স্বাস্থ্য পরিষেবার নামে একশ্রেণীর বেসরকারি সংস্থার জালিয়াতি, জনগণের চাপে অফিস ফেলে চম্পট
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : কিছু কিছু ক্ষেত্রে নামী সংস্থার নাম ব্যবহার করে অথবা স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার নামে একশ্রেণীর এনজিও-র মালিকেরা জালিয়াতির রমরমা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে বলে কয়েকদিন ধরেই খবরটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় মাটিয়া এলাকায় এই ধরনের একটি প্রতারক সংস্থার হদিস মিলল বুধবার সকালে। ঝকঝকে তকতকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বছর দুই আগে থেকেই চলছিল জালিয়াতির কর্মকাণ্ড। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে অফিসের ঝাঁপ গুটিয়ে এখন তারা চম্পট দিয়েছে বলেই খবর।
অভিযোগে প্রকাশ, উত্তর ২৪ পরগনায় মাটিয়া বাজার এলাকায় একটি গলির মধ্যে ছিল “সুস্বাস্থ্য ওয়েলফেয়ার সোসাইটি” নামের একটি অফিস। বিগত প্রায় ২ বছর ধরে চলছিল স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার নামে জালিয়াতির কান্ড কারখানা। জানা গিয়েছে, ৫০০ টাকা দিয়ে তাদের সংস্থার একটি কার্ড কিনলে তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা এক বছর সময় সীমার মধ্যে যখনই প্রয়োজন হবে বিনা খরচে “হেল্থ চেক আপ”এর সুযোগ সুবিধা দেবেন। ওষুধ-পত্রও দেওয়া হবে বিনামূল্যে। রাত-বেরাতে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য সমস্ত সহযোগিতাও তারা করবেন, এমন আশ্বাস দিয়েও কিছুই করেননি তারা এমনই অভিযোগ। এমনকি হসপিটালে ভর্তি কিংবা অপারেশনের প্রয়োজন হলে ৫০ শতাংশ ছাড় পাবেন ওই কার্ডধারী ব্যাক্তিরা…. এমনই সব নানা ধরনের লোভনীয় টোপ থাকলেও সবই নাকি ভুয়া বলে জানান বাসিন্দার।
শুধু তাই নয়, “স্বাস্থ্যসাথী কার্ড”এ কোনও বেসরকারি হাসপাতাল ভর্তি না নিলে, তারা নাকি তাদের ভর্তির সমস্ত ব্যবস্থাও করিয়ে দেবে…..এমনই সব ভাওতা প্রচার করে ৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে বহু লোককে মেম্বার করিয়েছে তারা। গত ২২ জুন ওই সংস্থার কার্ডধারী শেখ হাফিজুল নামে এক ব্যক্তি তার গলব্লাডার অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে ওই সংস্থার দ্বারস্থ হন। তিনি থাকেন স্বরূপ নগরে। এমনকি তার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে, সেটাও ওই সংস্থার কর্ণধার সুরেশ মান্নাকে জানান। অভিযোগ, দিনের পর দিন তাকে ভর্তির নিশ্চিত আশ্বাসও দেন সংস্থার কর্ণধার। এইভাবে মাস খানেক ঘোরার পর তার পেটের ব্যাথা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। তখন বাধ্য হয়েই হাফিজুল সাহেব তার জমি বন্ধক রেখে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি হন এবং নিজের উদ্যোগেই অপারেশন করান।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই বহু কার্ডধারী ব্যাক্তিরা ওই সংস্থার অফিসে গিয়ে খোঁজ খবর করতে থাকেন। জানা গিয়েছে, সম্পূর্ণ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ওই সংস্থা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিয়ে জালিয়াতি করত বলেই অভিযোগ। কারণ “হেল্থ চেক আপ”এর নামে ৬ মাস কিংবা ১ বছর অন্তর একটি শিবির করতো। তাতে অতি সাধারণ মানের চিকিৎসকরাই রোগী দেখতেন। আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি পুরোপুরি ভাওতা বলেই অভিযোগ। এরপরই দলবদ্ধ ভাবে কিছু লোক ওই অফিসে গিয়ে তাদের টাকা ফেরৎ চান। চাপে পড়ে সুস্বাস্থ্য ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ১ সেপ্টেম্বর টাকা ফেরৎ দেবে বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু তার আগেই ৫ আগস্ট দুপুরেই অফিসে তালা ঝুলিয়ে বেপাত্তা হয়ে যান তারা। ওইদিন থেকেই অফিস বন্ধ, এমনটাই খবর।
তবে ইতিমধ্যেই পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।