বিচারের_বাণী_নীরবে_নিভৃতে_কাঁদে:-লিখেছেন কুমারেশ চক্রর্বতী

Spread the love

#বিচারের_বাণী_নীরবে_নিভৃতে_কাঁদে

অয়ন বাংলা ,পাঠকের কলম:- “প্রতিদিন ভোর ৬ টায় স্বামীজি আমাকে নগ্ন হয়ে ম্যাসাজ করতে বলতেন।এর আগে রাত আড়াইটে থেকে চলতো উদ্দাম সেক্স।আমি যন্ত্রণায় কাতরে উঠলে,উনি আনন্দ পেতেন।ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে যথেচ্ছ হারে চড়-থাপ্পড় মারতেন।দরজার বাইরে পাহারায় থাকতো বন্দুকধারীরা।এই অত্যাচার থেকে বাঁচার উপায় বের করেছিলাম,আমি বলতাম ঋতুস্রাব চলছে।সেই কদিন ছাড় পেতাম।অন্য সময় বলতাম মূত্রনালীর সংক্রমণে ভুগছি।তখন স্বামীজি ভয়ে ছেড়ে দিতেন।”
— এই নৃশংস শিউরে ওঠার মতো বিবৃতিটি হলো বছরের ২৩ এর এক প্রবল সাহসিনীর।যিনি প্রবল শক্তিধর,ক্ষমতার স্তম্ভ এক অত্যাচারীর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক প্রতিকূলতাকেও জয় করে সামনে এনেছেন এই বিভৎস ঘটনাকে।
এই নৃশংস,জানোয়ারসুলভ ঘটনার মূল কান্ডারি ৭২ বছরের প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী,তিনবারের সাংসদ তথা বিজেপি নেতা স্বামী চিন্ময়ানন্দ।
২৩ বছরের ওই প্রবল সাহসী মেয়েটি চিন্ময়ানন্দ প্রতিষ্ঠিত একটি আইনের কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

প্রতিদিন রাত দুটোর পর মেয়েটিকে জোর করে চিন্মায়নন্দের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো যৌনসুখ প্রদানের জন্য।যেতে না চাইলেই চলতো পাশবিক অত্যাচার।রাত দুটো থেকে টানা ধর্ষণ চলতো, তারপর ১ ঘন্টা বিশ্রাম।আবার সকাল ৬ টায় নিয়ে যাওয়া হতো স্বামীজির কাছে। যেখানে শুরু হতো ‘সেবা’।মেয়েটিকে স্বামীজি প্রথমে নগ্ন করে দিতেন তারপর ম্যাসাজ করতে বলতেন।

গত বছরই একবার এই ঘটনা নিয়ে মেয়েটি মুখ খোলে কিন্তু প্রমাণের অভাবে কোন গুরুত্বই পায়নি অভিযোগ।ভেবে নিন এরপর মেয়েটির সাথে ঠিক কী হয়েছে। কিন্তু ওই যে মেয়েরা অন্যরকম এক সহ্যশক্তি দিয়ে তৈরি।ইনি তো আবার সাহসিনী সুতরাং উনি হারেননি।স্পাই ক্যামেরা কিনে পুরো ঘটনা ক্যামেরা বন্দি করে তা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।স্বামী চিন্মায়ানন্দ গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু! তারপর??
যে মেয়েটি এত অত্যাচারিত হলেন,এত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে এত বড়ো অন্যায় কে সামনে নিয়ে এলেন তিনি এখন তোলাবাজির কেসে জেলে!!

এ কোন দেশ? এ কীসের আইন। নির্লজ্জের মতো যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনের এই ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার একটিই অর্থ চিন্ময়ানন্দের সাথে নিজের নেতাকে আড়াল করার অপরাধে সমান অপরাধী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। হয়তো সদ্য লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশ আসন পেয়ে উনি আবার সেই মুলায়ম আমলের জঙ্গলের রাজত্বে ফিরে যেতে চাইছেন।তবে সত্যিই যদি এই ঘটনাকে আড়াল করা হয় তবে মানুষ এর কঠোর জবাব দেবে।

মেয়েটি সমস্ত প্রমাণ পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন “বিচারের প্রত্যাশা আমি করিনা!!” হয়তো মেয়েটি ১০০ ভাগ ঠিক। হয়তো মেয়েটি সত্যিই বিচার পাবে না।হয়তো সত্যিই সমাজ বিচার পাবে না। কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতাবানের বিরুদ্ধে এই দেশে সাধারণ অত্যাচিরত মানুষগুলো চিরকাল অসহায়ের মতো বিচারের আশায় কাঁদে।

হয়তো চিন্ময়ানন্দও পরবর্তীতে মুক্তি পাবে আর তারপর নারীকল্যাণ কিংবা সংস্কৃতির মতো দপ্তর পাবে।
আর অন্যদিকে তাপসী মালিক,রিজওয়ানুরের মায়ের মতো কিংবা পার্কস্ট্রিটের সেই ধর্ষিতা বা মধ্যমগ্রামের অভাগী ওই মেয়েটির মতো এই আইনের ছাত্রীটি আর তার মা ও কেঁদে কেঁদে বোকার মতো অপেক্ষায় থাকবে কোনদিন বিচার পাবো এই ভেবে।

রাণু মন্ডল,সোনাক্ষী সিনহার রামায়ণ অজ্ঞতা,যাদবপুরে বিশৃঙ্খলা,রাজনৈতিক রঙ বা আমার কী বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন এই মর্মান্তিক ঘটনা? শুধু বলবো ভাবুন আপনার বাড়ির কোন এক মেয়ের সাথে,আপনার কোন প্রিয়জনের সাথে কিংবা আপনার প্রেমিকার সাথে এই ঘটনা ঘটেছে।এখনও মনে হচ্ছে চুপ থাকাই উচিত? যদি তাই মনে হয় তবে চুপই থাকুন!

#কুমারেশ_চক্রবর্ত্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.