অমানবিক বাঙালি হিন্দুদের বিদেশি সাজাবার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি

Spread the love

বাসব রায়: এবিবি, তুলি, কবির, দারিদ্র্য দূরীকরণ, নোবেল, নোবেল-নয়, অনেক হল। রিফ্লেকটেড গ্লোরি ছেড়ে এবার একটু মাটিতে ফেরা যাক, ফেরা যাক আমাদের কথায়, যেখানে জীবন-মৃত্যু পাশাপাশি বসে আছে।

অসমের শোণিতপুর জেলার ঢেকিয়াজুলির কাছে আলিসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল পালের মৃত্যু ঘটেছে ডিটেনশন ক্যাম্পে, তেজপুরে। মৃত্যুর ছয়দিন পরেও তাঁর দেহ পড়ে আছে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেছনে ফুলেভরা দুটো কাঞ্চন গাছের মাঝে, মর্গে। কেন?
না, তাঁর তিন ছেলে-– অশোক, রোহিত, আশিসের বক্তব্য, বিদেশি হিসেবে তাঁকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে। তো তাঁকে বিদেশে পাঠিয়ে দাও। আর যদি তাঁকে, বাবাকে, ভারতীয় নাগরিক ঘোষণা করো তা হলে আমরা মৃতদেহ গ্রহণ করব। আমরা বিদেশির সৎকার করব না

দুলালচন্দ্র পালের মৃত্যুতে শোকে কাতর স্ত্রী বেলুরানি পাল বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা সাংবাদিকতায় পথিকৃৎ অমল গুপ্ত লিখেছেন, পরিবার সূত্রে জানা গেছে, একটি কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে লেখা আছে, ‘বিদেশির মৃতদেহ গ্রহণ করলাম’। এবং দুলালচন্দ্র পালের ছেলেরা স্বাক্ষর করেননি।
দুলালচন্দ্র পালের বাবা রাজেন্দ্রচন্দ্র পালের নামে ১৯৬৫ সালের জমির দলিল আছে, আছে মেয়াদি পাট্টা। তবু তাঁকে যেতে হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। অসমে তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ পর্যন্ত বলেছেন, ‘রাজ্যে বাঙালিদের খামোখা হেনস্থা করা হচ্ছে।’
হিন্দুত্ববাদী সরকার বিজেপি আজ বাঙালি হিন্দুদের বিদেশি সাজাবার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে। সীমান্ত পুলিশের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই, বিদেশি ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে ভূরিভূরি অভিযোগ, হতদরিদ্র পাল পরিবারের সবাই স্বদেশি, বাবা হয়ে গেলেন বিদেশি। বিজেপি সরকারের অদ্ভুত নিয়ম।

অসম বিধানসভাতে সরকার জানিয়েছিল, ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে, নগাঁওয়ের স্থায়ী বাসিন্দা নগেন দাসের আদি বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বলে সরকার দাবি করেছিল। বিদেশির কলঙ্ক মাথায় থাকা নগেন দাসের মৃতদেহ সৎকার করতে চাননি গ্রামবাসী। আজকের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এখন পাল পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সমস্ত মানুষ। বিজেপির বিধায়ক বিজয় সিংহল, বিধায়ক গণেশ লিম্বু, প্ৰদেশ কংগ্ৰেস সভাপতি রিপুন বরা, সাধারণ সম্পাদক অপূৰ্ব ভট্টাচাৰ্য, সারা অসম বাঙালি যুবছাত্র ফেডারেশন, আমসু, এমএসইউ-এর প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।


শোণিতপুর জেলার ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং জানিয়েছেন, বিদেশি ঘোষণার বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ারে পড়ে না। এটা বিদেশি ট্রাইব্যুনালের অধীনে, তাঁর কিছু করার নেই। কামরূপ মেট্রো বিষয়টি দেখছে। ২-১ দিনের মধ্যে কিছু একটা হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। আজ ৬ দিন পার হয়ে গেল, ত্রি-শান্তি পেরিয়ে গিয়েছে ছেলেরা আজও ‘ধরা’ পরেননি। কবে পারলৌকিক কাজ হবে? সারা দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্র অমানবিক কর্মকাণ্ড, আর অসমের মন্ত্রীরা ঝুমুর নাচে পা মেলাচ্ছেন! এই রাজ্যে বড় অপরাধ বাঙালি হওয়া!
আসুন, আমরা এদিকে, ক্লিন শেভড, সুন্দর চশমা লাগিয়ে ফেসবুকে সেলফি পোস্ট করি। আরও পড়ুন… যখন বুদ্ধিজীবীদের গর্জে ওঠার সময়, এঁদের প্রায় অধিকাংশই আশ্চর্য চুপ

(কভারের ছবিতে ডিটেনশন ক‍্যাম্পে মৃত দুলালচন্দ্র পাল এবং ঢেকিয়াজুলিতে তাঁদের বাড়ি। শব্দঋণ, তথ্যঋণ, ছবিঋণ, আরও কোনও ঋণ থাকলে, সব সাংবাদিক অমল গুপ্ত ও নয়া ঠাহর পত্রিকার কাছে, রইল।)

সৌজন্য’- মহানগর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.