দেশের মাটি :- আশিস সরকার (কলকাতা)
********
স্মৃতি কথা :- ব্যাঙ্কে কাজ করি।নানা জায়গায় ঘুরতে হয়।এবার বদলি হলাম বাংলাদেশ বর্ডারের কাছে একটি ব্যাংকে। গঞ্জ শহর। ব্লক হেডকোয়ার্টার। খুব ঘিঞ্জি বাজার। অজস্র মুদি/ষ্টেশনারী দোকান।কয়েকটা মোটর সাইকেল এর দোকান।
কারন জানলাম ব্যবসা রাতের ইধার কা মাল উধার।আর উধার কি মাল ইধার।সারা রাত ধরে মাল পারাপার হয়। ওপার থেকেও অনেক জিনিস আসে। ব্যাংকে কাজের খুব চাপ। কিছু করার নেই। ছুটির দিনেও কাজ করি। মাঝে মাঝে বাড়ি যাই।
কোন কোন দিন কাজের ফাঁকে এদিক ওদিক প্রধানত বর্ডারে যাই। (বর্ডারে তখনও তাঁরকাটার বেড়া হয় নি।) তবে সবে বর্ডার রোডের রাস্তা হয়েছে। মোটর সাইকেল অথবা রিকশা ভ্যানে চলে যাই রাস্তা ধরে অনেকদূর। চমৎকার গ্রাম্য পরিবেশ। দূপারে লোকদের সঙ্গে কথা বলি। ওপার দেখি। বাড়ি ঘর নদী নালা ক্ষেত সব একই প্রকার। লোকজনও একই রকম দেখতে। তাহলে আলাদা দেশ কেন তাই ভাবি।ওপারের লোকদের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করি। কেন জানিনা বেশি কথা বলে না।
মার্চ মাসের শেষে এক্সটারনাল অডিট হয়। অডিটার সাধারনত বাইরে থেকে আসে। সেবার অডিটার আমারই বয়সি একজন আসে। তাড়াতাড়ি অডিট শেষ করে। নির্দিষ্ট দিনের আগেই কাজ শেষ হয়ে যায়। শেষ দিন অডিটার ঘুরতে চায়। কোথায় ঘোরাব!বর্ডারে নিয়ে যাই। যে জায়গাটায় যাই সেই জায়গাটা একটু টিলা মতন। মাঝখান দিয়ে নালার মত একটা নদী বয়ে চলছে। জল প্রায় নাই। নদীটার ওপার বাংলাদেশ এপার ভারত। এপারে ছনের একটা কাঁচা ঘর । তার নিচে একজন বি এস এফ এর সৈন্য দাড়িয়ে আছে। তারপর ছোট নদীর ওপার থেকে একটা টিলা উঠে গেছে অনেকটা ওপারে বিডিআর এর ক্যাম্প। নিচ থেকে ঠিক দেখা যায় না। নদীর ঠিক ওপারে একটা পাকা সেডের নিচে একজন বিডি আর এর সৈন্য দাড়িয়ে আছে।
বি এস এফের জওয়ান আমাকে দেখে সেলাম করে বলল হাম আপকো ব্যাঙ্ক মে যাতা হু। আমাদের ডেকে একদম নদীর কাছে নিয়ে যায়। নদী না বলে নালা বলাই ভালো।একদম জল নেই। ওপারে বাংলাদেশের জওয়ান দাড়িয়ে আমাদের দেখছে। হঠাৎ অডিটর সাহেব একলাফে নদী টপকে ওপারে গিয়ে নিচু হয়ে মাটি মাথায় লাগিয়ে প্রনাম করতে লাগল। আমি জওয়ান ভাই আর বাংলাদেশের সৈন্যভাই অবাক হয়ে যাই। জওয়ান ভাই জিজ্ঞেস করল ক্যা করতা হ্যায়। উনি উঠে একমাথা মাটি লাগা অবস্থায় বললেন ভাই আপ সমঝ না পায়েগা। এ হামারা জন্মভৃমি কি মাটি হ্যায়। হামারা জনম ঢাকা মে হুয়া থা। কভি নেহি গিয়া। বাংলাদেশের সৈন্য অভিভূত হয়ে নেমে আসে। বলল স্যার আমাদের ক্যাম্পে আসেন। ওখানে ডি এস পি সাহেব আছে খুশি হবেন। ওনার দেশ ছিল ইন্ডিয়াতে। আমি যেতে চাইছিলাম না কিন্তু অডিটার সাহেবের উৎসাহে ওপারে যাই। বি এস এফ এর জওয়ান ও বলল যাইয়ে না। কোই অসুবিধা নেহি হোগা। আফলোক আনা তক হাম ইধারই রহেগা।
আমরা সিড়ি দিয়ে উঠে ঊচুতে উঠে দেখি বিশাল বাংলাদেশের ক্যাম্প। সৈন্যটা আমাদের একটা রুমে বসাল। ডি এস পি সাহেবকে ডেকে আনল। অল্পবয়সি হাসিখুশি ছেলে। হাত মিলিয়ে বসতে বলল অনেক গল্প হল। চা স্ন্যাক্স এল।।তারপর দেশের কথা উঠল। অডিটার সাহেব বললেন তার বাড়ি ঢাকাতে। ডি এস পি সাহেব আমাকে জিজ্ঞাস করলেন আপনার? আমি বললাম জলপাই গুড়িতে। ডিএস পি চমকে বললেন বলেন কি আমার বাড়িও তো জলপাইগুড়িতে ছিল। জিজ্ঞাস করলাম কোথায়? বলল বেগুনটারী। আমি বললাম আমারও তো বেগুনটারী তেই বাড়ি। আমাকে চমকে দিয়ে বলল জগা উকিল আপনার কি হয়। বললাম দাদু। ঊঠে আমাকে বুকে জড়িয়ে বলল আমি আবদূর ডাক্তারের নাতি।আপনার পাশের বাড়ি।
আসবার সময় ভ্যানে অডিটার সাহেব গান ধরলেন ও আমার দেশের মাটি*****।
আশিস সরকার, কলকাতা, https://www.facebook.com/ashissarkar203