কমরেড সেলিমকে খোলা চিঠি লিখলেন উত্তর দিনাজপুর থেকে তাপস দাস

Spread the love

কমরেড মহঃ সেলিমকে খোলা চিঠি লিখলেন উত্তর দিনাজপুর থেকে তাপস দাস-

অয়ন বাংলা,ওয়েব ডেস্ক:- একজনের জন্ম আর্জেন্টিনায়। বিপ্লব সমাধা করেছিলেন কিউবায়। আপনার বাড়ি উত্তর কলকাতা থেকে রায়গঞ্জের দূরত্ব খুব বেশি হলে পাঁচশো কিলোমিটার। আজ থেকে আপনার স্থায়ী ঠিকানা বদল হোক। নিবাস হোক রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র, উত্তর দিনাজপুরের যে কোন প্রত্যন্ত গ্রাম। অপরাজেয় এভারেস্ট এখন মানুষ আড্ডাখানা, সেই তুলনায় উত্তর দিনাজপুর খুব ছোটো পরিসর।

এই আগামী সময়ে প্রকৃতির নিয়মে বন্যা, ঝড়, মারি মড়ক আসবে। পাশে থাকতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। সুখে ছিলেন, এখন থেকে অসুখে থাকবেন। সাংসদ হিসেবে একটা কলপর্ব শেষ করলেন। এবার আপনাকে চাই আমাদের জেলার নেতা হিসেবে। প্রয়োজনে বুথ কমিটির জিবি সভা পর্যন্ত। ভাঙনের পরে নির্মাণটাই আসল কথা। এই জেলার উন্নয়ন আন্দোলনে আপনি থাকবেন মিছিলের সামনে।

গত পুজোয় আমাদের আধা শহরে এসেছিলেন। পুজো মণ্ডপে ব্যাখ্যা করেছিলেন বারোয়ারীপুজোর ইতিহাস। মতাদর্শ ভিন্ন হওয়ার জন্য যাঁরা আপনাকে ভোট দেননি তাঁদের অনেকে মণ্ডপে সেদিন আপনার সমাদর করেছিলেন আন্তরিকভাবে। আপনার বিপক্ষে ভোট দিয়ে আপনার পরাজয়ে কেউ উল্লাস করছে না। প্রত্যেকেই ব্যথিত। এখানেই জিতে গেছেন। অনেকে বলেছেন পার্লামেন্টে আপনার বিতর্কের অভাব অনুভব করবেন। কেউ বলেছেন আগামী সাংসদ যেন আপনার মতই এলাকার উন্নয়নে ব্যস্ত থাকেন। বাইপাস, মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণে আপনার অসমাপ্ত কাজ যেন সমাপ্ত করেন। পরাজয়ের পরেও আপনি। এখানেই জিতে গেছেন। উত্তর দিনাজপুরের কেউ বলছে না হেরে গেছেন, বেশ হয়েছে। বরং অবাক হয়ে বলছেন-“সেলিম হেরে গেছেন? এটা মানা যায় না।” এখানেই জিতে গেছেন।

গণনার আগের দিন রাতে আমাদের সাথে ঘন্টাখানেক কাটিয়েছিলেন। আমরা খুব কম নেতা, সাংসদকে আপনার মত পেয়েছি। গল্প শুনিয়েছিলেন কেন আমরা মুষ্টিবদ্ধ হাতে রেড স্যালুট দিই। আপনাকে ঘিরে গল্পের আসর। নেতা নয় বন্ধু, অভিভাবকের সাথে সময় কাটানো। গণনার দিন গণনা কেন্দ্রে ভোট কেন্দ্রে মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখিয়ে এসেছিলেন। অনিবার্য পরাজয় দেখেও শেষ ভোট গণনার আগে আমরা হল ছেড়ে আসিনি।

টুকরো টুকরো কথা উঠে আসছে। আসুক। ব্যক্তি জীবনে আমার এক বন্ধু শেষ এস এম এস করেছিল ফেব্রুয়ারিতে- “ওসব ছাড়ো। সেলিম জিতবে তো? জেতাতেই হবে। প্রচারে মন দাও।” আমরা পারিনি। অশোক ভট্টাচার্য নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরের দিন ক্লাস এইটের এক ছাত্র অশোক ভট্টাচার্যের বাড়িতে বলে এসেছিল- “এটা কী হলো?” আমার ভিতর ঘরে সেই কিশোর সাইকেল ঘণ্টা বাজিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছে- “এটা কী হলো?”

যদি মুখ ফিরিয়ে নেন অভিমানে, তাহলে পরাজয়। ভোট পাখি নয় আগামী দিনে আপনি আমাদের জেলার নেতা। মেরুকরণের বিপক্ষে এক লক্ষ সত্তর হাজার ভোটার আপনার পক্ষে থেকেছেন। আপনার পোলিং এজেন্ট থেকে কাউন্টিং এজেন্ট বেশির ভাগ নাম “হিন্দু”র। আপনাকে থাকতে হবে। ছাড়ছে কে? যাদেরকে জিততে পারলাম না। তাদের জিততে হবে তো? আমার মোবাইলে সেই নাম্বার থেকে এস এম এস আসা চাই আগামী পাঁচবছর পরে। এবং আসবে। আমরা স্বপ্ন সন্ধানী। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। যেমন ছিলেন তেমন থাকবেন। এই জেলায় যে কোন দাঙ্গার বিরুদ্ধে আপনাকে সবার আগে চাই, হ্যাঁ আপনাকে চাই। আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে হেরে যাবো।

“চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না-থাকা জুড়ে।”-

আপনি আমার চোখ দেখতে পারছেন না। অনুরোধ চলে যাবেন না। আপাতত বিশ্রাম নিন। পরিবারকে কিছুটা সময় দিন। তারপরে ঝড়ের পরে পুনরায় নির্মাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.