অয়ন বাংলা,নিউজ ডেস্ক:- মিনাল দাকাভে ভোসলে। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ লোকই এখনো এই নামটা জানে না। অবশ্য না জানাটাই স্বাভাবিক। ইনি কোনো ফিল্মস্টার নন, ইনি কোনো খেলোয়ার নন, সোজা কথায় বলতে গেলে ইনি কোনো সেলিব্রিটিই নন।
আচ্ছা যাক, বাদ দিন। এঁকে নাহয় চেনে না, কিন্তু পুনের mylab এর নাম অনেকেই শুনে থাকতে পারেন৷ বিশেষত করোনা ভাইরাস পজিটিভ ডিটেকশনের ক্ষেত্রে এই সংস্থা এক যুগান্তকারী কাজ করে ফেলেছে। করোনা ভাইরাসের টেস্টিং কিট মার্কেটে নিয়ে এসেছে এই সংস্থা। এরা সপ্তাহে এক লক্ষ টেস্টিং কিট সাপ্লাই দিতে পারবে, প্রয়োজনে সেটা দু লক্ষও করতে পারবে বলে তারা জানিয়েছে। একেকটা কিট দিয়ে একশ জনের টেস্টিং করানো যাবে। টেস্ট এর রেজাল্ট আসতে সময় নেবে আড়াই ঘন্টা। মানে সকালে টেস্ট করতে দিয়ে বেলার মধ্যে টেস্টের রেজাল্ট পাওয়া যাবে। খরচ পড়বে বারোশ টাকা। এতদিন COVID-19 ডিটেকশনের টেস্ট করা হত বাইরে থেকে আমদানি করা কিট দিয়ে যেখানে টেস্টের রেজাল্ট জানতে সময় লাগত ৫-৬ ঘন্টা আর খরচ পড়ত ৪৫০০ টাকা। এতে করে খুব কম টেস্টও করা যেত। এখন Mylab এই টেস্ট কিট বাজারে আনার ফলে হয়ত করোনা পজিটিভের সংখ্যা হু হু করে বাড়বে, কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। ডাক্তাররা সবাই একটা জায়গায় একমত ছিলেন যে লকডাউন প্রসেসের পাশে টেস্ট টেস্ট অ্যান্ড টেস্ট এটা চালিয়ে যেতে হবে। যত সংখ্যক করোনা পজিটিভ রোগীকে আইডেন্টিফাই করা যাবে ততই তাদের আইসোলেশন এবং ট্রিটমেন্ট দুটোই করা যাবে। তাতে ট্রান্সমিশনটাকে কিছুটা হলেও আটকে দেওয়া যাবে।
আসলে বিজ্ঞান কোনো ভবিষ্যতের কথা শোনায় না। যেটা ফ্যাক্ট সেটাকেই তুলে ধরে। তাতে মানুষের খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। এখনো অব্দি ফ্যাক্ট এটাই যে ভারতের রোগীর সংখ্যা এখনো ইউরোপ বা আমেরিকার মত নয় কারণ ভারতে টেস্টের সংখ্যা খুবই কম। আমেরিকায় যেখানে গত সপ্তাহে ৫ লক্ষ লোকের টেস্ট হয়েছে, ভারতে সেখানে হয়েছে ২৭ হাজার লোকের৷ এরপর Mylab এর টেস্টিং কিট দিয়ে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হবে তখন হয়ত হু হু করে সংখ্যাটা বাড়বে।
তা যাক গে, প্রথমে যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম। মিনাল দাকাভে ভোসলে। ইনি একজন ভাইরোলজিস্ট। ভাইরোলজিস্ট মানে যারা ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া এদের মত সাব মাইক্রোস্কোপিক পার্টিকল এবং তাদের জেনেটিক স্ট্রাকচার ক্লাসিফিকেশন ইভলিউশন এসব নিয়ে কাজ করে। Mylab এর সে টেস্টিং কিটের ডিজাইন প্রোজেক্ট যেটার নাম patho detect সেই প্রজেক্টের হেড। রাতদিন ল্যাবে পড়ে থেকে এই প্রজেক্টকে সাফল্যের মুখ দেখিয়েছেন তিনি।
একটা কিট কতটা ভরসাযোগ্য বাজারে আসার আগে তার একটা টেস্ট হয়৷ সেখানে একই স্যাম্পেলকে দশ বার টেস্ট করা হয়। দশবারই যদি একই রেজাল্ট আসে তাহলে কিট একদম ঠিক আছে। সেই পরীক্ষায় পাশ করে patho detect. রেকর্ড সময় ছ সপ্তাহের মধ্যে এই পুরো প্রজেক্টটাকে শেষ করা হয়েছে। মিনাল দাখাভে ভোসলের সাফল্য এটাই।
এটুকু বলেই হয় শেষ করা যেত। তাতেও এই বৈজ্ঞানিককে জাতির আইকন বললেও বলা যেতে পারত। কিন্তু শেষ করার আগে আরেকটু কিছু বলতে হয় এঁর সম্পর্কে। প্রজেক্টের ডেডলাইনের সাথে সাথে ওঁর নিজেরও ডেডলাইন এগিয়ে আসছিল। ওঁর ডেলিভারির ডেট। প্রজেক্টটা যখন FDA আর ড্রাগস কন্ট্রোল অথরটিকে জমা দেন কমার্শিয়াল পার্পাসের জন্য, তার কিছুক্ষণ পরেই তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। পরদিন সকালে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তার আগে ফেব্রুয়ারিতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রেগনেন্সির কিছু জটিলতা নিয়ে। কিন্তু একটু সুস্থ হতেই হাসপাতাল ত্যাগ করে ল্যাবে যোগ দেন। কারণ উনি জানতেন এই সময়ে দেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে। যত দেরি হবে ততই আমরা আরো বিপদের মধ্যে পড়ব। তাই সব কিছুকে উপেক্ষা করে পড়ে থেকেছেন ল্যাবে।