হিজামা নিয়ে কিছু জরুরী কথা:— ডাক্তার ইয়ার আলী

Spread the love

হিজামা নিয়ে কিছু জরুরী কথা:—

অয়ম বাংলা,ডাক্তার ইয়ার আলী:-
আমি ডাঃ ইয়ার আলী , হিজামা নিয়ে প্রথম যখন জানতে পারি তখন আমি MBBS পাশ করে সবে ১ বছর হল প্রাইভেট প্রাকটিস করছি৷ আল্লাহ নির্ধারিত ভাগ্যের ফয়সলায় ( পারিবারিক ও অর্থনৈতিক) নিজেকে MBBS পাশ করেই বসে রাখতে পারিনি৷ প্রাইভেট প্রাকটিস ও ধর্মীয় ( ইসলাম) চিকিৎসা বা প্রফেটিক মেডিসিন নিয়ে অধ্যয়ণ করতে থাকি৷ বিভিন্ন রোগ ব্যাধি ও বিপদ থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক দৈনন্দিন জীবণের কিছু কিছু অবহেলিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ শরীয়তি নিয়ম কানুন আছে৷ চিকিৎসা সম্পর্কীয় বিভিন্ন হাদিসগুলির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও অধ্যায়ণে মননিবেশ করি৷ তখনই, হিজামা শব্দটার সাথে প্রথম পরিচয়৷ সহিহ বুখারীর হাদিস— “সর্বোত্তম চিকিৎসা হিজামা ”

আমি অবাক হয়ে যায়!!! সর্বোত্তম চিকিৎসা?? তাও আবার আধুনিক মডার্ণ চিকিৎসা কে ছাপিয়ে???

ইসলাম জীবনের সকল সমস্যার সমাধান; স্বাস্থ্য সমস্যার জন্যও ??

বহু কৌতূহলী জিজ্ঞাসা নিয়ে হিজামা নিয়ে নাড়াচড়া শুরু করলাম ৷ তখন ২০১৩ সাল এর শেষের দিকে, ২০১৪ সালের প্রথম দিকে৷

সেই সময়, পশ্চিমবঙ্গে হিজামা নিয়ে কেউই জানতনা বা বুঝতনা৷ গুগলে ও বিভিন্ন পাঠ্যবই সংগ্রহ করে, তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা শুরু করি৷ চেম্বারে বিভিন্ন জটিল ও ব্যাথার রোগে হিজামাকে প্রয়োগ করতে শুরু করি৷ এন্টিসেপটিক প্রেকশন ও ফিজিওলোজিক্যাল, এনাটমিক্যাল নলেজ থাকাতে আমি সহজেই হিজামাকে বাস্তবিক প্রয়োগ করতে সমর্থ হই৷ অনেক রোগী একবার হিজামাতে সেরে উঠেন৷ আবার কিছু রোগীকে ২-৩ বারও করতে হয়৷ কিছু কিছু রোগী পুণঃরায় ব্যাথার রোগে আক্রান্ত হন৷ এইভাবে, নানারকম অভিজ্ঞতা আর প্রয়োগ হতে থাকে৷

হিজামা বিষয়ক বিভিন্ন বই এ একুপাংচার ও মেরিডিয়ান সিষ্টেমকে মেনে হিজামা পয়েন্ট ঠিক করার জন্য নির্দেশ দেয়৷ কিন্তূ, বাস্তবে সেই পয়েন্টভিত্তিতে হিজামা খুব ফলপ্রসূ হয় না৷ হিজামা কে চাইনিজ ট্রাডিশনাল মেডিসিন এর দর্শনের সাথে মিলাতে গিয়ে আমি পর্যুদস্ত হয়ে যায়৷ বাস্তবিকই, হিজামা এর কাজ করার পদ্ধতি ভিন্ন৷

নতুনভাবে, বিভিন্ন রোগ বিশেষকরে ক্রনিক ও জটিল রোগগুলি কেন ও কীভাবে এত বিস্তৃত হচ্ছে? সেটা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অটোইমিউনিটি ও জেনেটিক থিওরিকে ভ্রান্ত মনে হল!! শুরু হল— আরও গভীর ও গভীর গবেষণা৷

কুরআনের বিভিন্ন আয়াত (মানব সৃষ্টি সম্পর্কীয়) এর ভাষ্য ও বুঝ, অটোইমিউনিটি ও জেনেটিক তত্বের বুঝ পরস্পর সাংঘর্ষিক !! বিধায়, বর্তমানের অসংখ্য রোগ যেগুলি হওয়ার জন্য অটোইমিউনিটি ও জেনেটিক কারণকে দর্শানো হত— সেগুলির প্রকৃত কারণ উদ্ভাবনে শুরু হল আরও গবেষণা৷

আলহামদুলিল্লাহ!! ২০১৮ সালের দিকে সেই সন্ধান পেলাম — নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বেষ্ট সেলিং বুক মেডিক্যাল সিরিজ এ৷

বিভিন্ন বাত ব্যাথা, দূরারোগ্য ব্যাধি কীভাবে ও কেন হচ্ছে—তার অভূতপূর্ব উপস্থাপনা ও বাস্তবিকতা আমার হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়৷

সেই প্রকৃত কারণ এক বা একাধিক জীবাণু (EBV) এবং এই ভাইরাসটি কোন কোন স্টেজে , কোন কোন ট্রিগার ফ্যাক্টরে বৃদ্ধি পেয়ে কী কী শারীরিক সমস্যা তৈরী করছে—তার পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা পেয়ে গেলাম৷ যেটা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র ও ডাক্তার হয়ে এতদিন শুন্যতা অনূভব করতাম৷ এই শূন্যতা এখনও ৯৯% ডাক্তারদের মধ্যে বিরাজ করছে!!

আপনার ডিমেনসিয়া, এলজিমারস ডিজিজ, পারকিনসন্স ডিজিজ, অটিজম, ইনসমনিয়া, ডিপ্রেসন, পিটিএসডি, এন্জাইটি, সাইনুসাইটিস, মাইগ্রেন, ক্রনিক টনসিলাইটিস, এজমা, ব্রঙ্কাইটিস, এলার্জি, কোল্ড, রাইনোরিয়া, ডিসপেপসিয়া, লিভার ডিজিজ, বিভিন্ন বাত, যন্ত্রনা প্রভৃতি সকল জটিল ও ক্রনিক অসুখগুলি কীভাবে ও কেন ডেভেলপ করছে— তা আধুনিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারেনি৷ সমস্ত সিম্পটমসের সঠিক ব্যাখ্যা ও উত্তর দিতে পারেনি৷ কিন্তূ, ম্যানেজমেন্টটা কিছুটা করে রোগীকে কিছুটা সুস্থতা ও শান্তি দিতে পারলেও, রোগ থেকে রোগীকে মুক্ত করতে পারেনি৷ ফলে, সময়ের বিবর্তন ও চক্রে রোগ ও রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে— অথচ আমরা সবাই অবাক!!!

আমাদের বর্তমান জীবন ব্যবস্থার উন্নতিতে আমূল পরিবর্তনকারী সবুজ বিপ্লবের অতিরিক্ত DDT, Pesticides, Fungicides, Chemical Fertilisers এর ব্যবহার, GMO এর ব্যবহার এবং শিল্প বিপ্লবের বায়ু, জল ও মাটি দূষণে( waste materials, CO,CO2, NO, SO2 প্রভৃতি) — সর্বোপরি ব্যাপক রেডিয়েশনের ব্যবহার ও প্রচলন বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে জীবাণুটিকে শক্তিশালী ও প্রলিফারেশনে সহায়তা করে৷ জীবাণুটিকে এক একটি ধাপ অতিক্রম করে একটি একটি সমস্যা বা সিম্পটমস তৈরী করতে সাহায্য করে৷

উপরন্তূ, মানব জীবনের কিছু বদ অভ্যাস ( রাত জাগা, ফলাহারে অনীহা ও ভীতি, ডিহাইড্রেশন, স্ট্রেস, অতিরিক্ত কর্ম ব্যস্ততা প্রভৃতি) ঔ জীবাণুকে আরও শক্তিশালী করে তুলে, দূর্বল ইমিউনিটির বিরুদ্ধে৷

ফলে, বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে রোগীর রোগ একটার পর একটা বাড়তে থাকে৷ জীবনের ৫০-৬০ বছর বয়সে বা তার আগেই, একই রোগীর শ্বাসকষ্ট, গ্যাস ও কষ্ঠৌকাঠিন্যতা, থাইরয়েড, সুগার, প্রেসার, জয়েন্টে বা হাঁটু ব্যাথা, ঘূমের সমস্যা প্রভৃতি একসঙ্গে পরিলক্ষিত হচ্ছে৷

সবুজ বিপ্লবের ফলে Mercury,Copper, Arsenic,Aluminium,Nickel প্রভৃতি হেভি মেটাল গুলি খাদ্যের মধ্য দিয়ে মানব দেহে ঢুকছে— লিভারে জমছে— EBV এর ফুয়েল বা খাদ্য হিসাবে কাজ করে EBV কে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করছে৷ EBV এর বাই প্রোডাক্ট, ডেড ভাইরাস, নিউরো বা ডার্মাটোটক্সিন লিম্ফাটিক ও রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শরীরের নানা জায়গায় নানা সমস্যা তৈরী করছে৷

শিল্প বিপ্লবের ও রেডিয়শনের প্রভাবে টক্সিসিটি বৃদ্ধি ও ইমিউনিটি ভঙ্গূর হয়ে যাওয়া — প্রভৃতি কারণে বিভিন্ন ক্রনিক রোগের বৃদ্ধি৷

(*** সংক্ষিপ্তাকারে ধারণা দেওয়া হল৷ প্রকৃত কারণ ও কীভাবে অসুখ হচ্ছে—এর বৃহৎ ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখানে লিখা সম্ভব নয়)

হিজামা এর মূল কাজ হল— নেগেটিভ প্রেসার ক্রিয়েট করে ব্যাথার জায়গা থেকে ডেড,লিভ ভাইরাস, ভাইরাস বাই প্রোডাক্ট, নিউরো বা ডার্মাটোটক্সিন বা ক্যামিক্যাল মেডিয়েটর নিষ্কাষিত করা৷ কো ল্যাটারাল ব্লাড ভেসেল ও লিম্ফাটিক চ্যানেল অপেন করা৷ ক্লগড্ ভেসেল বা লিম্ফাটিক অপেন আপ করে সচল করা৷
ফলে, ঐ অন্চলের বা স্পটের ব্যাথা সৃষ্টিকারী সকল কারণ রিমূভ করা৷ একুপাংচার বা মেরিডিয়ান পদ্ধতিতে Qi খুলার পদ্ধতি স্পষ্ট নয়৷

এই ভাবেই সকল জয়েন্টের বা মাংসপেশীর ব্যাথা কমে হিজামাতে৷ রোগীর রোগটা কোন স্টেজে আছে—তার উপর ডিপেন্ড করছে হিজামা একবার করতে হবে ,না আরও করতে হবে?
সিষ্টেমএ ঔ জীবানু ও বিষগুলির মাত্রা ও শক্তি অনুযায়ী হিজামার কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হবে৷ যার যত কম মাত্রা ও শক্তি হবে, তার তত সময় কম লাগবে৷

আজ, হিজামার চূড়ান্ত কার্যকারিতা ও ফলাফল পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ হাদিসের সত্য কথা সত্যায়িত হচ্ছে৷ আলহামদুলিল্লাহ৷

হিজামার প্রচার ও প্রসার হয়েছে, অনেক ব্যক্তি হিজামা করছে৷ অনেকেই জেনেছে, বুঝেছে৷ আলহামদুলিল্লাহ৷ ( আমি এটাই আল্লাহর কাছে— ২০১৪ সালের দিকে ,হিজামার প্রথম পদক্ষেপে, চেয়েছিলাম)

তবে, হিজামার প্রকৃত বিজ্ঞান ও দক্ষতা যে ব্যাক্তির নাই, তাকে অনুরোধ করব— হিজামাটাকে বৈজ্ঞানিকভাবে জানতে, বুঝতে ও সঠিক পন্থায় প্রয়োগ করতে৷

Hijama or RWCT

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.