নিউজ ডেস্ক :- করোনা টেষ্ট নিয়ে চলছে চাপান উতোর .এরই মধ্যে বাজার যাত হতে চলেছে করোনা টেষ্টের কিট। -মুখের ভিতর থেকে বের করা কয়েক ফোঁটা লালারস। অথবা নাসিকানিঃসৃত সর্দি-শ্লেষ্মার সামান্য একটু। ব্যস। বাড়িতে বসে খালি চোখে বোঝা যাবে, মানুষটি নোভেল করোনায় আক্রান্ত, নাকি মামুলি ইনফ্লুয়েঞ্জার শিকার।
কল্পনা নয়। ঠিক এমনই এক টেস্ট কিট আসতে চলেছে রাজ্যের খোলা বাজারে। দেশের শীর্ষ স্বাস্থ্য সংস্থা আইসিএমআরের অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ‘ম্যাজিক কিটের’ পোশাকি নাম ‘কোভিড-১৯ অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট’। যা উৎপাদন ও বিপণনের ছাড়পত্র পেয়েছে অন্তত আটটি দেশীয় সংস্থা। কয়েকটি উৎপাদিত কিটের গুণগত মান যাচাইয়ের পর্ব শুরু হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত গুণমান বজায় রাখলে ওই সংস্থাগুলিকে কিট বিক্রির অনুমতি দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যদিও চাবিকাঠি থাকবে স্বাস্থ্য দপ্তরের হাতে। মূলত উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করতে এই কিট কার্যকর হবে। ২৫ জুন এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, সব শর্ত ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যে এমন অ্যান্টিজেন কিট খোলা বাজারে পা রাখবে। সম্প্রতি এমন দশ হাজার কিট কিনেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। পরীক্ষামূলকভাবে সেগুলো ব্যবহার হবে। নতুন কিটের মান বজায় রাখতে ব্যবহারের আগে গাইডলাইন মেনে অন্তত মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। কোথায় কত অ্যান্টিজেন কিট বিক্রি হবে, আইসিএমারের গাইডলাইন মেনে তারও যাবতীয় তথ্য মজুত থাকবে স্বাস্থ্য দপ্তরে। এর জন্য তৈরি হবে নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ। সেখানেই সব তথ্য জমা হবে। বিক্রি না হওয়া কিটের হিসেব রাখা হবে।
রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা.অজয় চক্রবর্তীর কথায়, “কয়েকটি সংস্থাকে একই সময়ে খোলা বাজারে বিক্রির অনুমতি দিলে প্রতিযোগিতা হবে। দাম কম হবে। গুণগত মানও ঠিক থাকবে।” স্বাস্থ্য দপ্তরের আরেক আধিকারিকের মন্তব্য, “এত সব কিছুর পাশাপাশি স্বাস্থ্য দপ্তরের তীক্ষ্ণ নজরদারিও থাকবে। কিটের মানের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা করা হবে না।”
আরটিপিসিআর পদ্ধতিকে করোনা পরীক্ষার ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ ধরা হলেও তাৎক্ষণিক পরীক্ষার জন্য কয়েকটি রাজ্যে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে ঘরোয়াভাবে করোনা ভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “এখন এক-একটা কিটের দাম গড়ে সাড়ে চারশো টাকা। আশা করা যায়, দাম অনেকটাই কমবে।”
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ওষুধ সংস্থা গুরগাঁওয়ের মানেসরে অ্যান্টিজেন কিট তৈরিতে নেমেছে। আরও কয়েকটি দেশীয় সংস্থা উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেছে। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সও এমন কিট বানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিয়েল টাইম পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত জৈব সুরক্ষার (বায়োসেফটি) কবচ দরকার। দেখতে হবে, কোনওভাবেই সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়। আশার কথা, অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। কারণ, পরীক্ষার জন্য রোগীকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। পরীক্ষার পর বিধি মেনে কিট নষ্ট করাও তুলনায় সহজ।
স্বাস্থ্য দপ্তরের খবর, আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনে শুরুতে সব মেডিক্যাল কলেজ ও সরকারি হাসপাতালে এগুলি পাঠানো হবে। এরপর কনটেনমেন্ট জোন বা করোনা-চিহ্নিত এলাকায় ব্যবহার হবে। বস্তুত তখনই স্পষ্ট হবে, কিটের গুণগত মান বা উপযোগিতা কতটা।
করোনা অ্যান্টিজেন কিট তৈরি করছে, দিল্লির এমন এক সংস্থার তরফে শিবম কৃষণ জানিয়েছেন, আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনে আরটিপিসিআর কিট উৎপাদন করে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিতে সরবরাহ করা হয়। রাজ্য চাইলে এমন চটজলদির কিটও উৎপাদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে দাম কমে আড়াইশো টাকার মধ্যে থাকবে।
সৌজন্য:- সংবাদ প্রতিদিন