মানবসেবার ইতিহাসে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর অবদান

Spread the love

মানবসেবার ইতিহাসে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর অবদান।
আনসারুল ইসলাম।

প্রতিবেদন,অয়ন বাংলা:- মানব সেবার ইতিহাসে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল যে অবদান রেখে গেছেন তা অবিস্বরণীয়। নার্সিং কে তিনি শুধু একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিতই করেননি, রেখে গেছেন সেবার মানোন্নয়নের জন্য পর্যবেক্ষন ও অভিজ্ঞতালব্ধ নির্দেশনাসমূহ। যা মানব সেবার দিক ঘুরিয়ে দিয়েছিলো আধুনিকতার দিকে। একটি সময় ছিলো যখন ইউরোপে নাসিং পেশাকে একটি নিচু পেশা হিসাবে মনে করা হতো। পরবর্তীতে এই পেশাটি হয়ে ওঠে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশার মধ্যে অন্যতম একটি পেশা। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর অবদান। তার জন্মদিন টিই পালিত হয় ইন্টার ন্যাশনাল নার্সেস ডে হিসাবে। আজকের আলোচনা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর জীবন ও কর্মকান্ড নিয়ে। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ১২ ই মে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পরিবার ১৮২১ সালে ইংল্যান্ডে চলে আসে। পিতা উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিংগেল মাতা ফ্রান্সিস নাইটিংগেল। ফ্লোরেন্স শহরের নাম অনুসারে তার নাম রেখেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল।

তিনি শুধু অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন না, তিনি ছিলেন দয়ালু, উদার ও স্নেহময়ী মনের অধিকারী। নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন থাকতেন। সমাজের কোন প্রতিবন্ধকতা, পরিবারের অনিচ্ছা, এমনকি নিজের ব্যক্তিগত জীবনকেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তার অভীষ্ট লক্ষ্যের পথে। তাঁর সমসাময়িক সমাজে নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক কোনো অধিকার ছিল না। নারীদের সম্মান নির্ধারিত হতো স্বামী মানদন্ডে। ফ্লোরেন্স উপেক্ষা করেছিলেন সেই বাধাকেও। ফ্লোরেন্সের অসাধারণ রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ বারবার আবেদন করেছেন , কিন্তু তাঁর কাছে মানবসেবার ডাকই বড় বলে মনে হয়েছে হৃদয়ের ডাক ছিল তুচ্ছ কেবল বাতুলতামাত্র।

নাইটিংগেলের বাবা ছিলেন এক ধনী ভূস্বামী। শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন খুবই সচেতন ও উদারমনস্ক। শৈশবেই নাইটিংগেল গণিত, সংগীত, জার্মান, ফারসি, ইটালিয়ান ভাষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিত্তিমূলক উপর্যুক্ত শিক্ষা অর্জন করেন। কোন এক সময় ফ্লোরেন্স ও তাঁর পুরো পরিবারকে নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণে বের হন তার বাবা। ভ্রমণের সময় ফ্লোরেন্সের সঙ্গে ম্যারি ক্লার্ক নামের একজন ইংরেজ বংশোদ্ভূত ফারসী মধ্যবয়স্কার সাথে পরিচয় হয় তখন ফ্লোরেন্সের বয়স ছিল মাত্র সতেরো। গড়ে উঠে তার সাথে সখ্যতা। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন ফ্লোরেন্স। এই সময় নাইটিংগেলের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে। দুজনের বয়সের ব্যবধান ছিল ২৭ বছরের, কিন্তু বন্ধুত্ব ছিল সারাজীবন।

ফ্লোরেন্স মানবসেবার প্রতি প্রথম টান অনুভব করেন সতেরো বছর বয়সে লন্ডনে থাকা অবস্থায়। এই টানকে তিনি ‘ঈশ্বরের ডাক’ বলে মনে করেছিলেন। সেবাকে তার জীবনের ব্রত হিসাবে নেওয়ায় প্রবল আপত্তি ছিল তাঁর পরিবারের লোকজনের। সে সময় নার্সিং ছিল নিম্নবিত্ত, অসহায়, বিধবা মহিলাদের পেশা। তার মা ও বোনের তীব্র রাগ আর বাঁধাকে মাড়িয়ে তিনি সেবাকেই ব্রত হিসাবে নিলেন ছুটে গেলেন ঈশ্বরের টানে মমূর্ষ দের পাশে। সমস্ত লোভনীয় হাতছানি উপেক্ষা করে ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি নিজেকে নার্সিংয়ের কৌশল ও জ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে শুরু করেন।

১৮৫৩-১৮৫৪ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আঠারো হাজার সৈন্য হাসপাতালে হলেও ৪২ % সৈন্য ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। তার অবিস্বরণীয় অবদানে সেই মৃত্যুর হার কমিয়ে ২ % এ নিয়ে আসতে পেরে ছিলেন। অন্যান্য ডাক্তার-নার্সরা যখন ঘুমিয়ে পড়তো, তিনি একাই লন্ঠন হাতে রোগীর কাছে গিয়ে দেখতেন যেন মহামারীর সময়টাতে কেউ নিজের রোগযন্ত্রণায় অসহায় হয়ে না পড়েন। ইউরোপের অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হয়ে যে মানুষটি এসেছিলেন ক্রিমিয়ার যুদ্ধের বিপর্যস্ত সৈন্যরা তাঁকে ‘ক্রিমিয়ার ফেরেশতা’ নামে ডাকত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.