ভুয়ো আইপিএস, ভুয়ো ভ্যাকসিন-কাণ্ডের পরে এ বার ভুয়ো ভিক্ষাজীবী-

Spread the love

ওয়েব ডেস্ক :-  কাঁচা-পাকা চুল। গালের খোঁচা দাড়ি ঢাকা ময়লা মাস্কে। কনুই পর্যন্ত গোটানো কালো চিটে পড়া সাদা শার্ট। ততোধিক ময়লা, হাঁটু পর্যন্ত গোটানো প্যান্ট। সঙ্গে লাঠি আর নাইলনের ব্যাগ। তাতে রাখা এনামেলের বাটি, কিছু ময়লা, ছেঁড়া পোশাক। শুক্রবার গভীর রাতে বাঁকুড়া স্টেশনের টিকিট কাউন্টার চত্বর থেকে বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন বাঁকুড়া পুরসভার ভবঘুরেদের রাত্রি-নিবাস পরিচালনকারী সংস্থার কর্মীরা। সেখানে প্রাথমিক ভাবে ভিক্ষাজীবী হিসেবে নিজের নাম-পরিচয় লেখান প্রৌঢ়। কিন্তু রবিবার সেখান থেকে বেরনোর জন্য জোরাজোরি শুরু করেন তিনি। রাত্রি-নিবাসের কর্মীদের দাবি, তাঁদের কাছে তিনি স্বীকার করেন সরকারি হাসপাতালের কর্মী। তাঁর নাম-পরিচয়ও আলাদা। হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে চেয়ে তিনি আবেদন করায় মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে পুরো ঘটনাটি পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছে ভবঘুরেদের ভবন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা।

বাঁকুড়া পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ আগরওয়াল ও পুরসভার ভবঘুরেদের রাত্রি-নিবাস পরিচালনকারী সংস্থার সম্পাদক অরুণ সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘ভিক্ষাজীবী পরিচয় পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও রবিবার ওই ব্যক্তি ছাড়া পাওয়ার জন্য জেদাজেদি করায় সন্দেহ হয়। উনি সরকারি কর্মী শুনে আমরা তাজ্জব!’’ মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) সুশান্তকুমার ভক্ত বলেন, “শীঘ্রই ওই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলব।”

 

সহকর্মীরা জানান, ছেঁড়া ও নোংরা পোশাক পরলেও হাসপাতালে নিয়মিত যান ওই ব্যক্তি। এক সহকর্মী বলেন, “আমরাও ওঁকে স্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষা করতে দেখেছি বহু দিন। নিষেধ করলে বলেন, ‘চাকরি করলে ভিক্ষা করা যাবে না, এমন নিয়ম আছে না কি’?’’ ওই প্রৌঢ় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। এ দিন বহু চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি তাঁর সঙ্গে। তবে তাঁর স্ত্রীর দাবি, ‘‘বিয়ের পরেই জানতে পারি, টাকা জমানোর নেশাতেই চাকরির বাইরেও ভিক্ষা করেন স্বামী। শুনেছি, দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একটিতে বছর চারেক আগে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ছিল বলে মনে পড়ে। এখন হয়তো কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। তবে উনি আমাকে কানাকড়িও দেন না। বাপের বাড়ির আর্থিক সাহায্যে কোনও মতে একমাত্র মেয়েকে মানুষ করছি।”

ওই প্রৌঢ় যে হাসপাতালের কর্মী তার সুপার সুনীলকুমার সিংহ বলেন, “ওই ব্যক্তির পরিবার নানা অভিযোগ করেছেন। দেখছি, কী করা যায়।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘ভুয়ো আইপিএস, ভুয়ো ভ্যাকসিন-কাণ্ডের পরে এ বার ভুয়ো ভিক্ষাজীবী—ভাবা যাচ্ছেনা!’’

 

সৌজন্য :- আনন্দ বাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.