গ্রহের সব থেকে বড় প্রাণীর সিডনির সমুদ্রে দেখা মিলল ১০০ বছরে তৃতীয় বার,

Spread the love

নিউজ ডেস্ক :-  বিশ্বের সব থেকে বড় প্রাণী নীল তিমি, সচরাচর যাদের দেখা মেলে না। সেই নীল তিমির দেখা মিলল অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি উপকূলে। এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় এই বিরল দৃশ্য ধরা পড়ে। তিনি সেই ছবি, ভিডিয়ো তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে আপলোড করেন। আর যথারীতি এমন ছবি ভাইরাল হতে সময় নেয়নি।

নীল তিমির এমন বিরল দৃশ্য ধরা পড়ে সিন নামে এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায়। তিনি ছবিগুলির পোস্টে লিখেছেন, “নীল তিমি প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আর এদের জিভের ওজন একটা হাতির ওজনের সমান পর্যন্ত হয়। আর এত বড় প্রাণীর হৃদযন্ত্রের ওজন একটা গাড়ির সমান হতে পারে। সর্বাধিক ১০০ টন পর্যন্ত হতে পারে এদের মোট ওজন।” এমন এক দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার পর, কী ভাবে তিনি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবেন বুঝতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন সিয়ান।

অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সংবাদপত্র সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ১০০ বছরে এই নিয়ে তৃতীয় বার সিডনির উপকূলে নীল তিমির দেখা মিলল।

 

…….

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণী কি? প্রশ্নটি বাচ্ছাদের করা হলে নিশ্চই উত্তরে বলবে, হাতি কিংবা জিরাপ। বলার কারণও আছে, কারণ তারা চোখের সামনে হাতি কিংবা জিরাপ ছাড়া তার থেকে বড় কিছু দেখেনি। আসলে সবচেয়ে বড় প্রাণী হচ্ছে নীল তিমি। নীল তিমির ইংরেজি নাম- ব্লু হোয়েল (Blue Whale). নীল তিমির আরো একটি নাম আছে। আরেকটা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক নাম। নীল তিমির বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে- Balaenoptera Musculus. এই তিমি লম্বায় সর্বোচ্ছ ১১০ ফুট হয়। আর ওজন ১ লাখ ৭৬ হাজার কেজিও হয়। সাকিব, তুমি বলেছ হাতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী। অথচ চিন্তা করে দেখ, নীল তিমি ২৫টা হাতির সমান ওজন। শুধু মাত্র নীল তিমির জিবের ওজন একটা হাতির সমান। একটা হাতি সাধারণত ৩ থেকে ৪ হাজার কেজি হয়। নীল তিমির ওজন ১ লাখ ৭৬ হাজার কেজি। আর জিভের ওজনই ৩ থেকে ৪ হাজার কেজি। তবে পৃথিবীতে ছোট জাতের তিমিও আছে। ছোট জাতের তিমির দৈর্ঘ্য মাত্র ১০-১১ ফুট হয় সর্বোচ্ছ। এগুলোর ওজন ৩০০-৪০০ কেজি। নীল তিমির বিশাল দেহ গঠন কিন্তু বিশেষ বৈশিষ্টপূর্ণ। তিমির সামনের বাহু বর্ধিত ও পরিবর্তিত হয়ে পাখনা বা ফিনে পরিণত হয়েছে। এদের পেছনে পা নেই। তাই দ্রুত চলাচল করতে পারে। এদের লেজ সমান্তরাল ভাবে প্রসারিত। মাছের মতো খাড়া নয়। এদের দেহ মসৃণ, আর মাছের মতো আঁশ নেই। দেহত্বক প্রায় ১০ ইঞ্চি পুরো (মোটা) চর্বিযুক্ত। তাই এরা সাগরের গভীর জলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা সইতে পারে। এদের নাসারন্ধ্র মাথার ওপরে। নাসারন্ধ্র দিয়ে মুখে টেনে নেওয়া পানি ওপরের দিকে ছুড়ে মারে। তিমির কোন কান নেই। চোখ মাথার উপরের দুই পাশে। শিশুকিশোররা ছাড়াও অনেকে তিমিকে মাছ মনে করে। সত্যিকতার অর্থে তিমি মাছ নয়।
সাধারণত, তিমিকে আমরা অনেকে মাছ বলেই জানি। কিন্তু তিমি মাছ নয়। যদিও তিমিকে মাছ বলার পেছনে অনেক কারণও আছে। একসময় অনেক বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরাও তিমিকে মাছ মনে করতো। তিমি গভীর জলে বাস করে ও লেজ আছে। তখন বিজ্ঞান বর্তমানের মতো এত আধুনিক ছিলোনা। খৃষ্টপূর্বে প্রথম বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টেটোল তিমিকে স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে ধারণা দিয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা ও সার্বিক বিবেচনা করে একমত হয় যে তিমি মাছ নয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী।
তিমির অনেক জাত আছে। তাই প্রজাতিভেদে তিমিদের খাদ্যাভাস (খাবার খাওয়ার ধরণ) দুই ধরনের। একজাতের তিমি দাঁতের সাহায্যে শিকার ধরে খায়। এরা হচ্ছে ছোট জাতের তিমি। তাদের খাদ্য হচ্ছে- মাছ, সুইডস ও অন্যান্য ছোট সামুদ্রিক প্রাণী। আরেক জাতের তিমি মুখ খুলে পানি টানে। এরা হচ্ছে নীল তিমি। তখন আশে পাশে যত ছোট প্রাণী বা মাছ থাকে সব তিমির মুখে ঢুকে যায়। তখন পানি বাইরে চলে গেলেও খাবার হিসেবে ছোট প্রাণীগুলো ভেতরে আটকে যায়। তিমি ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার সময় প্রচুর বাতাসের সাথে অক্সিজেন টেনে নিতে পারে বলে টানা দুই ঘন্টা গভীর জলে থাকতে পারে। নীল তিমি কতদিন বেঁচে থাকে তা নির্দিষ্ট সময় এখনও জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পারে, নীল তিমি ১০০ থেকে ১৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
নীল তিমির আরো অনেক বৈশিষ্ট আছে। নীল তিমিরা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ, সামাজিক। তাদেরও বুদ্ধি আছে। তারা একসাথে অনেক তিমি মিলে ঘুরে বেড়ায়, খেলা করে, সাঁতার কাটে। একে অপরের ডাকে সাড়া দেয়। তিমিদের কোনো কান নেই। তারপরও তারা শুনতে পায়। এই তিমিরা একে ওপরের সাথে যোগাযোগ করতে এক ধরণের বিশেষ শব্দ করে। কোন বন্ধুর যদি বিপদ হয় তাহলে একসাথে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। এছাড়া কোন বন্ধু তিমি যদি মারাও যায়, তাহলে তারা খুব দুঃখ প্রকাশ করে। তিমি মাছ না হলেও পৃথিবীর অনেক দেশে তিমির মাংস, চর্বি ও খাদ্য হিসেবে মানুষ খায়। আমাদের খাদ্য তালিকায় না থাকার পেছনে আরও একটি কারণ হচ্ছে, বর্তমানে তিমিরা আমাদের বঙ্গপসাগরে দেখা যায় না। একসময় মানুষ তিমিদের অনেক শিকার করতো। কারণ, বিশ্বব্যাপী তিমিরা বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল। যার ফলে এই তিমির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। একারণে ১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের হোয়েলিং কমিশন তিমি শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.