কিডনি পাচার চক্রের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত, ২১ বছর পরে হদিস পেয়েও অধরা সেই পাচারকারীরা
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : ২১ বছর আগে কিডনি পাচার চক্রের পাল্লায় পড়ে একটি কিডনি বিক্রি করে টাকা পাননি বর্তমানে বাঁশদ্রণীর বাসিন্দা অরূপ কুমার দে নামের এক যুবক। এখন তার বয়স ৪২ বছর। ঠিক ২১ বছর পর গত ১০ আগস্ট ওই কিডনি পাচার চক্রের পান্ডাদের হদিশ পেয়েও পুলিশের নির্বিকার ভূমিকার জন্য পান্ডাদের লক আপে পুরতে পারা গেলনা বলে অভিযোগ প্রতারিত যুবকের।
অভিযোগে প্রকাশ, গত ২০০০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় “কিডনি চাই” বলে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়। দরিদ্র পরিবারের অসহায় যুবক অরূপ কুমার দে তখন বিজ্ঞাপনে দেওয়া ওই নম্বরে (৯৮৩১৩৬৪৯৮৪) ফোন করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপর কিডনি ম্যাচিং-এর নানা রকম রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদির পর তাকে নীতিশ চাউদা নামের এক ব্যক্তি জানায়, কিডনি দিলে তাকে ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। অরূপ তখন ২১ বছরের তরুণ যুবক। বাড়িতে অভাবের তাড়নায় ওই সময় সে তার বাড়িতে না জানিয়েই কিডনি দিতে রাজি হয়ে যায়। দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী নার্সিং হোমে তার অপারেশন হয়। তার একটি কিডনি বের করে ট্রান্সফারও করা হয় কিডনি রোগীকে। দিন দশেক নার্সিং হোমে কাটিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে অরূপ। ওরা তখন সোনারপুর থানা এলাকার সুভাষ গ্রামে থাকতো। যারা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল তারা ছিল দালাল চক্র আর দালাল চক্রের মূল পান্ডা ছিল নীতিশ চাউদা। অরূপকে সে আশ্বাস দিয়েছিল, নার্সিং হোম থেকে বাড়িতে ফিরলেই তার হাতে ৩ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু সুভাষ গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলেও ওই ফোনের সুইচ অফ বলে জানানো হয় বলে অভিযোগ অরূপের।
এই ঘটনার পর সে বহু জায়গায় সে নীতিশ চাউদা নামের ওই পাচারকারীর খোঁজ করতে থাকে। এমনকি থানা পুলিশেরও দারস্থ হয়েছিল বলে জানায় সে। তবুও বিগত ২১ বছর ধরে নীতিশের কোনও খোঁজ পায়নি প্রতারিত যুবক অরূপ। হঠাৎ গত ৮ আগস্ট আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনে ওই সেই একই নম্বরে (৯৮৩১৩৬৪৯৮৪) আবার “কিডনি চাই” বলে একটি বিজ্ঞাপনে তার চোখ পড়ে যায়। তারপরই সে নিজে কিডনি-দাতা সেজে ওই নম্বরে ফোন করে। তখন তাকে বলা হয় রুবি হসপিটালে দেখা করতে। ১০ আগস্ট অরূপ তার ২ জন বন্ধুকে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যায়। গিয়ে সে রুবি হসপিটালের পাশে একটি চায়ের দোকানে দেখা পায় রণবীর রজকের। রনবীর জানায় সে নীতিশ চাউদার এজেন্ট। বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় অরূপের কাছে। সে বুঝতে পারে বিগত ২১ বছর ধরে নীতিশ এখনও এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে আনন্দপুর থানায় কিন্তু বহুক্ষণ রণবীর নামের ওই যুবককে রাস্তায় ধরে রাখলেও কোনও পুলিশ আসেনি বলে জানায় প্রতারিত অরূপ। তারপর কিডনি পাচারচক্রি রনবীর রজকের ভবানীপুরের বাড়িতেও যায় অরূপরা, রণবীর তাদের নাকি জানিয়েছে, নীতিশ চাউদা বিরাটি এলাকায় থাকে। সমগ্র ঘটনাটি তখন তারা রণবীরের পাড়ায় জানিয়েও আসে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়েন্ট সিপি ক্রাইম (লালবাজার), রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সহ একাধিক দপ্তরে জানালেও এখনও পর্যন্ত কিডনি পাচারকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ… এমনটাই অভিযোগ অরূপের।
শেষ পর্যন্ত অরূপ নামের ওই প্রতারিত যুবক আমাদের সংবাদ দপ্তরে এসে জানায় “তখন আমার বয়স অনেক কম ছিল, তাই বুঝতে না পেরে ভুল করেছি। এখন বুঝতে পারছি শরীরের অঙ্গহানি হলে মানুষ কতটা অসুস্থ ও পঙ্গু হয়ে পড়ে। তাই আমি চাই অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত এই ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিক রাজ্য সরকার। অন্যথায় বহু অসহায় দরিদ্র মানুষকে টাকার লোভ দেখিয়ে শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দেবে এরা…..।”
NB : এই খবরে চোখ রাখুন…. বিশদে প্রকাশিত হবে এই প্রতিবেদন
![](https://ayanbangla.in/wp-content/uploads/2022/06/tea.jpeg)
![](https://ayanbangla.in/wp-content/uploads/2022/05/Ads.jpeg)