ইসলাম ও সাম্যবাদ:ডা:রফিকা খাতুন (BHMS)
ইসলাম সম্পর্কে যত গভীর ভাবে জানছি ততই অবাক হচ্ছি। বহু বিষয়ের মধ্যে সাম্যবাদী চিন্তাধারা আমার কাছে খুবই বিস্ময়কর! শুধু বিস্ময়কর নয়, তা অতি বাস্তবসম্মতও বটে। পার্থিব জীবনে ইসলাম যেমন সবাইকে তার প্রাপ্য অনুযায়ী অধিকার দিয়েছে; ঠিক তেমনভাবেই পারলৌকিক জীবনেও দিয়েছে সমান অধিকার। ইসলাম সবকিছুর সাথে একটা ভারসাম্য রেখেছে।আমরা যদি উপলব্ধি করার চেষ্টা করি তাহলে দেখব যে, ইসলাম শ্রমিকদের যেমন নিষ্ঠার সাথে কাজের নির্দেশ দেয়, ঠিক সেভাবেই মালিককেও নির্দেশ দেয় সময়মতো তার পারিশ্রমিক দিতে। হয়তো ভাবছেন! এটাতো সাধারণত যেকোনো মানুষই করে থাকেন। তাহলে এটাতে ইসলামের বিশেষত্ব কি আছে? হয়তো আপনি ইসলাম সম্পর্কে এতোটুকুই জেনেছেন। একটু এগিয়ে চলুন; ইসলাম শুধু নির্দেশ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি। শ্রমিকের জন্য বাস্তবসম্মত বিধানও দিয়েছে, জেনে নিই ইসলাম এখানে কি বিধান দিয়েছে? ইসলামের নির্দেশ হলো, কাজটি যদি শ্রমিকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়, তাহলে মনিবকেও শ্রমিকের কাজের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর, ইসলামে এরকম সাম্যের বিধান আমরা সবক্ষেত্রেই দেখতে পাব।
ইসলামে মা-বাবাকে যেমন সন্তানের লালন পালনের নির্দেশ দিয়েছে, ঠিক তেমনি ভাবে সন্তানদেরও মা- বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রেও আমরা একই নিয়ম দেখতে পাবো। স্ত্রীকে বলা হয়েছে স্বামীর সন্তুষ্টিতে তুমি জান্নাতী। স্বামীর অসন্তোষে তুমি জাহান্নামী। আবার স্বামীকেও বলা হয়েছে, উত্তম হতে হলে স্ত্রীর নিকট উত্তম হতে হবে, নতুবা তুমি অনুত্তম।
দাসকে বলা হয়েছে মনিবের কাজ নিষ্ঠার সাথে পালন করতে, আবার মনিবকে বলা হচ্ছে অধীনস্তদের প্রতি সদয় হতে। মনিব তুমি যা খাবে, তাকেও তাই খাওয়াবে ,যা পরবে তাকেও তাই পরাবে। এমন সাম্যের নির্দেশ আমরা ইসলামের সবেতেই লক্ষ্য করব। হোক তা ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যকার, কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান থেকে সাধারন প্রজার।
এগুলো তো পার্থিব জীবনে পরস্পরের মধ্যেকার সমতামাফিক সামঞ্জশীল নিয়মাদি। শুধু তাই নয়, ধনী-গরিবের পার্থক্য নিরূপণ এ মোহময়ী পৃথিবীর, স্রষ্টার কাছে নয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, এক দিরহাম কখনো লক্ষ্য দিরহামকে অতিক্রম করে যেতে পারে। সাহাবীরা বিস্ময় ভরা নেত্রে জিজ্ঞাসা করলেন, তা কিভাবে সম্ভব ইয়া রাসুলুল্লাহ? রাসূলুল্লাহ সা : বললেন, যে ব্যক্তির কাছে মাত্র দুই দিরহাম আছে, আর সে এক দিরহাম দান করে দিল; অপরদিকে এক ব্যক্তির অঢেল সম্পদের মধ্য হতে এক হাজার দিরহাম দান করল। এখানে প্রথম ব্যক্তি তার সম্পদের অর্ধেক দান করলো, বাকি অর্ধেক দিয়ে তার পক্ষে দিন গুজরান কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লো ।অপরদিকে সম্পদশালী ব্যক্তিটি তার অঢেল সম্পদের মধ্য হতে কিছুটা দান করেছে এবং তার কাছে বাকি অনেক সম্পদ থেকে গেছে যা দিয়ে সে স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। এখানে আল্লাহর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য দান গরিবের দান। অন্য একটি হাদীসে দেখব যে, রাসূলুল্লাহ সা : এক জিহাদে বের হলে তাতে কিছু সাহাবী রা: যোগ দিতে পারেননি, কারন শারীরিক অসুস্থতা। তাদের সম্পর্কে রাসূল সা : বললেন, এমন কিছু ব্যক্তি মদীনায় রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর কর এবং যে প্রান্তরই অতিক্রম কর,তারা তোমাদের সাথেই আছেন, শুধুমাত্র রোগ তাদেরকে আটকে রেখেছে।
মেয়েদের ব্যাপারেও দেখব যে, তারা জিহাদে অংশগ্রহন না করেও তার সমপরিমাণ সওয়াব অর্জন করতে পারে। কারণ, যেহেতু শারীরিক ভাবে নারীদের দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। বস্তুতপক্ষে আল্লাহপাক হলেন ন্যায়পরায়ণ এবং শ্রেষ্ঠ বিচারক।
ইসলাম এভাবেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাম্যের ধর্ম হিসাবে পরিগণিত। আসুন! ক্বুরআন- হাদীস অধ্যায়ন করে আমরাও সাম্যবাদী হই। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের প্রকৃত সাম্যবাদী হবার তৌফিক দান করো।
ইসলামের নীতিমালা যতটা না সাম্যবাদভিত্তিক, তার চাইতে বেশি ইনসাফ বা সুবিচার ভিত্তিক ।
ধন্যবাদ
ঠিক