সাইফুল্লা লস্কর : কথায় কথায় মোদি সরকারের সমালোচক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে টুকরো টুকরো গ্যাং, দেশদ্রোহী, পাকিস্তানপন্থি, দেশবিরোধী ইত্যাদি তকমা দেওয়া মোদি সরকারের নেতা মন্ত্রীদের একটা সুপরিচিত অভ্যাস। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো আন্দোলনকে দমন করার জন্য এবং তার বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরির জন্য গেরুয়া শিবিরের নেতা মন্ত্রীরা সর্বদা সেই আন্দোলন কে দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে যুক্ত করে দিতে পছন্দ করেন। এবার তাদেরই ওষুধ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করল তাদের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল শিবসেনা। শিবসেনার সুপরিচিত মুখ সঞ্জয় রাউত তাদের মুখপাত্র সামনা তে মন্তব্য করেছেন মোদির কারণে কোনো একদিন রাশিয়ার মত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে ভারত। উল্লেখ্য মোদি সরকারের কার্যকালে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার গুলির মধ্যে যে ধরনের সংঘাত পরিলক্ষিত হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে তা ভারতের ইতিহাসে নজিরবিহীন। প্রতি ক্ষেত্রেই নিজেদের সাংবিধানিক ক্ষমতার রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহার করেছে মোদির সরকার। তার উদাহরণ দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বা খুব সাম্প্রতিক সময়ে আইপিএস অফিসারদের রাজ্যের বাইরে বদলে নিয়ে মমতা সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব।
রাজ্যসভার সাংসদ ও শিবসেনার বর্ষিয়ান নেতা সঞ্জয় রাউত পার্টির মুখপত্র ‘সামনা’ তে একটি বিশেষ কলাম লিখেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্য সরকারগুলিকে অস্থির করে তুলেছে। এই অস্থিরতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য। তিনি আরো দাবি করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে রাশিয়ার মতোই ভেঙে যাবে ভারত। বিজেপি কিছুদিন আগে দাবি করেছিল, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার শহীদ জওয়ানদের অসম্মান করেছে। সঞ্জয় রাউত নিজের লেখা কলামে বিজেপির সেই দাবি নস্যাত্ করেছেন।
সঞ্জয় রাউৎ নিজের কলামে লিখেছেন, ”সরকারের কাছে এমনিতে টাকা নেই। কিন্তু নির্বাচন জেতার জন্য, রাজ্য সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য টাকা আছে। উল্লেখ্য মোদি সরকার আসার পর থেকে বেকারত্বের হার বেড়েছে হু হু করে বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নিয়োগ। বেসরকারিকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গুলির। প্রতিটা ক্ষেত্রেই মোদি সরকারের অজুহাত ছিল রাজকোষে অর্থের যোগান না থাকা। অন্যদিকে মোদি সরকার আসার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মুনাফা। রিজার্ভ ব্যাংকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ চেয়ে না পাওয়ায় সরিয়ে দেয়া হয় তৎকালীন গভর্নর উর্জিত প্যাটেল কে।
আবার মোদির আমলে বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক দলগুলিকে কেন্দ্র বিরোধী এবং কখনও কখনও দেশবিরোধী কথা বলতে শোনা গিয়েছে। এর একমাত্র কারণ মোদি সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর বারবার আঘাত করা। মনিপুর নাগাল্যান্ড মিজোরাম এর মত উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি থেকে শুরু করে জম্মু-কাশ্মীর এবং তামিলনাড়ু থেকেও উঠেছে দেশবিরোধী আওয়াজ। অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলির সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের বাদানুবাদ পরবর্তীতে কাল হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ভারতবর্ষের। এমন চলতে থাকলে সঞ্জয় রাউত এর অনুমান কোনদিন সঠিক প্রমাণিত হবে না কে তা জোর দিয়ে বলতে পারে?