CAB প্রযোজ্য হলে গোটা উত্তর-পূর্বে হিন্দু বাঙালিদের বিরুদ্ধে একটা বিদ্বেষ শুরু হবে

Spread the love

বাসব রায়: দু’দিনের গুয়াহাটি সফরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, ‘ঘুষপেটিয়াদের অসম থেকে বের করবেই কেন্দ্রীয় সরকার।’ এবং প্রায় একই নিশ্বাসে বললেন, ‘সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল (সিএবি বা ক্যাব) আমরা আনবই। যেখানে কাট-অফ ডেট থাকবে ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ।’ অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান থেকে ভারতে আগত সব অ-মুসলমান পাবেন নাগরিকত্ব।
গল্পটা এরকম: এনআরসি-ছুট অ-মুসলমানরা ক্যাব-এর সূত্রে হয়ে যাবেন ভারতীয় নাগরিক। ঘটনা হল এই বিলটি লোকসভায় পেশ করার আগে-পরে অসমের সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এখানকার সবচেয়ে প্রভাবশালী অরাজনৈতিক সংগঠন অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) ও কৃষক মুক্তি সংগ্রাম কমিটি প্রবল বিরোধিতা করেছে এই বিলটির। পরিস্থিতির চাপে পড়ে সরকার থেকে সরে আসেন এমনকী অসম গণ পরিষদের বিধায়করা। সেসময় এনআরসির খসড়া দ্বিতীয় তথা শেষ তালিকা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। সংবাদপত্র, টিভি এবং সোশাল মিডিয়ায় ঠারেঠোরে এই কয়টি দল-সংগঠনের নেতারা তখন বলেছিলেন, ‘এনআরসি-র কর্মীরা তো আর বিদেশ থেকে আসেননি, সবাই এই রাজ্যেরই মানুষ। তারা নিশ্চয়ই শুনানির সময় অত্যন্ত সতর্ক হবেন। জাতির কথা নিশ্চয়ই তারা ভাববেন।’
এবং ঠিক এই সময় থেকেই এনআরসি কর্মীদেরও ব্যবহার বদলে যেতে শুরু করে। এনআরসি প্রক্রিয়ার প্রথমদিকে কর্মীরা নাম ওঠানোর জন্য সবার আবেদন গ্রহণ করেছিলেন। সেই একই কর্মীরা শেষপর্বে এসে অনেক প্রামাণিক নথি গ্রহণ করতে চাননি, করেনওনি। খতিয়ে দেখার তো প্রশ্নই ওঠে না।

এত ভণিতা করে লাভ নেই, সরাসরি বলি, ক্যাব বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিধেয়ক আইনে পরিণত হলে ১৯৭১-২০১৪ এই সময়পর্বে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগত সব অ-মুসলমান নাগরিকত্ব পাবেন। এনআরসি-ছুট হিন্দুরা থাকবেন নিরাপদ আর মুসলমানদের দিতে হবে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র।
আর অসমে ১৯৭৯-১৯৮৫ যে রক্তস্নাত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার মূল কারণ ছিল ১৯৭১ সালের পরে আগত বাঙালি, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই অসম চুক্তি। এবং এনআরসি-র সর্বশেষ তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই আসু জানিয়েছে যে, নামহীনদের সংখ্যায় তারা খুশি নয়। সিএবি প্রযোজ্য হলে তো নামহীনদের সংখ্যা ৪-৫ লক্ষে চলে আসবে। সুতরাং আসুর পক্ষে সিএবি মেনে নেওয়ার কোনও যুক্তিই নেই।
যেমন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীও সিএবি মানতে পারেন না। কেন না ১৯৭১-২০১১ এই সময়পর্বে ভারতের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি নাগাল্যান্ডের বৃদ্ধি ৪১ শতাংশ। সিএবি প্রয়োগে আপত্তি জানিয়েছেন মেঘালয় এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীরাও।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বদ্ধপরিকর যে, সিএবি গোটা ভারতে প্রণয়ন করবেই। ভারতের হিন্দুদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিয়েছে এই সরকার। এবং এটা তারা কখনও গোপন করে না।
এবং সিএবি প্রযোজ্য হলে ত্রিপুরা বাদে গোটা উত্তর-পূর্বে হিন্দু বাঙালিদের বিরুদ্ধে একটা বিদ্বেষ শুরু হবে, হবেই, টের পাচ্ছি।
আর একটু যোগ করি, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪২তম সেশনের উদ্বোধন-ভাষণে কাউন্সিল-প্রধান মিশেল বাচেলেট বলেছেন, অসমে সাম্প্রতিক এনআরসি ভেরিফিকেশন প্রসেসের জন্য খুব অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ৩১ আগস্টের তালিকায় বাদ পড়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। ভারত সরকারের কাছে তাঁর আবেদন: আবেদন প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু নিয়মনীতির ব্যবস্থা, নির্বাসন (ডিটেনশন) বা বিতাড়ন (ডিপোর্ট) রোধ এবং দেশহীন হওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করুন। এসবই নিশ্চিত করুক সরকার।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য আগেই এর উত্তর দিয়ে রেখেছে যে, এনআরসি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে একটি বিধিবদ্ধ, স্বচ্ছ, আইনি প্রক্রিয়া। ‘এনআরসি-ছুট সবাই পূর্ববৎ সব অধিকার ভোগ করতে পারবেন যতক্ষণ না বর্তমান আইনের অধীনে সব ব্যবস্থা কাজে লাগিয়েও তারা ভারতীয়ত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হন। এনআরসি-ছুট মানেই ‘দেশহারা’ নয়। তারা ‘বিদেশি’ নন। তারা আগে যেসব অধিকার-সুযোগ পেয়েছিলেন তার কোনও কিছু থেকেই বঞ্চিত হবেন না।’
একদিকে রক্ষাকবচ সিএবি আর রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের চাপ। অন্যদিকে উত্তর-পূর্বের জাতীয়তাবাদী সংগঠন।
মাঝখানে নীরব এনআরসি-ছুট ১৯ লক্ষ মানুষ।।
সৌজন্য :- মহানগর ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.