রক্তিমা দাস: হিন্দুত্ববাদকে কায়েম করে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক পূরণ করতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু আম বাঙালির কাছে যে এই পন্থা মোটেও সুবিধার হবে না তা বুঝিয়ে দিয়েছে বিধানসভা উপনির্বাচন। এবং এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বরাবরের মত এখনও নিজের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ বিজেপি। শনিবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতরের সামনের চায়ের দোকানে এমনই কিছু মত ব্যক্ত হল। চায়ে পে চর্চা মাতল তুঙ্গে। তবে তরজা জনসাধারণের।
এদিন জনসাধারণের চায়ে পে চর্চার প্রধান বিষয় বস্তু ছিল বিজেপি ও আরএসএস। নিজেদের সম্পূর্ণ ভিন্ন সংগঠন বলে দাবি করলেও আরএসএস ও বিজেপি যে একই পথের পথিক, একথা আজ স্বীকার করে নেন প্রত্যেকেই। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির কিছু বাঙালি কর্মকর্তারাও। তাদের কথায়, বিজেপির সভাপতি সহ প্রধান কার্যকর্তারা বরবরই এসেছেন আরএসএস-এর ব্যাক গ্রাউন্ড থেকে। তাই তাদের মধ্যে বরাবরই প্রকাশ পেয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদ। এই হিন্দুত্ববাদ দিয়েও প্রায় সারা দেশে অবাঙালির ভোট টানতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। কিন্তু সেখানে একটা সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ফল ছিল শূন্য, তার কারণ ছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদই। বর্তমানেও তাই। তাই পশ্চিমবঙ্গে ভোট টানার জন্য এই নীতিকে পাল্টানো দরকার। এই কথাই বুঝিয়েছেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া তৃণমূলের একসময়ের চাণক্য মুকুল রায়।
শুরুটা হয়েছিল ২০১৭ সালের এর নভেম্বরে। দলনেত্রীর সঙ্গে বিবাদের জেরে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেন তৎকালীন তৃণমূলের সেকন্ড ইন কমান্ড মুকুল রায়। সেই সময় তার সঙ্গেই দল ছেড়ে ছিলেন তার অনুগামীরা। তারপর থেকেই ভাঙ্গন ধরতে থাকে শাসক শিবিরে। চাণক্যের ভূমিকা পালন করে, একে একে তৃণমূলের প্রচর দাপুটে নেতাকে গেরুয়া শিবিরে টানতে থাকেন মুকুল রায়। বাদ যায়নি বিরোধী দলগুলোও। শুরু হয়ে যায় মুকুল ম্যাজিক। যার প্রভাবেই ২০১৪ সালে ২টি আসনের পর ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে এক লাফেই পশ্চিমবঙ্গে ১৮টি আসন পায় বিজেপি। কিন্তু এত কিছুর পরেও মুকুল রায়ের মতো ধুরন্ধর রাজনীতিবিদকে কাজে লাগাতে পারেনি দল। এদিন এমনটাই আফসোসের সঙ্গে ব্যক্ত করেন বিজেপির কিছু বাঙালি কর্মকর্তারা।
তৃণমূলের থেকে আসাদের মধ্যে মুকুল রায়ই একজন যিনি তৃণমূলের অন্দরের দুর্বলতাকে চেনেন জলের মতো স্বচ্ছভাবে। তাই তৃণমূলকে ভেঙে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা করতে তিনিই একমাত্র সক্ষম ছিলেন। কিন্তু বরাবরের মতো তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আগত নেতাদের বিশিষ্ট পদ দিতে নারাজ ছিল বিজেপি, যার মূলে ছিল আরএসএস। তবে মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে বিজেপির বরাবরই যে ভয়টা কাজ করেছে, সেটা হল মুকুল রায়ই এমন একজন যিনি একমাত্র পারেন তৃণমূলকে গুঁড়িয়ে দিতে। তেমনই তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি পারেন তৃণমূলকে নতুন ভাবে শিখরে নিয়ে যেতে। মুকুল পুনরায় ঘাসফুল ধরলে বিজেপির সব কথা যে ফাঁস হয়ে যাবে সেই ভয়েই মুকুলকে দূরে রেখে দিয়েছে দল, যা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠিত করতে বাধা হয়ে রয়েছে বলে এদিন মত প্রকাশ করেন রাজ্য বিজেপিরই কয়েকজন দলীয় কর্মকর্তারা। তাঁদের কথায়, মুকুল রায়ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি হিন্দুত্ববাদকে দুরে সরিয়ে রেখে পশ্চিমবঙ্গে তথা আম বাঙালির মধ্যে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন।