রমাজানের সিয়ামে দৈহিক ও মানসিক অন্তর্নিহিত বিজ্ঞানঃ—
আল্লাহর প্রশংসা ও নবী মুহম্মদ (সঃ) এর প্রতি সালাত ও সালাম৷ সকল মুসলিম নর নারী ও বন্ধুদের প্রীতি ও ভালবাসা৷
আজকের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল তথ্যসহ পরিবেশিত প্রতিবেদন যার পূঙ্খানুপূঙ্খ বিশ্লেষন ও বিবরণ সংক্ষিপ্তাকারে লিখা সম্ভব নয়; তবুও আন্তরিকভাবে ও সুচারুভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলি লিখছি——
সিয়াম বা রোজা শরীয়তী ও পারিভাষিকভাবে সুবেহ সাদেক বা ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পাণাহার, অন্যায় বা মিথ্যা কথা ও কাজ, এবং বৈধ শারিরীক মিলন বা সহবাস থেকে বিরত থেকে ঈমানের সঙ্গে চলা ও পুণ্যির আশা রেখে আল্লাহর আহকাম বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর থাকার বিধান৷ যে বিধান আমাদের পূর্ব পুরুষদের উপরও ( আহলে কীতাব – নাসারা,ইহুদী) ফরজ বা বাধ্যতামূলক বিধান ছিল ৷ যে বিধানের সংযমতা ও ত্বাকওয়ার( আল্লাহ ভীতি) বিশেষত্বের জন্য আল্লাহ নিজ হাতে অপরিসীম প্রতিদান দিবেন যেটা পরকালে ( মৃত্যু পরবর্তী পুণ:র্জীবনে) ৷
তাহলে কী ইহজীবনে সিয়াম রাখার কোন মূল্য বা প্রতিদান বা উপকার নাই?? হ্যাঁ! ঠিক এই পয়েন্টেই আজকের লেখনি৷
মানুষ হল একটি আত্মা(soul),ইচ্ছাশক্তি বা ঈমান( sprit),
দেহ(physique) —এদের সমন্বয়ে গঠিত জীব বা স্বত্বা৷
তিনটির কোন একটি দূর্বল হলে বা নষ্ট হলে সেই জীবটি পূর্ণতা কখনই পায়না৷ ঈমান বা ইচ্ছাশক্তি বা মানসিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দুই বৃক্কের উপরে যে গ্রন্থি বা গ্লান্ড (suprarenal gland) আছে সেখান থেকে বিভিন্ন ব্লেন্ডের এড্রিনালিন সিক্রেসন হয়; সঙ্গে বিভিন্ন ষ্টেরয়েডও সিক্রেসন হয়৷ এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞান জেনে এসেছে যে, সুপ্রারেনাল গ্লান্ড থেকে তিন ধরণের হরমোন তৈরী হয়—মিনারেলোষ্টেরয়েড, কর্টিকোষ্টেরয়েড, সেক্মষ্টেরয়েড৷ কিন্তূ, সত্যতা হল— এগুলি ছাড়াও, ৫৬ ধরনের বিভিন্ন এড্রিনালিন তৈরী হয় যাদের পারস্পরিক গঠণগত পার্থক্য নির্ণয় করার মত যন্ত্র এখনও আবিস্কারই হয়নি! এই ৫৬ রকম এড্রিনালিন দুই জাতের৷ প্রত্যেক জাতে ২৮ রকম৷ মানুষের মানসিক বা ঈমান বা ইচ্ছাশক্তির তারতম্যে ও পজিটিভ থট/নেগেটিভ থট এর নিরিখে ২৮ রকমের কখনও ক্ষতিকর( নেগেটিভ থট) বা কখনও উপকারী(পজিটিভ থট) এড্রিনালিন হরমোন এই গ্লান্ড থেকে সিক্রেসন হয়৷ এই হরমোনগুলি Fright &Flight mode এ কাজ করে এবং তৎপরবর্তীতে প্রস্বাব বা পিত্ত দিয়ে ব্লাড থেকে বের হয়ে যায়৷ তবুও, কিছুটা অংশ লিভারে সন্চিত থাকে ও ব্লাডে চলাফেরা করে৷ বিভিন্ন সেল, অর্গানে ঐ হরমোনগুলি প্রবাহিত হলে, এসিডের মত ঐ সকল কোষ বা অর্গানগুলিকে নষ্ট করতে থাকে৷ যদি, নেগেটিভ থট রেসপন্সড এড্রিনালিন হয় তবে এটার এসিডিটি অতিরিক্ত হওয়ার জন্য বেশী ক্ষতি করে৷ পজিটিভ থট রেসপন্সড এড্রিনালিন এসিডিটির মাত্রা নগন্য হওয়ার জন্য বা ক্ষারীয়তার জন্য সেল বা কোষগুলি অধিক সক্রিয় হয়! বিভিন্ন নেগেটিভ থট যেমন—হিংসা,অহঙ্কার,লোভ, প্রতারনা, অবিশ্বাস, পরনিন্দা, মিথ্যা, ভয়, দুঃখ, রাগ, হতাশা,স্ট্রেস, অতিরিক্ত শ্রম, কুচক্রান্ত, ঝামেলা, খুন, অন্যায় প্রভৃতি ভিতর থেকে দেহের প্রত্যেক কোষ বা অর্গানকে দূর্বল করে দেয় বিশেষকরে লিভার, প্যাংক্রিয়াস, কিডনি, হার্ট, ইন্টেষ্টিন প্রভৃতি৷ এই বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষিতেই ইসলামে উপরের প্রত্যেকটি নিষিদ্ধ!!
বিপরীতদিকে, সমস্ত ভাল বা ন্যায় কাজের ইচ্ছাশক্তি বা ঈমানের প্রেক্ষিতে (পজিটিভ থট) ক্ষারীয় বা উপকারী রকমের এড্রিনালিন সিক্রেসন হয় ৷ ফলে, প্রত্যেকটা কোষ বা অর্গান তথা পুর্ণাঙ্গ দেহটাই এক অনাবিল শান্তি বা সুখ অনুভব করে৷ এটাও পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক৷ তাই , দৈহিক ও মানসিক, আত্মিক প্রশান্তি কখনই অন্যায় পথে বা কাজে নেই; বরং ন্যায় ও সৎ পথে ও কাজে সর্বদা প্রশান্তি আসে৷
সিয়াম অবস্থায় ঈমান বা ইচ্ছাশক্তি ও উত্তম প্রতিদানের প্রত্যাশা আমাদের ব্লাডে , কোষে, অর্গানে উপকারী এড্রিনালিন পর্যাপ্ত ও পরিমিত পরিমাণে নিয়ে আসে, ফলে পুরো দেহটাই নতুন জাগরণী শক্তিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠে৷ অপরপক্ষে, পাণাহার বিরত থাকার জন্যেও প্রত্যেকটা কোষের অটোফেজি বা নিজ নিজ কোষে সন্চিত লাইসোজোমাল ডেব্রিসগুলিকে ভক্ষন করত: পুরোনো কোষের মৃত্যু ও ঐ স্থলে নতুন উজ্জিবিত কোষের উৎপত্তি — পূর্ণাঙ্গ দেহের রিনিওয়াল করে দেয়৷ বলা বাহুল্য, এই অটোফেজি নিয়ে নবেলজয়ী হয়েছেন এক বিজ্ঞানী !
পাণাহার বিরতির জন্য দেহের লিভার, স্টোমাক বিশ্রাম এ থাকে ,ফলে এদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়৷ লিভারে গ্লুকোনিওজেনেসিস বৃদ্ধি পায় বলে লিভারের স্টোর কম্পার্টমেন্টের গ্লাইকোজেন বা গ্লুকোজ কমতে থাকে৷ এই সুযোগে পেরিফেরাল ডিপোজিটেড ফ্যাটগুলি লিভারে ট্রন্সফার হতে থাকে৷ এগুলি পুণঃরায় নিওগ্লুকোজেনেসিসে ব্যবহৃত হতে থাকে৷ এই প্রক্রিয়া টানা একমাস নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট ক্লকে চলতে থাকে৷ ফলে মেদ বা ওজন কমে৷
সিয়াম অবস্থায় যৌন উত্তেজনা হলে, ব্লাডে সেক্মষ্টেরয়েড ও এড্রিনালিন দুটোই বাড়বে৷ এক্ষেত্রে, সেক্মষ্টেয়েড ও উত্তেজনা- এড্রিনালিন এসিডিক৷ ফলে, সিয়াম সাধনায় অন্তর্নিহিত কোষীয় উপকার এমন ক্ষতিতে পর্যবসিত হয় যে, তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব না৷ কোষীয় আয়ু বা শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়৷ সেইজন্যই, সিয়াম অবস্থায় সহবাস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও কাফফারাও চরম পর্যায়ের৷
সবমিলিয়ে, সিয়াম সাধনাতে ইলৌকিক কল্যাণ অপরিসীম ! পরকাল তো আছেই!
সকলকে সঠিকভাবে সিয়াম সাধনার বুঝ ও তৌফিক দান কর হে রব! আমীন!