ওয়েব ডেস্ক. কলকাতা:- লকডাউন নিয়ে ঘোষণা নয়, তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ২১ মে অবধি রাজ্যকে তিন ভাগে ভাগ করে নজরদারি চালানো হবে ৷ রেড, গ্রিন ও অরেঞ্জ জোনে গোটা রাজ্যের সংক্রামিত এলাকাগুলিকে ভাগ করে একটি তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে রাজ্য সরকার ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিন জোনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চাই। স্বাস্থ্য দফতর এই নিয়ে শীঘ্রই নির্দেশিকা জারি করবে।’
লকডাউনের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘লকডাউন বাড়ানো কেন্দ্রের ব্যাপার ৷ তবে রাজ্য ২১ মে অবধি লকডাউনের পক্ষপাতী। তবে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর শরীরী ভাষা দেখে মনে হয়েছে লকডাউন অনেকদিন চলবে৷’ একইসঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এদিন ক্ষোভও উগড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বলেন, ‘কেন্দ্রের বক্তব্যে অস্পষ্টতা রয়েছে। কেন্দ্র একদিকে বলছে, লকডাউন ভালোভাবে মানতে হবে। আবার নির্দেশিকায় বলছে, কিছুক্ষেত্রে দোকানও খুলতে হবে। দোকান খুললে লোকে ভিড় জমাবে তাহলে লকডাউন মানা হবে কিভাবে! কেন্দ্রের বক্তব্যে তো কোনও স্পষ্টতা নেই। এরফলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’
১. করোনা সংক্রমণের হার অনুযায়ী রেড, অরেঞ্জ, গ্রিড- এই তিন ভাগে এলাকাগুলিকে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেটি রেড জোন। আর এই রেড জোনকেই বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে না বেরতে আবেদন জানান তিনি। বলেন, কোনও প্রয়োজন হলে বা বাজার এনে দিতে হলে যেন পুলিশকে জানানো হয়। তারাই ব্যবস্থা করবে।
২. এখন থেকে কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন কিংবা বাড়ির কারও শরীরে যদি এই মারণ ভাইরাস বাসা বাঁধে, তাহলে অন্যত্র না গিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন মমতা। তিনি বলেন, “যদি থাকার মতো জায়গা থাকে, তাহলে আক্রান্ত হলে বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকুন। কারণ সেটা অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গা। হাসপাতাল বা অন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে গেলে ঝুঁকি আরও বাড়ে। তবে বিষয়টা সরকারকে জানাতে হবে। সরকার একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেবে, যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।”
৩. ২১ মে পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে আগের মতোই সরকারি অফিসে কাজকর্ম চলবে। স্কুল-কলেজ যেমন বন্ধ রয়েছে, তেমনই থাকবে। আরও কিছু অফিস খোলা হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে অফিস খুললেও সমস্যা হবে না, তা দেখা হবে।
৪. করোনা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে নজর রাখতে কোভিড ম্যানেজমেন্ট ক্যাবিনেট কমিটি তৈরি করা হল। যার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলেন অমিত মিত্র। থাকবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ও ফিরহাদ হাকিম। এছাড়া কমিটিতে রাখা হচ্ছে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসবিচ ও স্বাস্থ্যসচিবও।
৫. শুধু অত্যাবশ্যকই নয়, অনাবশ্যক সামগ্রীরও এবার রাজ্যে হোম ডেলিভারির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। যাতে বাড়ি বসেই মানুষ সব জিনিস পান, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
৬. ছোট দোকানগুলি সব খোলা হবে কি না, তা কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানতে পারলে জানানো হবে। তবে ২১ দিনের মধ্যে যে জায়গাগুলিতে কোনও নতুন কেস হয়নি, সেসব এলাকায় দোকান খুলে দেওয়া হবে।
৭. মুখ্যমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ রাখা, ট্রেন পরিষেবা এবং আন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বন্ধ রাখার দাবি জানাবেন তিনি। রাজ্যের মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজন হলে অনুমতি দেওয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে রাজ্যকে জানাতে হবে।
নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কেন্দ্রের কাছ থেকে কিছু বিষয় স্পষ্ট করে জানতে চেয়েছে রাজ্য সরকার ৷ সে বিষয়ে স্পষ্ট করা হলেই ৷ নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর পরশু দিন অর্থাৎ বুধবার লকডাউনের মেয়াদ বা করোনা ঠেকাতে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আরও সুস্পষ্টভাবে জানানো হবে ৷
সৌজন্য:- সংবাদ প্রতিদিন