২০ সেকেন্ডেই বন্ধ হবে রক্তপাত, বর্ধমানের সাবিরকে স্বীকৃতি দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক

Spread the love

ওয়েব ডেস্ক:- বিশেষ ধরনের পাউডার জাতীয় পদার্থ। যার ব্যবহারে মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে ক্ষতস্থানের রক্তক্ষরণ। এই পাউডার আবিষ্কারের জন্য ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) সম্মানিত করল পূর্ব বর্ধমানের যুবক সাবির হোসেনকে। এই পাউডার ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের হামলায় জখম ভারতীয় সেনাদের ক্ষতস্থানের রক্ত দ্রুত বন্ধ করে তাঁকে প্রাণে বাঁচানো যাবে, এমনটাই মনে করছেন ডিআরডিওর আধিকারিকরা।

সম্প্রতি দিল্লির ডিআরডিও ভবনে ৪১ তম ডাইরেক্টরস কনফারেন্সে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সাবির হোসেনের হাতে মানপত্র তুলে দেন। ওই অনুষ্ঠানে ভারতের মুখ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, ডিআরডিও চেয়ারম্যান সতীশ রেড্ডি এবং দেশের জল, স্থল ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বাদুলিয়া গ্রামের আদি বাসিন্দা সাবির হোসেন। বর্তমানে বর্ধমান শহরের রসিকপুরে থাকেন তাঁরা। খণ্ডঘোষে রাইসমিল রয়েছে সাবিরের বাবা মোবারক হোসেনের। মা ইসমত আরা বেগম। খণ্ডঘোষের আনন্দমার্গ স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বর্ধমান সিএমএস হাইস্কুলে ভর্তি হন সাবির। সেখান থেকে মাধ্যামিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সাবির ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট থমাস ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সেখান থেকে ইলেকট্রিক্যালে বি-টেক কোর্স সম্পূর্ণ করার পর এনআইটি রৌরকেল্লা থেকে বায়োমেডিকেলে এম-টেক কোর্সও করেন সাবির। তিনি জানান, এনআইটি রৌরকেল্লায় পড়ার সময়েই সেখানকার প্রফেসর ডঃ দেবেন্দ্র ভার্মার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। তাঁরই অনুপ্রেরণায় রৌরকেল্লায় ‘মিরাকেলস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন সাবির। অভিনব কিছু তৈরির চিন্তাভাবনাও শুরু হয় তখন থেকেই। সাবির বলেন, ‘‘ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ দ্রুত বন্ধের জন্য যে প্রোডাক্টটি আমরা তৈরি করেছি, তার নাম ‘স্টপ ব্লিড’। এই প্রোডাক্টের জন্যই ডিআরডিও আমাকে ও আমার কোম্পানিকে সম্মানিত করেছে।’’

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম প্রতিরক্ষায় নানা উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে ডিআরডিও এখনও এমন উদ্ভাবনে আগ্রহী। সাবির বলেন, ‘‘এখন চিকিৎসকরা যে পদ্ধতিতে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ। আমাদের ‘স্টপ ব্লিড’ ব্যবহার করে ক্ষতস্থান থেকে মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব। এতে সংক্রমণ প্রতিরোধক ব্যবস্থাও রয়েছে। একে আরও উন্নত করার জন্য এখন গবেষণা চলছে।’’
একেবারে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই যে তাঁর এমন উদ্ভাবনের পিছনে, জানালেন তাও। সাবির বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে আমার বাবা মোবারক হোসেন দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হয়েছিলেন। প্রচুর রক্তক্ষরণে তাঁর বাঁচার আশা ছিল না। ওই দিনই বুঝেছিলাম দ্রুত ক্ষতস্থানের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা না গেলে কী ভাবে মানুষের জীবন সংকট তৈরি হয়।’’ সাবির জানান, তাঁর আবিষ্কার দেশের সেনাবাহিনীর কাজে এলে নিজেকে ধন্য মনে করবেন তিনি।

সাবির জানান, বিশেষ ধরনের একটি স্প্রে তৈরি নিয়েও গবেষণা করছেন তাঁরা। এই স্প্রে ব্যবহার করে অগ্নিদগ্ধ রোগীকে দ্রুত সারিয়ে তোলা যাবে। তবে এখনও তা গবেষণার পর্যায়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.