইছি না আমার হারানো চাকরি ফেরত পেতে চাইছি, তাই চাকরি ফেরত পাবার আশায় আজও দিন গোনেন সিরাজুল। বাঁশের বেড়া দেওয়া টিনের ছাউনির এক চিলতে ঘরে আজও গুছিয়ে রাখেন সেদিনের খাকি পোশাক৷ স্বাভাবিকভাবেই একুশে জুলাই দিনটি এলে মন খারাপ হয় সিরাজুলের আক্ষেপের সুরে বলে ওঠেন আমি তো কোনও অন্যায় করিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.