নিউজ ডেস্ক . শান্তিপুর, :- শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ সালে ৷ সেবার প্রথম গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছিলেন নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা অনুপম সরকার ৷ সেখান থেকে ২০১৯ এবং ২০২০ সাল ৷ পরপর তিনবার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুললেন পেশায় বাচিক শিল্পী অনুপম সরকার ৷ আর এই হ্যাটট্রিক করলেন ভারতের শহিদ জওয়ানদের স্মৃতিসৌধ অমর জওয়ান জ্যোতির প্রতিকৃত তৈরি করে ৷ ২ লক্ষ ২৭ হাজার ২৯০টি দেশলাই কাঠি দিয়ে এই প্রতিকৃত তৈরি করেছেন তিনি ৷
কিন্তু, হঠাৎ করে জওয়ানদের স্মৃতি সৌধ কেন ? এ নিয়ে অনুপম জানিয়েছেন, “২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জওয়ানদের উপর আত্মঘাতী সন্ত্রাস হানা নাড়া দিয়েছিল অনুপমকে ৷ এমনকি চিনের সঙ্গে চলতে থাকা ঠান্ডাযুদ্ধ অশান্ত করে তুলেছিল তাঁকে ৷ তাই ভারতীয় সেনাকে সম্মান জানাতে অমর জওয়ান জ্যোতি স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকা বা প্রতিকৃত তৈরি করেন অনুপম ৷ আর সেই প্রতিকৃত তৈরির জন্য দেশলাই কাঠি বেছে নেওয়ার পিছনেও রয়েছে এক অনন্য ভাবনা ৷ অনুপম বলেন, ‘‘সীমান্তে ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যুর মূল কারণ গান পাউডার বা বারুদ ৷ তাই তাঁদের সম্মানে বারুদকে ব্যাবহার করতে চেয়েছিলাম ৷ সেই ভাবনা থেকেই দেশলাই কাঠিকে বেছে নিয়েছিলাম ৷’’
মোট ২ লক্ষ ২৭ হাজার ২৯০টি দেশলাই কাঠি দিয়ে অমর জওয়ান জ্যোতি স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃত তৈরি করেছিলেন অনুপম ৷ একটি বিশেষ পদ্ধতিতে এই গণনা করা হয়েছিল ৷ এর আগে ২০১৮ সালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির বার্তা দিতে স্ট্যাপলারের পিন দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চেন তৈরি করেছিলেন তিনি ৷ বিশ্বের সকল ধর্মের মানুষকে একসূত্রে বাঁধার বার্তা দিয়ে ওই চেন তৈরি করেন শান্তিপুরের বাচিক শিল্পী ৷ এর পর ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছিলেন অনুপম সরকার ৷ যেখানে তিনি আপেলের বীজ দিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মালা তৈরি করেন ৷ পোল্যান্ডের এক শিল্পীর রেকর্ড তিনি এখানে ভেঙে ছিলেন ৷ জনস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ নেন তিনি ৷
অনুপম জানিয়েছেন, আপেল মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ৷ কিন্তু, আপেলের বীজ মানুষের শরীরের ক্ষতি করে ৷ কারণ আপেলের বীজে রয়েছে ক্ষতিকারক সায়নাইট ৷ যা ভুলবশত মানুষের শরীরে গেলে ক্ষতিকারক হতে পারে ৷ তাই জনস্বাস্থ্য সচেতনতায় আপেলের বীজ দিয়ে মালা তৈরি করেছিলেন তিনি ৷
তবে, দেশলাই কাঠি দিয়ে অমর জওয়ান জ্যোতির প্রতিকৃত তৈরি করে ২০২০ সালে অনুপম সরকার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তোলেন ৷ কিন্তু, করোনা তাঁর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ ২০২০ সালের অগস্ট মাসে তিনি জেলা প্রশাসনের সাহায্যে নিজের আবেদনপত্র গিনেসবুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অফিসে পাঠান ৷ সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে তাঁর তৈরি শিল্পকলায় ব্যবহার হওয়া দেশলাই কাঠি গোনা হয় এবং নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁর নাম তৃতীয়বারের জন্য গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ওঠে ৷ কিন্তু, করোনার কারণে সেই সম্মান তাঁর কাছে পৌঁছতে ১১ মাস দেরি হয়ে গেল ৷ রথের দিন অর্থাৎ ১২ জুলাই পোস্টের মাধ্যমে তাঁর হাতে এসে পৌঁছেছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তিন নম্বর শংসাপত্রটি ৷